বুধবার, ২২ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

বোয়ালমারীর ইউএনওর আচরণ সভ্য রাষ্ট্রের জন্য কলঙ্ক : হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

আদালতের নোটিস জারিকারকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ইউএনও মো. রেজাউল করিমের আচরণ সভ্য রাষ্ট্রের জন্য কলঙ্ক বলে মন্তব্য করেছেন হাই কোর্ট। ওই ইউএনওর উদ্দেশে আদালত বলেছেন, ‘আপনি যে আচরণ করেছেন এতে মানুষ ভাবছে বিচার বিভাগ আর নির্বাহী বিভাগের মধ্যে মারামারি লেগে গেছে। এটা শোভনীয় নয়। বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকতে হবে।’

গতকাল ইউএনও মো. রেজাউল করিমের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী রবিবার দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আদালতে ইউএনওর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। শুনানির শুরুতে আদালতের নোটিস জারিকারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও উপজেলা প্রশাসনের অফিস সহকারী উকিল হোসেন নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

এ সময় আদালত বলেন, ‘আদালতের আদেশ সবার মানতে হয়। আপনি আদালতের আদেশ মানেননি। আদালতের সমন নিয়ে নোটিস জারিকারকরা আপনাদের কাছে গিয়েছিল। আপনার উচিত ছিল তাকে ধন্যবাদ দেওয়া। অথচ কী দুর্ব্যবহার না করলেন! কত অজুহাত দেখালেন! আপনি যে আচরণ করলেন তা সভ্য রাষ্ট্রের জন্য কলঙ্ক। আপনি একটা ছোট বিষয় হ্যান্ডেল করতে পারেন না। কীভাবে জনসেবা করবেন? একটি কথা মনে রাখবেন, আইন-আদালত আছে বলেই আপনি সম্মান পান।

আপনি যদি আইন না মানেন আপনাকে কেউ মানবে না।’

আদালত অফিস সহকারী উকিল হোসেনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি মূল অপরাধী। আপনি সিন ক্রিয়েট করেছেন। খুব খারাপভাবে মিসগাইড করেছেন।’ পরে আদালত ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও অফিস সহকারী উকিল হোসেনকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে জারি করা আদালত অবমাননার রুলের আদেশের জন্য আগামী ২৬ জুন দিন ধার্য করেন।

এর আগে ৭ জুন আদালতের নোটিস জারিকারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও অফিস সহকারী উকিল হোসেনকে তলব করেন হাই কোর্ট। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেন আদালত।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ‘ছরোয়ার শেখ বনাম নির্বাহী প্রকৌশলী, সওজ’ মামলাটি ফরিদপুরের বোয়ালমারী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বিচারাধীন। এ মামলার নোটিস জারির জন্য ফরিদপুর জেলা জজ আদালতের নেজারত শাখার জারিকারক কামাল হোসেন ও মেহেদী হাসান গত ২৭ এপ্রিল দুপুর আড়াইটার দিকে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যান। ওই সময় নোটিস গ্রহণ না করে জারিকারকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন উপজেলা প্রশাসনের অফিস সহায়ক উকিল হোসেন। অনেক সময়ক্ষেপণ করে নোটিস গ্রহণ করার পর ইউএনও রেজাউল করিম আদালতের জারিকারকদের নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে দরজা আটকে জেরা করেন। একই সঙ্গে অফিসের স্টাফদের সঙ্গে বাজে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাদের সাজা প্রদানের হুমকি দেন ইউএনও। ইউএনও এ সময় তাদের উভয়ের মোবাইল ফোন জোরপূর্বক কেড়ে নেন এবং মুচলেকা দিয়ে চলে যেতে বলেন। পরে তারা রোজা রেখেছেন জানালে, তাদের পা ধরে মাপ চাইতে বাধ্য করেন এবং জোরপূর্বক তার নির্দেশনা মতে মুচলেখা লিখে ছেড়ে দেন ইউএনও। পরে সংশ্লিষ্ট জেলার বিচার প্রশাসনকে লিখিতভাবে এ বিষয়ে জানান জারিকারকরা। এ অভিযোগের অনুলিপি আইন ও বিচার বিভাগের সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল বরাবর পাঠান ফরিদপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আকবর আলী শেখ। এরপর বিষয়টি হাই কোর্টের নজরে এলে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ইউএনও ও অফিস সহকারীকে তলব করে রুল জারি করেন।

সর্বশেষ খবর