
মো. জুনাইদ ও নাজমুল হক খান। তারুণ্যের উদ্দীপনায় শুরু করেছিলেন ব্যবসা। ছোট পরিসরে একটি দোকান নিয়ে সেখানে পোশাক বিক্রি। ধানমন্ডিতে নেওয়া সেই দোকানের আয়তন সবমিলিয়েও ২০০ বর্গফুট ছিল না। এটা ২০০৩ সালের গল্প। সে গল্প এখন ডালপালা মেলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে উঠছে। গল্পটা এগিয়ে যাওয়ার, সফলতাকে ছুঁয়ে দেখার। লুবনান, রিচম্যান ও ইনফিনিটি মেগামলের কর্ণধার এই দুই উদ্যোক্তা অনুপ্রেরণার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বয়সে তরুণ অনেকেই তাদের এগিয়ে যাওয়ার গল্প শুনে চমকে উঠবেন। কোনো রূপকথা নয়, অন্য ১০ জন তরুণের মতোই পড়াশোনা শেষে কিছু একটা করতে চেয়ে যাত্রা শুরু। তারপর কর্মোদ্দীপনা ও স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার প্রেরণার সঙ্গে শুধু যোগ করেছেন পরিশ্রম। ধীরে ধীরে লুবনান, রিচম্যান ও ইনফিনিটি মেগামল হয়ে ওঠে ক্রেতাসাধারণের আস্থার নাম। আরও জানাচ্ছেন— তানভীর আহমেদ
...এত বড় কর্মতত্পরতা তাদের কাছেও নতুন ছিল। তবে সেটা ভালোভাবেই সামাল দেন তারা। লুবনান, রিচম্যান ও ইনফিনিটি মেগামলের এই যে উত্থান সেটি কিন্তু থেমে নেই। প্রায় ১৩ বছর হতে চলল এই বন্ধুত্বের যাত্রা ব্যবসায়িকভাবেও আলোচিত। এখন প্রত্যক্ষভাবে তাদের কর্মযজ্ঞে কাজ করছেন আরও দুই হাজার তরুণ-তরুণী। শিক্ষিত এই তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা তাদের অন্যতম বড় সাফল্য। জাতীয়ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অবদান রাখছেন বড় অঙ্কের ট্যাক্স ও ভ্যাট প্রদান করে
লুবনান একদিকে ছিল উৎসব কেন্দ্রিক পোশাক। বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানকে টার্গেট করে লুবনান বাজার ধরতে চেয়েছিল। হয়েছেও তাই। তাই এবার তরুণ ক্রেতাদের দিকে নজর দিলেন। কর্মজীবী কর্পোরেট তরুণদের জন্য ক্যাজুয়াল পোশাক নিয়ে রিচম্যান ভালোই সাড়া ফেলল। এক্সিকিউটিভ, কর্মকর্তা পর্যায়ের পাশাপাশি অফিশিয়াল পোশাক আয়ত্তের মধ্যে দাম দিয়ে বাজারে আনার পর রিচম্যান তরুণ ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে
শুরু করলে লুবনান ও রিচম্যান দুইয়ে মিলে এই দুই তরুণ উদ্যোক্তাকে স্বপ্ন দেখালেন আরও বড় কিছু করার। লুবনান ও রিচম্যানকে প্রতিষ্ঠিত করতে তাদের কর্মপরিকল্পনা ছিল। তাই এবার ভিন্ন বাজার ধরতে চাইলেন তারা।
এক ছাদের নিচে প্রয়োজনীয় সব দিতে চাইলেন ক্রেতাদের। ইনফিনিটি মেগামল এলো ২০০৯ সালের দিকে। ফ্যাশন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর হলে কেমন হয়? একটু ভিন্ন ঘরানার ব্যবসায়িক আইডিয়া আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। সেই চ্যালেঞ্জটা নিলেন তারা। ছয় বছর আগে যাত্রা শুরু করা ইনফিনিটি মেগামল এখন সুপরিচিতি পেয়েছে। বসুন্ধরা সিটিতে ইনফিনিটি মেগামল লাভের মুখ দেখল। ক্রেতারা ভিড় করলেন একই ছাদের নিচে প্রয়োজনীয় পণ্যের খোঁজে। উত্তরাতে বর্তমানে ইনফিনিটি মেগামলের সবচেয়ে বড় আয়োজন রয়েছে। প্রথম দুই বছর এই মেগামলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলেই মনে করেন তারা। কারণ এত বড় কর্মতত্পরতা তাদের কাছেও নতুন ছিল। তবে সেটা ভালোভাবেই সামাল দেন তারা।
লুবনান, রিচম্যান ও ইনফিনিটি মেগামলের এই যে উত্থান সেটি কিন্তু থেমে নেই। প্রায় ১৩ বছর হতে চলল এই বন্ধুত্বের যাত্রা ব্যবসায়িকভাবেও আলোচিত। এখন প্রত্যক্ষভাবে তাদের কর্মযজ্ঞে কাজ করছেন আরও দুই হাজার তরুণ-তরুণী। শিক্ষিত এই তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা তাদের অন্যতম বড় সাফল্য। জাতীয়ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অবদান রাখছেন বড় অঙ্কের ট্যাক্স ও ভ্যাট প্রদান করে। বিদেশ থেকে আমদানি কমিয়ে দেশীয় উৎকদন বাড়িয়ে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন পোশাক ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। তাদের এই কর্মযজ্ঞ দিন দিন আরও প্রশস্ত হচ্ছে। নিজস্ব স্টাইল আর নিজস্ব উৎকদন ব্যবস্থার ওপর আস্থার কারণেই তাদের আয়োজন বিশালতার মুখ দেখছে বলেই মানেন তারা। আগে জাঁকজমক বলতেই পার্শ্ববর্তী দেশের পোশাকের ওপর নির্ভরশীল ছিল ক্রেতারা। লুবনান উৎসবের উপযোগী পোশাক তৈরির পর ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাছাড়া বিশ্ববাজারে এখন ক্যাজুয়াল কর্পোরেট পোশাকের পরিধি সবচেয়ে বড়। সেখানেও রিচম্যান এনে দেশীয় ক্রেতাদের চাহিদা মেটাচ্ছেন তারা।
তাদের ব্যবসায়িক দিকটাও উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে মার্কেটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা শুরু করেছেন ই-শপিং। অনলাইনের মাধ্যমেই এখন ক্রেতারা তাদের পণ্য সহজেই অর্ডার করতে পারবেন ও কিনতে পারবেন। এ ছাড়া ফ্যাশন ট্রেন্ড উন্নতর করতে নিয়মিত কাছ করছেন তারা। আমাদের দেশের উৎসব, আবহাওয়া ও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন ফ্যাশনে পরিবর্তন আনছেন। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ট্রেন্ড মেনে ক্রেতা তৈরিতেও তারা কাজ করছেন। উৎকদন ক্ষেত্রেও তারা নিয়মিত উন্নয়নযজ্ঞ চালাচ্ছেন। সৃষ্টিশীল ফ্যাশন ডিজাইনারদের গুরুত্ব দিয়ে মানসম্মত পোশাক তৈরিতে তাদের অগ্রাধিকার রয়েছে। পুরো কেনাবেচা প্রক্রিয়াটিকে নিয়ে এসেছেন ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায়।
এ ছাড়া বিক্রয়কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রাহকবান্ধব করতেও তারা কাজ করছেন। সৃষ্টিশীল তরুণ তরুণীদের জন্য তাদের বক্তব্য একটাই— হতাশ হয়ো না। না, একদম হতাশ হওয়া যাবে না। কাজ করে যেতে হবে, লেগে থাকতে হবে। বছরের পর বছর লাগলেও পিছিয়ে যাওয়া নয়। লুবনান, রিচম্যান ও ইনফিনিটি মেগামলের সঙ্গে যে তরুণরা যোগ হতে চান তারা আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ট্রেড জেনে, সৃষ্টিশীল ফ্যাশন ডিজাইনার হলেই এগোতে পারেন তাদের সঙ্গে। স্বপ্ন দেখছেন বিশ্ববাজারে পৌঁছার। দেশের প্রতিটি জেলায় তাদের ব্র্যান্ড পৌঁছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এ ছাড়া শিক্ষিত তরুণ তরুণীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়াও তাদের বড় একটি লক্ষ্য। পণ্যের মান বাড়ানো ও ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে পোশাক পৌঁছে দিতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। ক্রেতাদের আস্থা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেত চান তারা। রিচম্যান, লুবনান ও ইনফিনিটি মেগামল একটি ব্র্যান্ড হিসেবে ক্রেতা সাধারণের কাছে পরিচিতি লাভ করছে। যে কারণে সারা দেশেই এটি ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের প্রতিটি জেলায় শোরুম স্থাপনের মাধ্যমে ক্রেতা সাধারণের হাতের নাগালে পৌঁছে যাওয়াই এখন মূল লক্ষ্য তাদের। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে যাত্রা শুরু করতে বদ্ধপরিকর এই দুই বন্ধু।
মো. জুনাইদ
বয়স পঁয়তাল্লিশ ছুঁয়েছে। লুবনান, রিচম্যান ও ইনফিনিটি মেগামলের চেয়ারম্যান তিনি। ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেই ব্যবসায় নেমেছিলেন। চাকরি না খুঁজে নিজেরাই কিছু করতে চেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেই শিক্ষার্থী থাকাকালীন অল্প অল্প করে জমানো টাকা পুঁজি করেই লুবনান দিয়ে ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু। যতটা পথ হেঁটেছেন তাতে স্বপ্ন দেখছেন আরও বড় পরিসরে এই প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
নাজমুল হক খান
স্বপ্নবাজই শুধু নন কর্মোদ্দীপনায় বিশ্বাসী। তিনি লুবনান, রিচম্যান ও ইনফিনিটি মেগামলের এমডি। হতাশ না হয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে ব্যবসায় নেমেছিলেন। দুজনের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ধীরে ধীরে ব্র্যাঞ্চ ছড়িয়ে দিয়েছেন সারা দেশে। ক্রেতাদের শ্রেণি, উৎসব ও ক্যাজুয়াল পোশাকের ভিন্নমাত্রা যোগ করে গতি আনতে পেরেছেন সহজেই। আধুনিকায়নে বিশ্বাসী। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেছে ই-শপিং।
শিক্ষিত ও সৃজনশীল ফ্যাশন ডিজাইনারের অভাব
— মো. জুনাইদ
আমাদের পুঁজির স্বল্পতা ছিল। ছাত্রজীবনে অর্জিত টাকা সঞ্চয় করে আমরা শুরু করেছিলাম। এখন লুবনান, রিচম্যান ও ইনফিনিটি মেগামল ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত। আমরা মানসম্মত পণ্য ভোক্তাদের দিতে সচেষ্ট। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করাই আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। সে জন্য আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ট্রেন্ড আমরা ধরতে চাইছি। শিক্ষিত ও সৃজনশীল ফ্যাশন ডিজাইনারদের অভাব রয়েছে। আমাদের প্রতিটি ব্রাঞ্চ ডিজিলাইটেশন প্রক্রিয়ায় এসেছে।
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ হবে ব্র্যান্ড
— নাজমুল হক খান
লুবনান, রিচম্যান ও ইনিফিনিটি মেগামলের ব্রাঞ্চ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা আছে। দেশের প্রতিটি জেলা পর্যায়ে এটি ছড়িয়ে দেওয়ার পর আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে যেতে চাই। বাংলাদেশের একটি ব্র্যান্ড হিসেবে সে বাজারে আমরা পরিচিতি হতে চাই। আমাদের এখানে বহু শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। এই পরিধি আরও প্রশস্ত করতে চাই আমরা। ব্যবসা সম্প্রসারণের বাধা হচ্ছে ব্যাংকের উচ্চ সুদের হার, দোকান ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়া। এ ছাড়া দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে।