বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

মাইলেজ দাবিতে আন্দোলনে রেলের রানিং স্টাফরা

ক্রু সংকটে ১৮ ট্রেনের যাত্রা বাতিল

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

রেলের মাইলেজ জটিলতার সুরাহা হয়নি। রেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক-সাক্ষাৎ করেও মেলেনি শতাধিক বছর ধরে চলে আসা রানিং স্টাফদের শ্রমের মজুরি। এ দাবিতে এবার সহস্রাধিক রানিং স্টাফ একাট্টা হয়েছেন। রানিং স্টাফরা কাজে যোগ না দেওয়ায় পূর্বাঞ্চলের ঢাকা-চট্টগ্রামের লোকাল ট্রেনগুলোর মধ্যে প্রায় ১৮ যাত্রীবাহী মেইল, কমিউটার লোকাল ট্রেন, তেলবাহী, কন্টেইনারবাহী ও গুডস ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের ‘যৌক্তিক’ আন্দোলন দ্রুত মেনে নেওয়া না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলকারীরা। এ দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকালও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে রানিং স্টাফরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। 

জানতে চাইলে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সরওয়ার বলেন, নারায়ণগঞ্জে আসা-যাওয়ার ২০টি ট্রেন ও ছয়টি  লোকাল ট্রেনের (৩ জোড়া) চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার রতন কুমার দে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেনগুলো স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করছে। শুধু ক্রু বা লোকো মাস্টার সংকটে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জোড়া ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি তেলবাহী ও গুডস ট্রেন বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে যাত্রীদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

রেলওয়ে ও আন্দোলনকারীদের সূত্রে জানা গেছে, ক্রু (লোকোমাস্টার ও গার্ড) সংকটের কারণে পূর্বাঞ্চলের আন্তনগর ট্রেনের বা ঢাকা-চট্টগ্রামের যাত্রীবাহীসহ ১৮টি ট্রেনের চলাচল বন্ধ রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর আগে মঙ্গলবার থেকে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ। মঙ্গলবার রাতেই নির্দিষ্ট এসব ট্রেনের যাত্রা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলের মাইলেজ আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিনের দাবি আদায়ে আমরা মাঠে আছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলকারীরা মাঠ ছাড়বেন না। আজও চট্টগ্রামে মিছিল-সমাবেশ করেছি। দিনের পর দিন শ্রম, মেধা এবং সততার সঙ্গে কাজ করে আসছি। কিন্তু আমাদের ন্যায্য দাবিটা দিচ্ছেন না। প্রায় ১৬০ বছর আগের রীতিটা এখন ভিন্নভাবে নেওয়া হচ্ছে। তবে আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে অধিকার ফিরিয়ে না দিলে ৩১ জানুয়ারি থেকে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন বলে জানান তিনি।

আরও জানা গেছে, আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বাতিল না করলে এবং শত বছর আগের রীতি বা ১৬০ বছর ধরে চলমান মাইলেজ সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রজ্ঞাপন জারি না করলে ৩১ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। রেলের রানিং স্টাফদের মধ্যে রয়েছেন ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), গার্ড ও টিকিট টেকার (টিটি), গার্ড (ট্রেন পরিচালক) ও টিটিই (ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনার)।

উল্লেখ্য, গত ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শামীম বানু শান্তি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চলন্ত ট্রেনে দৈনিক ১০০ কিলোমিটার কিংবা তার চেয়েও বেশি দায়িত্ব পালন করলেও ওই দিনের বেতনের ৭৫ শতাংশের বেশি মাইলেজ ভাতা পাবেন না সংশ্লিষ্ট রানিং স্টাফ। আর মাস শেষে এ মাইলেজ মূল বেতনের বেশি হবে না। এ প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর থেকেই সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন রেলের রানিং স্টাফরা।

সর্বশেষ খবর