logo
আপডেট : ২৬ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০
গণপরিবহনে নৈরাজ্য (৩)
<font style=\'color:#000000\'>কোম্পানি বাসের নামে নতুন ‘মুড়ির টিন’ </font>
শিমুল মাহমুদ

কোম্পানি বাসের নামে নতুন ‘মুড়ির টিন’

এক সময় রাজধানীতে, বিশেষ করে সদরঘাট রুটে ‘মুড়ির টিন’ নামে কাঠবডির যাত্রীবাহী বাস চলাচল করত। যাত্রী ঠাসাঠাসি করে ভিতরে নেওয়ার পর গেটেও ঝুলে থাকত অনেকে। ড্রাইভার আরও যাত্রী নিতে মাঝে মাঝেই সজোরে ব্রেক কষতেন। কোম্পানি বাসের নামে সেই অবস্থা এখন আবার যেন ফিরে এসেছে রাজধানীজুড়ে। দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া দিয়েও গাদাগাদি করে পিষ্ট হয়ে কোম্পানি বাসে যাতায়াত করেন
রাজধানীর যাত্রীরা। বিভিন্ন রুটের কোম্পানি বাসগুলো সংশ্লিষ্ট রুটের যাত্রীদের জিম্মি করে ন্যূনতম সার্ভিস না দিয়েও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। নগরীর সড়ক পরিবহনে নৈরাজ্য রোধে ২০ বছরে বাস্তবায়নের জন্য তৈরি ‘কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা’র (এসটিপি) অংশ হিসেবে চলাচলরত বাসগুলোকে বিভিন্ন কোম্পানির আওতায় নিয়ে আসা হয়। তখন বলা হয়েছিল, কোম্পানি হলে বাসগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। কোম্পানির পরিচালকদের ধরলেই বাসের অনিয়ম দূর হবে। ঢাকার বাস যাত্রীরা বলেছেন, এখন কোম্পানির বাস আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় চলছে। মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, এমনকি যাত্রীদের মারপিট খেয়েও রুটে রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় অব্যাহত রাখা হয়েছে। রাজধানীতে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত নিয়মিত যাত্রীরা বলেছেন, বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ফাল্গুন, প্রভাতী, বনশ্রী, আজমেরি, বিকল্প, স্বকল্প, উইনার, দিশারী, বেঙ্গল, তরঙ্গ প্লাস, বেলালসহ বিভিন্ন কোম্পানির বাসগুলো কম দূরত্বের যাত্রার জন্য বেশি দূরত্বের টিকিট দিয়ে ভাড়া আদায় করছে। এসব কোম্পানির বাসের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৭ টাকা ভাড়ার হার মানা হয় না।
যাত্রী ভোগান্তি চরমে : রাজধানীতে উত্তরা-আজিমপুর রুটে চলাচলকারী ফাল্গুন পরিবহন, বনশ্রী-মোহাম্মদপুর রুটের তরঙ্গ প্লাস, কুড়িল-আজিমপুর রুটের উইনারসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস যাত্রীরা জানান, অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও তারা বাদুরঝোলা হয়ে যাতায়াত করেন। বাস-মিনিবাসগুলো মেরামতেও কোনো টাকা খরচ করতে চায় না পরিবহন কোম্পানিগুলো। এসব ভাঙাচোরা বাসের দরজা-জানালায় লেগে জামা-প্যান্ট ছিঁড়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায় নিয়মিত। অনেক সময় যাত্রীদের শরীরের বিভিন্ন অংশও ক্ষত বিক্ষত হয়।
জরিমানা হাস্যকর : মোটরযান আইন অনুযায়ী সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া বাসভাড়া না মানলে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড দিতে হয়। বাস-মালিকরা নির্ধারিত ভাড়া না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালত এই পরিমাণ অর্থ জরিমানা করতে পারেন। অথচ বাস মালিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে যে পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেন, সে তুলনায় জরিমানার অঙ্ক নগণ্য। এ জন্য গণপরিবহন খাতে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যও বন্ধ হয় না। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, শুধু রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত করে দুচারটি বাস ধরলেই সংকটের সমাধান হবে না। মালিকদের ধরে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
মালিকদের ধরা যায় না : সড়ক পরিবহনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর এক ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, মোটরযান আইন অনেক পুরনো বলে জরিমানার পরিমাণ কম। কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও শুধু জরিমানা করার বিষয়ে তিনি বলেন, বাড়তি ভাড়া আদায় হয় বাস মালিকদের নির্দেশে। দায়ী মূলত বাস মালিকরা। চালক বা পরিবহন শ্রমিকরা তা বাস্তবায়ন করেন শুধু। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানকালে মালিকদের পান না বলে চালকদেরই শাস্তি দেওয়া হয়। ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ-প্রাক্তন ডিটিসিবি) সাবেক অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক ড. এস এম সালেহ উদ্দিন কোম্পানি বাস প্রবর্তন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, নগরীর বিভিন্ন রুটের বাসগুলোকে কোম্পানির আওতায় আনা হয়েছিল সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণের জন্য।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে এসটিপি অনুসরণ করা হয়নি। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকায় ১৬৬টি কোম্পানির দরকার ছিল না। কোম্পানি হতে পারত ৫/৭টি। মেইন রুট হতো বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট)। বাকিগুলো সাব রুট হতো। কিন্তু সেভাবে এসটিপি অনুসরণ করা হয়নি। তিনি বলেন, মানুষ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না। যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে এ ক্ষেত্রে তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন।