সোমবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

ইকবাল খন্দকার

পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

গতকালের ঘটনা। মোহাম্মদপুর থেকে নিউমার্কেট যাওয়ার জন্য রিকশায় উঠেছি। রিকশা কিছুদূর এগুতেই প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেলাম। অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেলাম, পিকেটারদের খপ্পরে পড়েছি। নিশ্চয়ই পিকেটাররা রিকশাটা ধাক্কা দিয়ে খাদে ফেলার চেষ্টা করছে। আমি লাফিয়ে নামতে গিয়েও নামতে পারলাম না। চলন্ত রিকশা থেকে নামতে গেলে যদি পায়ের রগে টান লাগে! অথবা জুতার সোল খুলে যায়! একটু পরেই রিকশার গতি মন্থর হয়ে গেল। রিকশাওয়ালা পেছনে তাকাল। তার তাকানো দেখেই বুঝতে পারলাম আর যাই হোক অন্তত পিকেটারদের খপ্পরে পড়িনি। নিশ্চয়ই ছোটখাটো কোন সমস্যা হয়েছে। রিকশাওয়ালা পেছনে তাকিয়েই মাঝারি ওজনের একটা গালি দিল। তারপর প্রশ্ন ছুড়ল, হেই বেডা, কানা নাকি? দেইখ্যা চালাইতে পারস না? পেছন থেকে পাল্টা প্রশ্ন এলো, তুই বলদ নাকি? তুই ঠিকমতো চালাইতে পারস না? অাঁতকা বেরেক ধরলি ক্যান? এল্লাইগাই তো গুঁত্তা লাগছে। শুধু হলো দুই রিকশাওয়ালার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। কেউ নিজের দোষ স্বীকার করবে না, কীভাবে দোষটা অন্যের ঘাড়ে চাপানো যায়, সেই অপচেষ্টা। এই অপচেষ্টার বলি হলাম আমি। নিউমার্কেটে পৌঁছানোর কথা ছিল ১১টায়। গিয়ে পৌঁছলাম ১টায়। যার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলাম, দেরি করে যাওয়ার অপরাধে তার কাছ থেকে পেলাম রামঝাড়ি। দোষারোপের এই হলো কুফল। তারা হয়তো একজন আরেকজনের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টায় লিপ্ত থাকবে, আর ক্ষতিগস্ত হব আমি আপনি। এই 'তারা তারা' বলতে কারা কারা, সেটা না হয় ক্লিয়ার না-ই করলাম। আমার বাসার গেটে দুজন দারোয়ান পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করে। একদিন উপরতলার বাসায় চুরি হলো। প্রথমেই ধরা হলো দারোয়ানদের। প্রথম দারোয়ান বলল, চুরির ঘটনা যখন ঘটল, তখন নাকি তার ডিউটি ছিল না। ডিউটিতে সোলায়মান ছিল। সোলায়মানও ঠিক একই কথা বলল। তখন নাকি ডিউটিতে কাশেম আলী ছিল। বিল্ডিং কমিটির সভাপতি তাদের দায় এড়ানো এবং পরস্পরের প্রতি দোষারোপের এই পরিস্থিতি দেখে ক্ষেপে গেলেন। বললেন, তাহলে ঘটনার সময় কে ডিউটিতে ছিল? বল কে ছিল! কেউ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো উত্তর না দিলেও আসল কাহিনী ফাঁস হলো একদিন পর। ঘটনার সময় আসলে কেউই ডিউটিতে ছিল না। একজন নিজের ঘরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল, আরেকজন দোকানে গিয়েছিল রং চা খাওয়ার জন্য। পাঠক, দোষারোপের ফলাফল কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও হয়। এই ব্যতিক্রম ফলাফলের কারণে অন্যেরা একটু বেশিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমার এক বন্ধুর বাসায় দুইজন বুয়া। এই দুই বুয়ার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সারাদিনই ঝগড়াঝাটি করে। আর কোনো ঘটনা ঘটলে কীভাবে সেটার দায় অন্যজনের ঘাড়ে চাপানো যায়, সেই চেষ্টায় নিয়োজিত থাকে। একদিন বন্ধুর বাসায় গিয়ে শুনি দামি একটা শোপিস নাকি ভেঙে গেছে। বাসায় কোনো বাচ্চা নেই। তাই এটা বাচ্চাদের কাজ বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না। অবশ্যই বুয়ারা কেউ ভেঙেছে। বুয়াদের ধরা হলো। শুরু হয়ে গেল দোষারোপ। জরিনা প্রথম ধাক্কায়ই মর্জিনাকে দায়ী করে বসল। মর্জিনাও একই কাজ করল। একদিন পরের ঘটনা। বন্ধু ফোন করে বলল যে শোপিসটা গতকাল ভেঙেছিল, আজকে নাকি তার পাশের শোপিসটা ভাঙা পাওয়া গেছে। আমি চুপ থাকলাম। কারণ আমি ভালোই মর্মাহত হয়েছিলাম। বন্ধু বলল, কে ভেঙেছে ধরতে পেরেছি। আমি কৌতূহল নিয়ে বললাম, কে? বন্ধু বলল, তাহলে বিস্তারিতই বলি। আমরা তদন্ত করে জানতে পেরেছি প্রথম শোপিসটা ভেঙেছিল জরিনা। কিন্তু সে নিজে ভেঙেও কেন মর্জিনার ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করল, এই রাগে মর্জিনা দ্বিতীয় শোপিসটা ভেঙেছে। যাতে সেও জরিনার ওপর দোষ চাপাতে পারে। পাঠক, দোষ চাপানোর কালচার কতটা ভয়াবহ হতে পারে, নিশ্চয়ই ঠাওর করতে পেরেছেন। এবার চলে আসি এই লেখার প্রসঙ্গে। যদি এই লেখাটা আপনাদের ভালো না লাগে, তাহলে নিশ্চয়ই লেখকের ওপর দোষ চাপাবেন। লেখকও পাল্টা আপনাদের ঘাড়ে দোষ চাপাতেই পারে, ধুর, আপনারা আমার লেখার মাজেজাই ধরতে পারেননি।

মাথার ওপর দিয়ে তো যাবেই।

 

সর্বশেষ খবর