মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
চালু হলো ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন

ভরা মৌসুমে রাজশাহীর আমের বাজার চড়া

খুশি বাগান মালিক ও পাইকাররা

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

আমের ভরা মৌসুম এখন। ফলে ক্রেতা বিক্রেতার সমাগমে জমে উঠেছে রাজশাহীর বৃহত্তম আমের হাট বানেশ্বর। গত দুই বছরের তুলনায় এবার আমের দাম ভালো পাওয়ায় খুশি বাগান মালিক ও আড়তদাররা। গত বছরের তুলনায় এবার মণপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইকাররা বলছেন, হাটে দাম চড়া হওয়ায় তারা লাভের দেখা পাচ্ছেন না। রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার বাগান থেকে আম নামানোর পর বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয় বানেশ্বর কলেজ মাঠে। করোনা আর রমজানের কারণে গত দুই বছর আমের দাম ভালো ছিল না। এবার ভালো দাম পাওয়ায় খুশি বাগানিরা। শলুয়ার আমবাগানি রহিদুল ইসলাম জানান, এবার সব জাতের আমের বাজার চড়া। গত বছরের তুলনায় তারা ভালো দাম পাচ্ছেন। বানেশ্বরের রাজীব উদ্দিন জানান, এবার আমগাছে মুকুল এসেছে কম। এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় কম। উৎপাদন কমের কারণে মৌসুমের শুরু থেকেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আম। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গতকাল রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে প্রতি মণ গোপালভোগ ৩৩০০-৩৭০০, হিমসাগর বা ক্ষিরসাপাত ৩০০০-৩৫০০, লক্ষণভোগ বা লক্ষণা ১০০-১৩০০, ল্যাংড়া ২৫০০-৩০০০, ফজলি ১১০০-১৩০০, আম্রপালি ২২০০-২৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

গত বছর এ সময় গোপালভোগ বিক্রি হয়েছে ২৪০০ থেকে ২৭০০ টাকায়। এবার সেই দর ঠেকেছে ৩ হাজারের বেশিতে। ক্ষিরসাপাত, ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। ফজলি ও আম্রপালি হাটে আসলেও শুরুতেই দরে গ্রীষ্মের তাপ।

পাইকাররা বলছেন, হাটে দাম চড়া হওয়ায় অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করে তারা কাক্সিক্ষত লাভ পাচ্ছেন না। চাঁদপুর থেকে আসা রেজাউল করিম জানান, এখানে ৩০ টাকা কেজি দরে আম কিনে চাঁদপুরে ২৮ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। পথের খরচ বাড়তি লোকসান। এবার লাভ করা যাচ্ছে না।  

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, গত দুই মৌসুমে রমজান ও করোনার কারণে আমের চাহিদা কম ছিল। এবার চাহিদা বেশি থাকায় আমের দাম অনেকটা বেশি। প্রচণ্ড গরমে দ্রুত আম পেকে যাওয়ায় মৌসুম দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেকে পছন্দের আম এখনই বেশি বেশি কিনছেন। এ কারণেও দাম অনেকটা বেশি। তবে চাষিরা ভালো দাম পাওয়ায় খুশি।

ঝামেলামুক্তভাবে ব্যবসা করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। প্রতিদিন এখানে কোটি টাকার আম কেনাবেচা হয় বলে জানালেন ইজারাদার। হাটের ইজারাদার সেলিম মণ্ডল জানান, প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকার আম কেনাবেচা হয়। তবে মৌসুমের শুরু থেকেই বাজার দর চড়া। আম উৎপাদন কম হওয়া দাম বেশি বলে জানান তিনি।

রাজশাহীতে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন।

চালু হলো ম্যাংগো ট্রেন : আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের আমের বাজারজাতকরণে সুবিধা দিতেই চালু করা হয়েছে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহীর আম চাষিরা যাতে খুব সহজেই ও কম খরচে রাজধানী ঢাকায় আম পরিবহন করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই ট্রেনটি চালু হয়েছে। গতকাল বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলস্টেশন থেকে প্রথম দিন ১২০ ক্যারেট বা ৩০০০ কেজি আম নিয়ে ট্রেনটি রহনপুর রেলস্টেশন থেকে রাজশাহী স্টেশনে পৌঁছায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজশাহী স্টেশনে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, রহনপুর থেকে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি ছেড়ে পথে আমনুরা জংশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন, কাঁকনহাট, রাজশাহী, সরদহ রোড, আড়ানী, আবদুলপুর, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম, জয়দেবপুর ও ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে থামবে। আমের মৌসুমে সপ্তাহের সাত দিনই চলাচল করবে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। রহনপুর রেলস্টেশন থেকে বিকাল ৪টায় ছেড়ে রাত পৌনে ২টায় ঢাকার তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছাবে। পণ্য লোড-আনলোড করতে পথে ১১টি স্টেশনে যাত্রা বিরতি নেবে এই ট্রেন। এ পরিবহনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আম নিতে খরচ পড়বে কেজিতে ১ টাকা ৩১ পয়সা এবং রাজশাহী থেকে ১ টাকা ১৭ পয়সা।

সর্বশেষ খবর