২০ মার্চ, ২০১৬ ১০:৩৭
ধারাবাহিক উপন্যাস

অটোমান সূর্য, সুলতান সুলেমান (পর্ব-৪)

রণক ইকরাম


অটোমান সূর্য, সুলতান সুলেমান (পর্ব-৪)

ইউরোপীয়দের কাছে ‘সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট’ খ্যাত সুলতান সুলেমান প্রকৃত অর্থেই পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সেরা একজন শাসক ছিলেন। ক্ষমতার টানাপড়েনে ষড়যন্ত্র, গুপ্তহত্যা, ভাই-সন্তান হত্যা, দাসপ্রথা আর হারেমের নানা পরিক্রমা ছাপিয়ে এগিয়ে গেছে সুলেমানের শাসনকাল। একজন সাধারণ দাসী হয়ে ওঠেন সুলেমানের স্ত্রী। বিশ্বজুড়ে এ এক বিরল কাহিনী। সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় আসা সুলতান সুলেমান নিয়ে ইতিহাস আশ্রয়ী এ উপন্যাস। টিভি সিরিজের সঙ্গে আমাদের যেমন কোনো বিরোধ নেই, তেমনি এর অনুকরণেরও প্রশ্নই ওঠে না। আমরা কেবল মূল গল্পটি তুলে ধরার চেষ্টা করছি। প্রতি শনিবারের এ বিশেষ আয়োজনে আজ ছাপা হলো চতুর্থ পর্ব। একসঙ্গে সব পর্ব পড়তে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনলাইনে ঢুঁ মারতে পারেন।

[পূর্ব প্রকাশের পর]

নগরে নতুন সূর্য উঁকি দিয়েছে আরও আগেই। রাজ প্রাসাদজুড়ে এখন আর সুনসান নীরবতা নেই। চারপাশের সবাই দারুণ ব্যস্ত। হেঁশেল থেকে শুরু করে হারেম পর্যন্ত প্রত্যেকেই দিনের প্রথমভাগের কাজ শুরু করে দিয়েছে। নাস্তা সেরেই মায়ের ঘরে চলে এসেছেন যুবরাজ সুলেমান। প্রিয় পুত্রকে দেখামাত্র বিছানা ছেড়ে উঠতে চাইলেন আয়শা হাফসা। কিন্তু সুলেমানই এগিয়ে এসে বাধা দিলেন।

‘উঠতে হবে না আম্মা। আপনি বিশ্রাম নিন। এখন কেমন বোধ করছেন?’

মায়ের কপালে হাত রেখে পাশেই বসে পড়লেন সুলেমান।

‘আমি ঠিক আছি বাবা। কতদিন তোমাকে দেখি না!’

পুত্রের দিকে তাকিয়ে বললেন আয়শা।

‘সেজন্যই তো খবর পাওয়ামাত্র ছুটে এলাম!’

মহান আল্লাহতাআলার অশেষ কৃপায় আয়শা হাফসা এখন অনেকটাই সুস্থ। সুলেমানকে পাশে পেয়ে তার অসুস্থতা কোথায় যেন দৌড়ে পালাল। ছেলে কী খাবে, কখন এল, কী অবস্থা এসব নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলেন তিনি। সুলেমান কোনোমতে থামালেন মাকে। বিশ্রাম নিতে বললেন। বাবার খোঁজ নিলেন। এরপর আদর করে মায়ের কপালে ছোট্ট একটা চুমু এঁকে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন।

দিনের আলোয় চিরচেনা তোপকাপি প্রাসাদটাকে দেখতে ভীষণ ভালো লাগছে। হাঁটতে হাঁটতে প্রাসাদের সামনের খোলা জায়গাটার দিকে চলে এসেছেন যুবরাজ। চারদিক তাকিয়ে আজ কেমন যেন একটু শিহরণ খেলে গেল। মনের ভিতর একটা চিন্তাই খেলা করছে কেবল, এই গোটা প্রাসাদ একদিন সুলেমানের হবে।

পারগালি ইব্রাহীম সঙ্গীসহ অতিথিশালায় রাত কাটিয়েছেন। রাতটা যেমন তেমন ইব্রাহীমের সকালের শুরুটা কিন্তু দারুণ হয়েছে। নাস্তা শেষ করার আগেই সুরুর সায়রার সঙ্গে দেখা হয়ে গেছে। এই মেয়েটাকে ইব্রাহীম একটু একটু পছন্দ করে। আক্ষরিক অর্থেই একটু একটু। কনস্টান্টিনোপল প্রাসাদে খুব কম মেয়ের সঙ্গেই বাইরের লোকদের দেখা হয়। তবে পারগালি ইব্রাহীম যুবরাজের বন্ধু হওয়ায় তার আপ্যায়নের জন্য  সব সময়ই বিশেষ ব্যবস্থা। সেই বিশেষ ব্যবস্থার সূত্র ধরেই সুরুর সঙ্গে পরিচয়। ছিপছিপে গড়নের গোলগাল মুখ মেয়েটার। প্রথম যেবার দেখা হয়েছিল, সেবারই চোখে পড়ে মেয়েটার অদ্ভুত মায়া ভরা চাহনি। এরপর যতবার এখানে এসেছে ইব্রাহীমের দুই চোখ কেবল তাকেই খুঁজেছে। এবার যেন সেই আকাঙ্ক্ষাটা আরও বেড়ে গিয়েছিল। ইব্রাহীমের এই আকুলতার কথা সম্ভবত সায়রাও খানিকটা টের পেয়েছে। নইলে সে ইব্রাহীমকে কেন বলবে এতদিন পর ইব্রাহীমকে দেখতে পেরে তার খুব ভালো লাগছে! ইব্রাহীমের খুব ইচ্ছে করছিল সায়রার সঙ্গে একান্তে একটু কথা বলার। কিন্তু আপাতত সেই সুযোগ নেই। এখানকার নিয়ম ভীষণ কড়াকড়ি। ইব্রাহীমের কেবল মনে হচ্ছে একদিন হয়তো সত্যিই সেই সুযোগ আসবে। সায়রার কাছ থেকেই শুনল সুলেমান ইব্রাহীমকে খুঁজছেন। তিনি বাগিচায় অপেক্ষা করছেন। দ্রুত অতিথিশালা থেকে বের হলেন ইব্রাহীম। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলেন সুলেমানের সামনে। কুর্নিশ করতেই সুলেমান বললেন—

‘ইব্রাহীম, ঠিক আছ তো? খাওয়া-দাওয়া হয়েছে।’

‘জি যুবরাজ। সব ঠিক আছে।’

‘চল ওদিকটায় বসা যাক।’

পাশের বেঞ্চিটা দেখিয়ে বললেন যুবরাজ। সুলেমান এগিয়ে গিয়ে বসে পড়লেন বেঞ্চিতে। ইব্রাহীম তার ঠিক নিচে ঘাসের ওপর বসে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠলেন যুবরাজ।

‘একি করছ ইব্রাহীম। বেঞ্চিতে উঠে বস।’

‘জি না হুজুর। আমি আপনার গোলাম। আমি কী করে আপনার সঙ্গে বেঞ্চিতে বসি। আমি এখানেই ঠিক আছি।’

‘আমি বলছি বস। তুমি তো আমার বন্ধুও। তাছাড়া আমি তো আর সুলতান নই যে তুমি আমাকে এতটা সম্মান জানাবে।’

‘কিন্তু আপনিই তো এই বিশাল তুর্ক সালতানাতের ভবিষ্যৎ সুলতান।’

‘আল্লাহ ভালো জানেন। এখন বস তো।’

ইতস্তত করতে করতেই সুলেমানের পাশে বসলেন পারগালি ইব্রাহীম।

এই মানুষটির প্রতি ঋণের কোনো শেষ নেই ইব্রাহীমের। একজন মানুষ এত ভালো কী করে হতে পারে ভেবে পায় না সে। পারগালি সাধারণ এক জেলের সন্তান ইব্রাহীমকে বন্ধুজ্ঞান করছে অটোমান সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ সুলতান। ভাবতেই গা শিউরে ওঠে ইব্রাহীমের। পারগা থেকে অপহরণের পর দাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয় ইব্রাহীমকে। ঘটনাচক্রে মানিসায় চলে আসে সে। মানিসা প্রাসাদে তখন কিশোর সুলেমানের বসবাস। একদিন খেলতে গিয়ে আরেক কিশোর ইব্রাহীমের সঙ্গে পরিচয় হয় সুলেমানের। শুধু পরিচয় নয়, ইব্রাহীমকে ভীষণ ভালো লেগে যায় শাহজাদা সুলেমানের। এরপরই পাল্টে যায় কিশোর দাসের জীবন। রাজকীয় পরিবেশে শাহজাদার খেলার সঙ্গী হিসেবে বেড়ে উঠতে লাগলেন ইব্রাহীম। সুলেমানের মতোই মক্তবে যাওয়া শিক্ষা-দীক্ষাসহ সব ধরনের রাজকীয় শিক্ষা জুটল সাধারণ দাস ইব্রাহীমের ভাগ্যে। সেই দিনগুলোর কথা মনে করে আনমনা হয়ে পড়ল ইব্রাহীমের মন।

‘কী হয়েছে পারগালি?’

ইব্রাহীমের পিঠে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন সুলেমান। পিঠের ওপর সুলেমানের হাত আর হুট করে তার কণ্ঠ শুনে চমকে উঠল ইব্রাহীম।

‘কিছু না, হুজুর।’

‘উঁহু। কিছু একটা তো অবশ্যই। তোমাকে খুব অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে।’

‘মাফ করবেন হুজুর। আসলে আপনার ভালোবাসা আমাকে পুরনো দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। একজন সাধারণ গোলাম হয়েও আপনি যে ভালোবাসা আমাকে দিচ্ছেন, আমি কী এর যোগ্য?’

সুলেমানের দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে কথাগুলো বলল ইব্রাহীম।

‘আরে! এভাবে বলছ কেন পারগালি। আমি সেই ছোটবেলা থেকেই তোমাকে বন্ধু জানি। তুমি নিজের জীবন বাজি রেখে আমার জীবন পর্যন্ত বাঁচিয়েছ।’

‘ওটা এই গোলামের দায়িত্ব ছিল হুজুর।’

এরপরও ইব্রাহীমের কণ্ঠে বিনয়।

‘না, ইব্রাহীম, এটা সবাই সবার জন্য করে না। আমি নিজেও কিন্তু তোমার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ।’

‘এভাবে বলবেন না হুজুর। আমি সারাজীবন আপনার কদমতলে থাকতে চাই। আপনার সেবায় কাটিয়ে দিতে চাই।’

ইব্রাহীমের কথা শুনে হাসলেন সুলেমান। এরপর বাগানের লাল টিউলিপ ফুলগুলোর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলেন বেশ কিছুক্ষণ। এরপর ছোট্ট করে বললেন—

‘এখনো অনেক পথ বাকি ইব্রাহীম... যাত্রা তো সবে শুরু!’

এরপর কিছুক্ষণ কেটে গেল বিনা বাক্য বেয়ে। স্বর্গসুখের তোরণের দিক থেকে হঠাৎ করেই কিসের যেন কোলাহল কানে এলো। সুলেমান আর ইব্রাহীম দুজনেই সেদিকে তাকালেন। একে একে তিনটি ঘোড়ায় টানা গাড়ি ভিতরে ঢুকল। হেরেমের প্রধান রক্ষী দানা হালিলকে খুব ব্যস্ত মনে হলো। হেরেম থেকে আসা কয়েকজন মেয়ের মধ্যে সায়রাও আছে। সবগুলো গাড়িতেই সম্ভবত দাস বোঝাই করা।

‘ইব্রাহীম কী হচ্ছে ওখানে?’

‘সম্ভবত নতুন দাস নিয়ে আসা হয়েছে হারেমের জন্য।’

‘ও!’

সুলেমানকে খুব একটা আগ্রহী মনে হলো না। ততক্ষণে ঘোড়ার গাড়ি থেকে দাসদের নামানো শুরু হয়ে গেছে। হঠাৎ একটা নারীকণ্ঠের গগণবিদারী চিৎকারে থমকে উঠল সবাই। সুলেমানও আগ্রহী হয়ে তাকালেন সেদিকে। লাল পোশাকের একটা মেয়ে প্রচুর জোর জবরদস্তি করছে। চিৎকার করে বলছে—

‘ছাড়! ছেড়ে দাও আমাকে।’

মেয়েটার দিকে তাকিয়েই চমকে ওঠলেন সুলেমান! মেয়েটাকে খুব চেনা চেনা লাগছে তার! এখানে বসেই দিব্যি দেখতে পাচ্ছে মেয়েটাকে। বাদামি চুল, টানা টানা চোখের ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে মেয়েটাকে একেবারেই অন্যরকম লাগছে। লাল পোশাকের আবরণ ভেদ করে যৌবন যেন প্রকট হয়ে উঠেছে তার। দানা হালিল মেয়েটার কাছে গিয়ে কী যেন বলল। এরপর মেয়েটা সুলেমান আর ইব্রাহীমের দিকে তাকিয়ে আবার চিৎকার করে উঠল।

‘আমি কাউকে ভয় পাই না। মেরে ফেল আমাকে। আমি আর বাঁচতে চাই না।’ হারেমের রক্ষী দানা হালিল বোধ হয় মেয়েটাকে যুবরাজের কথা বলেছিল। সে কারণেই যুবরাজের দিকে তাকিয়ে এমন চিৎকার করছে সে। পারগালি ইব্রাহীম কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতো একবার সুলেমান আরেকবার মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছে। যুবরাজের চোখে মেয়েটার জন্য কেমন যেন একটা আকুতি দেখতে পেল ইব্রাহীম। কিন্তু সে নিশ্চিত নয়। সাহস করে যুবরাজকে জিজ্ঞাসা করে ফেলবে নাকি? নিজে নিজেই ভাবছে ইব্রাহীম। কিন্তু জিজ্ঞাসা করতে হলো না। সুলেমানই ইশারা করল। ইব্রাহীম যা বোঝার বুঝতে পারল। শুধু নিশ্চিত হওয়ার জন্য সুলেমানকে জিজ্ঞাসা করল—

‘হুজুর, যার পরনে লাল জামা— সে-ই কি?’

‘হুমম।’

সুলেমানের সম্মতি পাওয়া মাত্র কুর্নিশ করে সেদিকে ছুটলেন পারগালি ইব্রাহীম। সুলেমান সেখানে বসেই এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন মেয়েটার দিকে। বারবার মনে করার চেষ্টা করছেন মেয়েটাকে কোথায় দেখেছেন। ভেবে বের করার চেষ্টা করছেন কেন একে এত বেশি পরিচিত মনে হচ্ছে তার। কে এই মেয়ে?

অল্পক্ষণের মধ্যেই দানা হালিল আর সায়রার সঙ্গে আলাপ সেরে সুলেমানের কাছে ফিরে এসেছে ইব্রাহীম।

‘বল কী খবর এনেছ পারগালি?’

‘হুজুর.. এরা সবাই দাস। মোট তিনজন খোজা আর নয়জন মেয়েকে নিয়ে আসা হয়েছে হারেমের জন্য।’

‘আমি সবার কথা জানতে চাইনি।’

একটু বিরক্ত মনে হলো সুলেমানকে।

‘জি হুজুর, আমি বলছি। লাল জামা পরা মেয়েটার নাম আলেকজান্দ্রা। এদের সবাইকে ক্রিমিয়ার কাফফা থেকে কিনে আনা হয়েছে।’

‘হুমম।’

ঠিক কী জানতে চাওয়া উচিত বুঝে উঠতে পারছেন না সুলেমান। তবে যুবরাজের চোখের চাহনি ঠিক বুঝতে পারলেন ইব্রাহীম।

‘হুজুর, এই মেয়েটাকে নাকি লিথুনিয়া থেকে তুলে এনে কাফফার বাজারে ওঠানো হয়। ওর বাবা একজন পাদ্রি।’

‘আচ্ছা। দানা হালিলকে বলে দাও এর দিকে যেন বিশেষ নজর দেওয়া হয়। আমার কথা বলবে।’

‘আমি এর মধ্যেই সেটা বলে এসেছি যুবরাজ।’

