logo
আপডেট : ১৮ মে, ২০২৫ ১৪:৩৩
দখল-দূষণে মৃতপ্রায় শুভাঢ্যা খাল
অনলাইন ডেস্ক

দখল-দূষণে মৃতপ্রায় শুভাঢ্যা খাল

সংগৃহীত ছবি

একসময়ের প্রাণবন্ত জলপথ ছিল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বুক চিরে বয়ে চলা শুভাঢ্যা খাল। ঢাকার পাশেই বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী সংযোগস্থল হিসেবে পরিচিত এই খালে একসময় নৌকা চলত, মাছ ধরা যেত- এমনকি আশপাশের কৃষিজমি সেচেও ব্যবহৃত হতো এর পানি। কিন্তু সেই খালে এখন পানিরই অস্তিত্ব নেই। দখল-দূষণে মৃতপ্রায় খালটি পরিণত হয়েছে ‘প্লাস্টিকের ভাগাড়ে’। এখন দেখে বোঝার উপায় নেই- এটি খাল নাকি প্লাস্টিকের ভাগাড়।

জানা গেছে, এর আগে কয়েকবার খালটি উদ্ধার ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কাজে আসেনি। বরং দিন দিন দখল আর দূষণে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে খালটি। এখন প্রায় পুরোটাই দখল, বর্জ্য ও পলিথিনে ভরা শুভাঢ্যা খালের অনেকাংশই ভরাট হয়ে গেছে, এতে স্থানীয়দের পায়ে হেঁটেই এটি পার হতে দেখা যায়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, খালটিতে এখন আর পানির কোনো অস্তিত্বই নেই। সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শুভাঢ্যা খাল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চর কালীগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে রাজেন্দ্রপুর বাজার এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে চর কালীগঞ্জ থেকে গোলামবাজার পর্যন্ত খালটির তিন কিলোমিটার এলাকা প্লাস্টিক ও বারোয়ারি বর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে। যে কেউই প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার খাল বলবে এই শুভাঢ্যাকে। এছাড়া চর কালীগঞ্জ থেকে গোলামবাজার পর্যন্ত খালের এই অংশে শতাধিক শিল্পকারখানা ও দোকানপাট গড়ে উঠেছে খালটি ঘিরে। যেখানে  কারখানা ও দোকানের সব বর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে খালটি। যদিও স্থানীয়দের অভিযোগ, যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় খালে বর্জ্য ফেলছে মানুষ। 

শুভাঢ্যা খাল

খালটির বেহাল দশা নিয়ে নুরুল ইসলাম নিরব নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এখানে চলমান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথ নয়। এ কারণেই খালে ময়লা ফেলার প্রবণতা দেখা যায়। কার্যকরী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। বর্তমানে দিনে যে একবার বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়, তা যথেষ্ট নয়। 

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল মাওয়া গণমাধ্যমকে বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক করার লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছেন। খালের পাশে অবৈধ স্থাপনার তালিকা করা হয়েছে উল্লেখ করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, যখন খাল খননকাজ শুরু হবে, তখন এসব স্থাপনা ভেঙে ফেলা হবে।

তবে আশার খবর এই যে, মৃত এই খালে জীবন ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৩১৭ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের জুনে একবছর মেয়াদি এই খাল খনন প্রকল্প শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

সর্বশেষ গত সোমবার খালটি পরিদর্শন শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন প্রকল্পে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজ করবে। খাল খননের পাশাপাশি পাড় বাঁধাই, ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজও করা হবে। আগামী জুনে কাজ শুরু হয়ে ২০২৬ সালের জুনে শেষ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।