মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
সোর্স সায়মন হত্যাকান্ড

‘গ্লাস কোম্পানি’র সদস্যদের মাদকসহ ধরিয়ে দেওয়াই ছিল অপরাধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘গ্লাস কোম্পানি’র সদস্যদের মাদকসহ ধরিয়ে দেওয়াই ছিল পুলিশের সোর্স নুরে আলম সায়মনের অপরাধ। তখন থেকেই তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার টার্গেট করে কোম্পানির সদস্যরা। অবশেষে ১৫ জানুয়ারি নুরে আলম সায়মনকে কেরানীগঞ্জের মুক্তিরবাগ এলাকায় ডেকে নিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। নৃশংস এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল সকালে পাঁচজনকে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা এমনই তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গ্রেফতাররা হলো, সুমন ওরফে গ্লাস সুমন, তার সহযোগী সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ, শরীফ ওরফে গরীব শরীফ, জনি ওরফে হর্স পাওয়ার জনি ও হারুন।

গতকাল বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে খন্দকার আল মঈন বলেন, কিছু দিন আগে সায়মনের তথ্যে কয়েকজন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কারবারিরা কেরানীগঞ্জের মাদক সিন্ডিকেট ‘গ্লাস কোম্পানি’ নামে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। এই গ্রুপের প্রধান সুমন ওরফে গ্লাস সুমন। তার দলের লোকজন গ্রেফতার হওয়ায় সায়মনের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন সুমন। ১৫ জানুয়ারি সায়মনকে শিক্ষা দিতে পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সায়মনকে মোবাইল ফোনে কেরানীগঞ্জের মুক্তিরবাগ এলাকায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যায় সরাসরি গ্লাস সুমন ছাড়াও গ্রেফতার বাকি সদস্যরা অংশ নেন। এ সময় হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিহত সায়মনের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে। এ ঘটনায় তার ভাই আরস আলম কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব-১০।

যেভাবে হত্যা : পরিকল্পনা অনুযায়ী তথ্য দেওয়ার কথা বলে ফোন করে সায়মনকে বালুর মাঠের দিকে ডেকে নেয় দুর্বৃত্তরা। বাড়ি থেকে ডেকে এনেই অতর্কিতভাবে সায়মনের হাত-পায়ের রগ কাটাসহ তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করে। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে সুমনের নেতৃত্বে চলে এই নারকীয় হত্যাকান্ড। সুমন নিজেই ভিকটিমের রগ কাটেন। এ ছাড়া লম্বু সোহাগ ও শরীফ রগ কাটায় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় জনি ও গ্লাস সুমন ধরে রাখেন। মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয়রা সায়মনকে বালুর মাঠে পড়ে থাকতে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এর আগেই সায়মন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

যেভাবেগ্লাস সুমন : মোহাম্মদ সুমন ওরফে গ্লাস সুমন একসময় কেরানীগঞ্জে গ্লাসের দোকানে কাজ করতেন। কারও সঙ্গে বনিবনা না হলেই গ্লাসের টুকরো বা ভাঙা অংশ দিয়ে যাকে তাকে আক্রমণ করতেন। এই থেকে এলাকায় তার নাম হয়ে যায় ‘গ্লাস সুমন’। পরে কেরানীগঞ্জে গড়ে তোলেন মাদক ও সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট। নাম দেওয়া হয় ‘গ্লাস কোম্পানি’।

সুমন হত্যাকান্ডে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে হত্যায় মোহাম্মদ সুমন ওরফে গ্লাস সুমন নিজে অংশ নেন।

সুমনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে পাঁচটি মামলা রয়েছে। লম্বু সোহাগ, হর্স পাওয়ার জনি এবং হারুনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর