শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ফেসবুক লাইভে এসে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টা

অভিযুক্ত শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। গতকাল বিকাল ৪টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে ঘুমের ওষুধ খেয়ে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। ওই শিক্ষার্থীর নাম শামীম সিদ্দিকী। তিনি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। জানা যায়, ফেসবুক লাইভে এসে একই বিভাগের শিক্ষক ড. শেখ মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলেন ওই শিক্ষার্থী। পরে এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে সন্ধ্যায় আন্দোলনে নামেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রাতে ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যা থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. শেখ মেহেদী হাসানের পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়বাংলা মোড় চত্বর ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অভিযুক্ত শিক্ষকের পদত্যাগ ও শাস্তির দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। রাত ৮টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করতে থাকেন। এ ব্যাপারে ড. শেখ মেহেদী হাসান বলেন, ‘শামীমকে যা কিছু বলেছি সব কিছু  ছিল মোটিভেশনাল। আসলে জন্মের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। প্রাসঙ্গিক অনেক কথাই হয়েছে। তাকে হেয় করার মতো কোনো কথা আমি বলিনি। বরং আমি পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ব্যাপারে তাকে তাগিদ দিচ্ছিলাম। এটা আমার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র হতে পারে।’

 

ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ইমদাদুল হুদা বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে গিয়েছি। ওই শিক্ষার্থীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আগে সে সুস্থ হয়ে উঠুক, তারপর আলোচনা ও তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। আমরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করছি। ওই শিক্ষার্থী সুস্থ হলে এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ফেসবুক লাইভে এসে শামীম সিদ্দিকীর বলা কিছু চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো, ‘তোমার বাবা কী করেন। আমি বললাম, শিক্ষকতা করেন কলেজে। জানতে চাইলেন, পদবি কী। আমি সেটা না বলতে পারায় তিনি বললেন, তুমি তোমার বাবার কেমন ছেলে! জিজ্ঞেস করলেন তোমার বাবার বয়স কত? বললাম ৪৫ হবে। তোমার বয়স কত? বললাম ২২। এরপর তিনি এ নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু করলেন। তিনি বললেন, চাকরি নেওয়ার পর উনি বিয়ে করলে, হিসাব তো মেলে না। তাহলে তুমি কবে হইছ?’

এমন প্রশ্ন মেনে না নিতে পেরে কষ্টের কথাগুলো সবাইকে জানাতে ফেসবুক লাইভে এসে ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই শিক্ষার্থী। লাইভ দেখে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান ছাত্রবিষয়ক পরামর্শক ড. তপন কুমার সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকরা।

সর্বশেষ খবর