শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে মোগল স্থাপত্যের স্মারক ‘বাগ-ই-শাহ্’

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

সারি সারি কবর। একটির পর একটি। প্রতিটি কবরের অভিন্ন নকশা। আকারও একই। দুটি সারি। কবরের স্থাপত্যে আছে শৈল্পিক ছোঁয়া। আছে নান্দনিক-দৃষ্টিনন্দন আদল। দুটি সারিতেই আছে একসঙ্গে ২২টি কবর। স্থানীয়ভাবে এটি ‘বাগ-ই-শাহ্’ হিসেবে সমধিক পরিচিত। মুসলিম ঐতিহ্য ও মোগল স্থাপত্য রীতিতে তৈরি এ কবরগুলো। কবরগুলোর পরতে পরতে দেওয়া হয়েছে দিল্লির রাজকীয় আদল। নির্মাণশৈলীও অভিন্ন। কবরগুলোর কারণে কালের বিবর্তনে স্থানটির নামই হয়ে গেল ‘বাগিচা হাট’। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের বাগিচা হাট সংলগ্ন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের অনতিদূরে কবরস্থানটির অবস্থান। আহলে সুন্নাত আনজুমান নামের সংগঠনটি কবরস্থান পরিচালনা করে। এখানেই আছে, মোগল স্থাপত্যের অনন্য প্রতীক ৩৫৬ বছরের প্রাচীন খান জামে মসজিদ। এ মসজিদের উত্তর পাশে একটি কক্ষে সংরক্ষিত আছে মহানবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তাফা (সা.) এবং বড়পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর পবিত্র পায়ের চিহ্ন। আহলে সুন্নাত আনজুমানের পরিচালক হোসাইন মোহাম্মদ মহিউদ্দিন হিরু বলেন, একসঙ্গে ২২টি কবর থাকার বিষয়টি ইতিহাসে বিরল। তাও অভিন্ন নকশা এবং নান্দনিক মোগল স্থাপত্যে। সরকার চাইলে বিরল এই স্থাপনাটি একটি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন এলাকায় রূপান্তর করতে পারত। কিন্তু এটিকে তেমন একটি স্থাপনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। কবরগুলো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশেই। সড়কটি সম্প্রসারণ হলে কবরগুলো ঘেঁষেই যাবে। তাই আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই, মোগল ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে এটি সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা নিয়ে সড়ক সম্প্রসারণ করতে। তাছাড়া বিকল্প উপায়েও সড়ক সম্প্রসারণের সুযোগ আছে। জানা যায়, ১৬৬৬ সালে মোগল আমলে চট্টগ্রামের দোহাজারীর সাঙ্গু নদীর তীর পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণে অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে নিহত হয়েছিলেন উচ্চপদস্থ মোগল ২২ সেনা কর্মকর্তা। পরে তাদের খান মসজিদের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

সেই সময় ওই কবরস্থানের নাম রাখা হয় বাগ-ই-শাহ্ বা বাদশাহদের বাগান। সেই থেকে স্থানটির নাম বাগিচা হাট নামে পরিচিতি লাভ করে। অর্থাৎ শাহদের বাগান। এখানে বাগান বলতে শাহী কবরস্থান বোঝানো হয়েছে। তবে ২২টি কবরের মধ্যে ছয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তখন থেকেই সম্মান দেওয়া হচ্ছে। সময়ের পরিক্রমায় মানুষের মুখে মুখে এ স্থানটির নাম বাগিচা হাট হয়ে যায়। কবরগুলোর চারদিকে আছে সীমানা প্রাচীর। মসজিদের দক্ষিণ পাশের কবরগুলোর বয়স প্রায় ৩৫৬ বছর।

চট্টল বিশারদ পন্ডিত মরহুম আবদুল হক চৌধুরীর পুত্র আহমেদ আমিন চৌধুরী ‘বাগিচারহাট বিকৃত নামের বিস্তৃত একটি মোগল জনপদ’ প্রবন্ধে লিখেছেন, শঙ্খ নদীর পাড় পর্যন্ত মোগল সীমানা নির্ধারণের জন্য ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম মোগল অভিযান, দ্বিতীয়বার লোহাগাড়া অভিযান, তৃতীয়বার আলী কদম অভিযান ও চতুর্থবার লামা অভিযানে মোগল পক্ষের নিহত ঊর্ধ্বতন সেনা অফিসারদের বাগিচা হাটের রাজকীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। ঊর্ধ্বতন মোগল সৈনিকদের কবরস্থানের মর্যাদা রক্ষার্থে ২২টি কবরকে একইভাবে একই উপাদানে একই স্থানে মোগল স্থাপত্য রীতিতে ও শিল্প সুষমায় সজ্জিত করে তৈরি করা হয়েছিল ‘বাগ-ই-শাহ্’।

সর্বশেষ খবর