বলেই একটু হাসল ইব্রাহীম। সে হাসি সংক্রমিত হলো সুলেমানের মধ্যেও।

‘ভালো ইব্রাহীম।’

প্রশংসার জবাবে শুধু খানিকটা ঝুঁকে যুবরাজকে কুর্নিশ করল ইব্রাহীম। দুজন পেয়াদা এদিকে ছুটে এসে জানাল সুলতান সেলিম যুবরাজকে ডেকেছেন।

বাবাকে ছোটবেলা থেকেই একটু ভয় পেতেন সুলেমান। বড়বেলায় এসেও ঠিক ভয় না পেলেও তাকে খানিকটা এড়িয়ে চলারই চেষ্টা করেন তিনি। তবে সুলতান প্রথম সেলিম কিন্তু সুলেমানকে অসম্ভব রকমের ভালোবাসেন। এতদিন পর পুত্রকে কাছে পেয়ে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। যুবরাজের ইচ্ছে ছিল রীতি মেনে সুলতানের কাফতানে চুমু খাবেন। এরপর কথা বলবেন। কিন্তু অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান হলেও সেলিমের আরেকটা পরিচয় তিনি পিতা।

গুপ্তহত্যা, রক্তারক্তি আর সিংহাসনের জন্য অনেক ষড়যন্ত্রের গল্প অটোমান সাম্রাজ্যের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে।

এরপরও পিতা-পুত্র ভাই-ভাইয়ের সম্পর্ককে ছোট করে দেখার উপায় নেই। সময় পরিক্রমায় হয়তো সেই সম্পর্কের অবস্থান, আচরণ পাল্টে যায় কিন্তু আবেদনটা চিরন্তনই থাকে। সেই আবেদনের জন্যই ভয়ঙ্কর হওয়া সত্ত্বেও পুত্রের জন্য সুলতান প্রথম সেলিমের এত আহ্লাদ।

বাবার বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত হয়েই রিদানিয়ার যুদ্ধে বিজয়ের জন্য সুলতানকে অভিনন্দন জানালেন সুলেমান। সেইসঙ্গে দুঃখও প্রকাশ করলেন। কারণ এই যুদ্ধে বাবার সঙ্গী হওয়ার জন্য ইচ্ছুক ছিলেন সুলেমান। কিন্তু সুলতান সেলিম পুত্রকে অনুমতি দেননি।

বাবা অবশ্য পুত্রের কথা হেসেই উড়িয়ে দিলেন। বললেন

‘এটা তো ছোট যুদ্ধ। তুমি যখন সিংহাসনে বসবে তখন এর চেয়ে বড় বড় যুদ্ধে জয়ী হবে। অটোমান সাম্রাজ্যের পতাকা সারা বিশ্বময় ছড়িয়ে দেবে। আমার বীর সন্তান।’

বাবার কথায় একটু যেন লজ্জাই পেলেন যুবরাজ সুলেমান। তবু সুলতানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বললেন— ‘ইনশাআল্লাহ।’

পিতা-পুত্র বেশ কিছুক্ষণ আলাপ করল। আগামীর যুদ্ধ পরিকল্পনা, মাহিদেভরান, মোস্তফা কোনো প্রসঙ্গই বাদ গেল না।

আলাপের ফাঁকেই সুলেমান জানাল আজ রাতেই ফিরতে চায় সে। যদিও মা আয়শা আরও দুটি দিন থেকে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন, কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ মানিসায় সুলেমানের হাতে অনেক কাজ জমে আছে। সেগুলো শেষ না করেই হঠাৎ করে চলে আসতে হয়েছে। দ্রুত সেখানে ফিরতে না পারলে ঝামেলা হয়ে যেতে পারে। সুলতান সেলিম অবশ্য সুলেমানকে থাকার কথা বললেন না। বরং জানালেন আয়শা হাফসাকে তিনিই দেখে রাখবেন। সুলেমান যেন তার দায়িত্ব নিয়েই ব্যস্ত থাকে। পুত্রের মধ্যে কর্তব্যনিষ্ঠা দেখতে পেয়ে মনে মনে খুশিই হলেন সেলিম খান।

বিডি-প্রতিদিন/২০ মার্চ, ২০১৬/মাহবুব

সর্বশেষ খবর