সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

তিন মূলমন্ত্রে চার প্রজন্মে জড়োয়া হাউজ

বাদল চন্দ্র রায়, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জড়োয়া হাউজ, ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিন মূলমন্ত্রে চার প্রজন্মে জড়োয়া হাউজ

জড়োয়া হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) ভাইস প্রেসিডেন্ট বাদল চন্দ্র রায় বলেন, আমার ঠাকুরদা নিত্য গোপাল রায়ের হাতে গহনার ব্যবসায় জড়োয়া হাউজের গোড়াপত্তন হয়। ওয়ারীর উত্তর মসুন্ডিতে আমাদের বাড়িতেই প্রথম তিনি ব্যবসা শুরু করেন। এই প্রতিষ্ঠানের বয়স ১০০ বছরের বেশি। এটি দেশের প্রাচীনতম জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। ঠাকুরদার দেহাবসানের পরে আমার বাবা এস সি রায় এবং জ্যাঠামশাই (বড় চাচা) কে সি রায় ব্যবসার হাল ধরলেন। তারা বড় বাবু এবং মেজবাবু নামে পরিচিত ছিলেন। আমার জ্যাঠামশাই নেতাজী সুভাষ বসুর সঙ্গে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। তখন ব্রিটিশ শাসনামলে তিনি ব্যবসায় অতটা সময় দিতে পারতেন না। তৎকালীন পুরো পাকিস্তানের মধ্যে জড়োয়া সেটিংয়ের কাজে আমার বাবা একজন দক্ষ স্বনামধন্য শিল্পী ছিলেন। জড়োয়া কাজ আমাদের মনোপলি ব্যবসা ছিল। পুরো পাকিস্তানে তখন আমরা ছাড়া কেউ মুক্তা ছিদ্র করতে পারত না। ফলে ব্যবসায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। তখন থেকে আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম হলো জড়োয়া হাউজ। ১৯৭৮ সাল থেকে আমি বাবার সঙ্গে কাজ শুরু করি। ১৯৮২ সালে আমি ব্যবসার দায়িত্ব নিই। জড়োয়া হাউজের এখন তিনটি ব্রাঞ্চ; গুলশান, ধানমন্ডি এবং চট্টগ্রামে।

ব্যবসা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ী বলেন, ক্রেতা ধরে রেখে জড়োয়া হাউজের ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে আমাদের মূলমন্ত্র তিনটি; সততা, সার্ভিস এবং ডিজাইন। এই তিনটি বিষয়কে আমরা সবসময় প্রাধান্য দিই এবং ধরে রাখার চেষ্টা করি। আমার এখানে ক্রেতারা এলে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। আমি, আমার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে কেউ না কেউ সব সময় আউটলেটে থাকার চেষ্টা করি। ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলা, তাদের সার্বিক সেবা নিশ্চিত করতে আমরা প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলি, সম্পর্ক বজায় রাখি। আমরা নকশায় নতুনত্ব রাখতে নজর দিই। বাইরে থেকে অনেক ডিজাইন নিয়ে আসি। আমার মেয়ে অনিন্দিতা রায় গহনার ডিজাইন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার বিষয়গুলো দেখাশোনা করে। গহনার এই বিষয়ে সার্বিক জানতে আমার মেয়ে অনিন্দিতা এবং ছেলে অভি রায় দেশের বাইরে থেকে জেমলজি বিষয়ে পড়াশোনা করে এসেছে।    

জড়োয়া হাউজের স্বত্বাধিকারী আরও বলেন, ডলারের দামের অস্থিরতার কারণে স্বর্ণের বাজারে প্রভাব পড়ছে। ৮৮ টাকার ডলার এখন ১১০ টাকায় উঠেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কিছুটা কমেছে। এতে দেশে স্বর্ণের বাজার কিছুটা ভালো হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বর্ণের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কমার সুবিধা আমরা ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই পাচ্ছি না। ডলারের দাম এ অবস্থায় থাকলে স্বর্ণের দাম আরও বাড়তে পারে।

বাজুসের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাদল চন্দ্র রায় বলেন, স্বর্ণ শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রশাসনিক জটিলতাকে সরিয়ে স্বর্ণ রপ্তানি করার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে হবে। সরকারের উচিত গার্মেন্ট খাতের মতো আমাদেরও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া এবং উৎসাহিত করা। যাতে আমরা এ খাতকে আরও উন্নত করতে পারি। সরকারের উচিত জুয়েলারির ওপর পড়াশোনার বিষয়ে ছেলেমেয়েদের উৎসাহিত করতে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। তবেই এ পেশার আরও উন্নয়ন ঘটবে। স্বর্ণ রপ্তানি করলে এ খাতে নতুন দিগন্ত তৈরি হবে। আমাদের কারিগররা খুবই দক্ষ। তারা উন্নতমানের কাজ করতে পারে। দেশে কাজের অভাবে প্রচুর কারিগর বিদেশে চলে যাচ্ছে। আমরা তাদের ধরে রাখতে পারিনি। সরকার রপ্তানিমুখী পরিকল্পনা নিলে আমরা আশার আলো দেখতে পাব। দেশে গোল্ড রিফাইনিং খুব দ্রুত হয়তো শুরু হবে।  এটা শুরু হলে আমরা কিছুটা দাম কম পাব এবং স্বস্তি ফিরবে এ খাতে। 

সর্বশেষ খবর