মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

রামসিদ্ধি যেন পাখির রাজ্য

সাজ্জাদ হোসেন, নড়াইল

রামসিদ্ধি যেন পাখির রাজ্য

পাখির গ্রাম রামসিদ্ধি। এই গ্রামে ভোর হয় পাখির কিচিরমিচির শব্দে। প্রতিটি সন্ধ্যা নামে পাখির কলতানে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, গ্রামের গাছে গাছে যেন থোকায় থোকায় পাখিফুল ফুটে আছে। চারদিকে নানা ধরনের পাখির সমাহারে ‘পাখি গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে নড়াইল জেলার সদর উপজেলার রামসিদ্ধি গ্রাম। পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে এ গ্রামের মানুষের। জেলা সদর থেকে পূর্ব দিকে এ গ্রামটির দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। জানা গেছে, সবুজে সুন্দর ও ছায়া সুনিবিড় গ্রাম রামসিদ্ধি। প্রায় ৩০ বছর আগে হঠাৎ করেই এই গ্রামের ‘কানাপুকুর’ নামক প্রাচীন এক জলাশয়ের পাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় গাছে আসতে শুরু করে নানা প্রজাতির পাখি। পরবর্তী সময়ে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া কানাপুকুরটির এ প্রজন্মের মালিক খোকন মোল্যা ও পরাগ শিকদার মৎস্য চাষের জন্য ৬ একর জায়গাজুড়ে খনন করেন। এ ছাড়া গ্রামের কোলঘেঁষা কাড়ার বিলকে কেন্দ্র করে প্রায় ২০ একর আয়তনের বেশ কয়েকটি মাছের ঘেরের পাড়ে বেড়ে ওঠা হাজার হাজার গাছে বিকাল থেকে ভোর পর্যন্ত শুরু হয় অগণিত পাখিদের আনাগোনা। মাছের এই বিস্তীর্ণ ঘেরগুলোজুড়েই গড়ে উঠেছে পাখির নিরাপদ অভয়াশ্রম। বিকাল ৪টা থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এসে জলাশয়গুলোর চারপাশে মেহগনি, আকাশমণি, রেইন ট্রি, নারিকেল ও নানা প্রজাতির গাছে গাছে বসতে থাকে সাদা বক, পানকৌড়ি, শামুকখোল আর হাঁসজাতীয় নানা জাতের পাখি। তবে সাদা বক ও শামুকখোল পাখির সংখ্যাই বেশি।

ভোরে উড়ে গিয়ে সারা দিন খাবারের জন্য বিচরণ করে সন্ধ্যার আগে নিরাপদ ঠিকানায় ফিরে আসে পাখিরা। মূলত শীতের মৌসুমে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে এই জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করে। প্রতি বছর অক্টোবর থেকে পরের বছরের মার্চ পর্যন্ত ছয় মাস অতিথি পাখি থাকে। কয়েক বছর ধরে এই স্থানকে নিরাপদ আস্তানা হিসেবে বেছে নিয়েছে পরিযায়ীরা। শীতের শুরুতেই ওরা এসেছে। ওরা গোটা গ্রামের অতিথি। তাই যত্ন-আত্তিতে কসুর নেই। উত্তুরে হাওয়ার সঙ্গে ওরা আসতেই মনে খুশির দোলা লাগে গ্রামবাসীর। দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে আসেন অতিথিদের দেখতে। আর একেই প্রাপ্তি হিসেবে দেখছেন রামসিদ্ধি গ্রামের বাসিন্দারা। অতিথিদের চোখে চোখে রাখতে, চোরা-শিকারিদের হাত থেকে বাঁচাতে একাট্টা গ্রামের ছেলে থেকে বুড়ো সব শ্রেণির মানুষ। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে পাখির কলকাকলিতে। নির্বিঘ্নে রাত কাটিয়ে ভোর হলেই উড়ে যায় তারা। দিনশেষে আবারও তারা নীড়ে ফিরে আসে। আর এটি যেন বিনোদনের খোরাক হয়ে পড়েছে বিনোদনপিপাসু মানুষের। গ্রামবাসীও গভীর যত্ন ও পরম মমতায় আগলে রেখেছেন পাখিগুলোকে। এসব পাখি দেখতে আসা মানুষরা যেমন খুশি, এর চেয়ে বেশি খুশি গ্রামবাসী। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই গ্রামটি গুরুত্বপূর্ণ পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিণত হবে বলে জানান এ গ্রামের বাসিন্দারা।

চোখের সামনে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে দেশি-বিদেশি পাখি। পাখির কিচিরমিচির ডাকে চারদিক মুখর। পাখির এই কলতান দেখতে দর্শনার্থীরা প্রায়ই আসেন রামসিদ্ধি গ্রামে। সব মিলিয়ে এটি যেন এক পাখির রাজ্য।

নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পাখিগুলোকে যাতে কেউ না শিকার করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে আমরা এরই মধ্যে এলাকার সচেতন মহলকে অনুরোধ করেছি। এগুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এগুলো সংরক্ষণ করতে আমি শিগগিরই পাখির ওই গ্রামটি পরিদর্শনে যাব।’

সর্বশেষ খবর