মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ জন্য উৎপাদন খরচ কমানো এবং বিপণন ও সরবরাহ চেইনে নজরদারি বাড়ানো হবে। এতে পণ্যের দামও কমে আসবে। তবে এটা রাতারাতি সম্ভব নয়। একেবারে যুগ যুগ সময়ও লাগবে না। আমরা যুক্তিসংগত সময়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনব। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে ‘মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনার’ লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, এনবিআর চেয়ারম্যান, অর্থবিভাগের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে দুটি বিষয় আছে খাদ্য উৎপাদন এবং সরবরাহ। খাদ্য উৎপাদনে কতগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। খাদ্য বলতে আমি মৎস্য, পশুপালন সবগুলো দেখছি। আর সঙ্গে সরবরাহ ব্যবস্থাতেও নজর দেওয়া হচ্ছে। উৎপাদন করলেই তো চলবে না। উৎপাদনের পর গুদামে থেকে যায়। আমরা কতগুলো জিনিস নিয়ে আলাপ করেছি এবং আমরা অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেব। মূল্যস্ফীতি জিনিসটা কতগুলো কারণে বেশি হয়েছে। চট করে এটা কালকে নেমে যাবে, এটা ঘোড়ার মতো না। ঘোড়ার মাথায় নিচের দড়ি ধরে টান দিলাম আর থেমে গেল। এটা ডিফিকাল্ট, এটা প্রসেস আছে।
তবে একেবারে যুগ যুগ লাগবে না, আমরা যুক্তিসংগত সময়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনব।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা কিছুটা দেখতে পারছেন জিনিসপত্রের দাম কমতে শুরু করেছে। আমি শুনেছি সবজির দাম কমে আসছে, যে কারণেই হোক। অতএব আমরা আশা করি আমরা যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছি, সংশ্লিষ্ট যারা আছেন অতি দ্রুত পদক্ষেপগুলো নেবেন। সেগুলোর একটা ভালো ফলাফল আমরা দেখতে পাব। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি শুধু জীবন-জীবিকা না, এটা বিনিয়োগ একটা ব্যাপার আছে। বিদেশ থেকে কেউ বিনিয়োগ করতে এলে তারা মূল্যস্ফীতির রেটটা দেখে। প্রজেক্ট করে তারা কী করবে, তাদের নেট রিটার্ন কেমন হবে। অতএব এগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপার। এ জন্য আমরা জরুরি পদক্ষেপই নিচ্ছি। সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ে অতীতে এমন দেখা গেছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, এটি নজরে আনা হয়েছে, কথা হয়েছে। আমাদের নজরে কোনো কিছু এড়ায়নি।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি আপনারা (সচিব) ফ্রিলি আমাদের বলবেন। আগের মতো ভয় করে, একেবারে প্রথমে এসে তোয়াজ করবেন, স্যার ভালো মানুষ এগুলো কিছু বলবেন না। আমাদের ভুল হলে বলবেন, আপনার কাছে তথ্য থাকলে ফ্র্যাংকলি (পরিষ্কার) বলবেন। অতএব আগের মতো গোপন-টোপন কিছু থাকবে না। আবার সবকিছু স্বার্থের জন্য ওপেনও করা যাবে না।
মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রানীতি- এ দুটি বিষয় সমন্বয় করে কাজ করবেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, সমন্বয়হীনতার জন্য অর্থের অপচয় হয়। অর্থের অপচয় রোধ এবং সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সেটা দেশি সম্পদ হোক বা বিদেশ থেকে ধার করা হোক। এ দুটি ক্ষেত্রেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। আমরা অর্থের অপচয় করব না। আমরা নিশ্চয়ই নতুন পদক্ষেপ নেব এবং সে পদক্ষেপের বাস্তবায়ন যাতে হয় সেটা নিশ্চিত করব। আমরা তো দেখব যেটা পলিসি আছে সেটা বাস্তবায়ন হয়। অনেক জায়গায় দেখেছেন অনেক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হয় না সেটার অনেক কারণ আছে। ডোন্ট ওয়ারি। আমরা যেটা নেব সেটা বাস্তবায়ন করব। আমরা যতটুকু খেতে পারব ততটুকুই নেব। ততটকুই বাস্তবায়ন করব।
পরে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, চার-পাঁচ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকট আছে স্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর বলেন, রিজার্ভের সংকট ওভারনাইট যাবে না। তবে অযৌক্তিক পর্যায়ে বাজারে ডলার সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হবে না। রিজার্ভ বাড়াতে উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।