রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
বিনিয়োগের নিরাপদ গন্তব্য

আবাসন শিল্পে ক্রেতা বাড়ছে

রুহুল আমিন রাসেল

আবাসন শিল্পে ক্রেতা বাড়ছে

বিনিয়োগের নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে এখন আবাসন শিল্পে ক্রেতা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, বৈশি^ক পরিস্থিতি ও দেশীয় বাস্তবতা বিবেচনায় ক্রেতারা এখন জমি ও ফ্ল্যাট কিনে বিনিয়োগ নিরাপদ রাখতে চান। অন্য খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেখানে ঝুঁকি আছে, সেখানে আবাসন খাতে অর্থের নিরাপত্তা খুঁজে পাচ্ছেন ক্রেতারা। এ খাতে বিনিয়োগ ব্যাংকের চেয়েও নিরাপদ মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ বলছে, দেশের মোট অর্থনীতিতে আবাসন খাতের অবদান প্রায় ৮ শতাংশ। বিশেষ করে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাড়ির স্বপ্ন না দেখলেও, মাথা গোঁজার জন্য অন্তত একটি ফ্ল্যাটের স্বপ্ন দেখে থাকেন। সে কারণেই বড় হচ্ছে আবাসন খাত, বাড়ছে চাহিদা।

এ প্রসঙ্গে রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি কামাল মাহমুদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাকালের দুরবস্থা পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এক বছরের বেশি সময় ধরে ফ্ল্যাটের ব্যবসা চাঙা। চাহিদা বেশি থাকায় আবাসন প্রতিষ্ঠানের হাতে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা ফ্ল্যাট প্রায় নেই বললেই চলে। সুযোগ-সুবিধা ভালো এমন এলাকার প্রকল্পের ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য ছাড়লেই দ্রুত বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তাই নিত্যনতুন প্রকল্পও নিয়ে আসছে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো। বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে আবাসন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈধ করা হয়েছে সাড়ে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ।

আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ সময়ের চেয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিক্রি ১৫-২০ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে ঢাকায় ১ কোটি টাকার কমবেশি মূল্যের ১ হাজার ২০০ বর্গফুট থেকে শুরু করে ১ হাজার ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। চিকিৎসক, সরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারাই ফ্ল্যাটের মূল ক্রেতা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ এখন অর্থনীতির যে পর্যায়ে আছে, সেখানে শহর ও গ্রামের বৈষম্য বা ব্যবধান কমাতে হবে। এটা সরকারের মহাপরিকল্পনাতেও আছে। ফলে আবাসন খাত জেগে উঠেছে। এই খাত এখন দেশের বিকাশমান অর্থনীতির প্রাণ। দেশের বেসরকারি খাতের অবদানও এখানে বাড়ছে। আবাসন শিল্পে অর্থায়নের জন্য পৃথক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। কম সুদে ক্রেতা ও উদ্যোক্তাদের ঋণসুবিধা দিতে হবে। সরকারিভাবে গৃহঋণ প্রদানে যে হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন রয়েছে, সেটি ব্যাংক হিসেবে রূপান্তর করতে হবে। তবেই সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী গ্রাম ও শহরের ব্যবধান কমাতে সবচেয়ে বেশি অগ্রগামী ভূমিকা পালন করবে আবাসন খাত।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খানের মতে, এ দেশে আবাসন শিল্পের অপরিসীম সম্ভাবনা রয়েছে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আবাসন শিল্পে উদ্ভাবনী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। আবাসন শিল্পের বিকাশে বেসরকারিভাবে যে ভূমিকা রাখা হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে সে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সরকারি ও বেসরকারিভাবে যদি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া যেত, তাহলে এ শিল্পের আরও বেশি বিকাশ হতো।

সর্বশেষ খবর