রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

মধ্যবিত্তের আবাসনও নিশ্চিত করতে হবে

মো. শহীদ উল্লা খন্দকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

মধ্যবিত্তের আবাসনও নিশ্চিত করতে হবে

অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল সূচক হিসেবে অবকাঠামোগত উন্নয়নকে বিবেচনা করা হয়। আবাসন শিল্পও এই অবকাঠামোগত শিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে একটি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে উপযুক্ত বাসস্থান জরুরি। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ‘সবার জন্য আবাসন’ নীতিতে এগিয়ে চলছে দেশ। এখনকার আবাসন খাত শুধু বড় শহরকেন্দ্রিক। এটা জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতেও ছড়িয়ে দিতে হবে। উচ্চবিত্তের পাশাপাশি নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের আবাসন ব্যবস্থাও নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। এ অভিমত প্রকাশ করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার সচিবালয়ের নিজ দফতরে দেশের আবাসন খাত প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।

দীর্ঘদিন পূর্ত সচিবের দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্বল্প জায়গায় কীভাবে বেশি মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যায়, সেই চিন্তা থেকেই আবাসন ব্যবসার গোড়াপত্তন। বাংলাদেশে আবাসন খাত ৪০ বছর ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে। সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। একই সঙ্গে জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০১২ সালে আবাসন খাতে মন্দা শুরুর অস্থির সময় পার করে ২০১৬ সালের দিকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে সরকারি কর্মচারীদের ৫ শতাংশ সুদে গৃহঋণ দেওয়ার ঘোষণা আসে। তারপর ধীরে ধীরে এ খাতের ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। করোনার ধাক্কায় গত বছরের শুরুর দিকে আবার সংকটে পড়ে আবাসন খাত। এরপর করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে জুলাই-আগস্টের দিকে ব্যবসা বাড়তে শুরু করে। এ সময় দ্রুত নগরায়ণ এবং অস্বাভাবিক জনসংখ্যার বৃদ্ধি হার দেখা যাচ্ছে। ফলে আবাসন খাতের চাহিদাও বাড়ছে। এ ছাড়া দেশের যৌথ পরিবার ভেঙে ছোট ছোট একক পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। এতে ফ্ল্যাট এবং অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদাও দিনদিন বাড়ছে। একটি দেশের জন্য এটি যেমন ভালো লক্ষণ তেমনি আবাসন খাতের জন্য নিঃসন্দেহে শুভ সূচনা বৈকি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশের জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদনে আবাসন খাতের অবদান এখন ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আবাসন খাতকে স্থিতিশীল রাখতে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- করবিহীন আয় বিনিয়োগের অনুমতি, একক-সংখ্যার সুদের হার বাস্তবায়ন এবং সামগ্রিকভাবে প্রপার্টি রেজিস্ট্রেশনের খরচ ১৪-১৫% থেকে কমিয়ে মোট দলিল মূল্যের ১০-১১.৫% করা। ফ্ল্যাট এবং কমার্শিয়াল স্পেসের রেজিস্ট্রেশন কয়েক দফায় প্রায় ৩ থেকে ৪ শতাংশ কমানো হয়েছে।

এ খাতের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, দুটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আবাসন খাত। এক. রড-সিমেন্টসহ বিভিন্ন কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি। এক বছরের ব্যবধানে শুধু রডের দামই বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। দুই. রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ২০১৬-২০৩৫ সালের জন্য বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)। সেটির আলোকে ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০২১ হচ্ছে। সেই খসড়া বাস্তবায়ন হলে ভবনের আয়তন বর্তমানে যা অনুমোদন হচ্ছে, তার চেয়ে আয়তন হ্রাস পাবে। মানুষের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৭৩ সালে পুনর্গঠিত বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন এ খাতে অর্থায়ন বন্ধ রেখেছে। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণের বিপরীতে যে হারে সুদ নিয়ে থাকে, তা আবাসনশিল্পের বিকাশে বড় বাধা। এখন পর্যন্ত আবাসন খাত শুধু বড় শহরকেন্দ্রিক। আইএফসির গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের জেলা পর্যায়ে আবাসন খাতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো খুব একটা আগ্রহী নয়। এর অন্যতম কারণ আইনি জটিলতা। শহরাঞ্চলে কোনো ব্যক্তি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সঠিক সময়ে পরিশোধ না করলে অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো আইনি কাঠামো নেই।  এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আইনের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির মাধ্যমে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়া যায়।  ঢাকা শহরে শুধু নয়, বাইরের শহরগুলোতেও পিপিপির মাধ্যমে আবাসন সংকট দূর করা সম্ভব। সরকার এগিয়ে এলে বেসরকারি উদ্যোক্তারাও এ ব্যাপারে আগ্রহী হবে।

সর্বশেষ খবর