সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কে সাইরেন বাজায় রে

ইকবাল খন্দকার

কে সাইরেন বাজায় রে

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ আইডিয়া ও ডায়লগ : তানভীর আহমেদ

‘কে বাঁশি বাজায় রে’ প্রশ্ন করার যুগ শেষ। কারণ এখন সবাই জানে বাঁশি একজনই বাজায়। সে হচ্ছে নাইট গার্ড। এখন চলছে ‘কে সাইরেন বাজায় রে’ প্রশ্নের যুগ। তবে তাজ্জব হওয়ার মতো ব্যাপার হলো, প্রশ্নটির উত্তর সবাই জানেন। তবু প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয় না। কারণ জানের ভয় সবারই আছে। মুখ খুলতে গেলে যাদের নাম বেরিয়ে আসবে, তারা ‘রাঘব বোয়াল’-এর বংশধর তো! আমার এক বন্ধুর বাসা একদম রাস্তার পাশে। তার সঙ্গে সেদিন দেখা হতেই সে বলল, অবস্থা যা, তাতে মনে হচ্ছে আমার বাচ্চাদের জন্য আগামী বইমেলায় আর ভূতের বই কিনতে হবে না। আমি বললাম, দিন যত যাচ্ছে ততই মানুষ বই কেনা কমিয়ে দিচ্ছে। সেই হিসেবে তুই তোর বাচ্চাদের জন্য ভূতের বই কেনা বন্ধ করে দিতেই পারিস। তবে এটা কিন্তু ঠিক না। বই আমাদের বন্ধু। তাই ছোটবেলা থেকেই বইয়ের সঙ্গে আমাদের সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া উচিত। এবার বন্ধুর পক্ষ থেকে মৃদু ঝাড়ি খেলাম, বয়ান বন্ধ কর। সুযোগ পেলেই দুনিয়ার উপদেশমূলক বয়ান শুরু করে দিস। শোন, দিন দিন মানুষ বইকেনা কমিয়ে দিচ্ছে এই জন্য আমিও আগামীমেলায় বাচ্চাদের জন্য ভূতের বই কিনব না, ব্যাপার কিন্তু তা না। আসল ব্যাপার অন্য। ভেঙে বলছি। আমার বাচ্চাদের এতদিন ঘুম পড়াতাম ভূতের ছবি দেখিয়ে। ছবি দেখামাত্র ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলত। তারপর ঘুমিয়ে যেত। এ জন্য বেশি বেশি করে ভূতের ছবিওয়ালা বই কিনতাম। কিন্তু এখন আর ভূতের ছবি দেখিয়ে ভয় পাইয়ে ঘুম পাড়াতে হয় না। কারণ আমি যে এলাকায় থাকি, সেই এলাকায় কিছু বখাটে সাইরেন বাজিয়ে বাইক চালায়। সেই সাইরেনের আওয়াজ শুনলে আমার বাচ্চারা এত বেশি ভয় পেয়ে যায় যে, নগদে ঘুমিয়ে পড়ে।

আমার বন্ধু ব্যাপারটা যত মজা করেই বর্ণনা করুক না কেন, সাইরেনের বিষয়টা কিন্তু এত মজার নয়। বরং সাজার। এই সাইরেনের কারণে মানুষজন বিশেষ করে রাস্তার পাশের বাসিন্দারা যে কী পরিমাণ ভোগান্তি পোহাচ্ছে, বলে বোঝানো যাবে না। আমার এক চাচার বাসা থেকে ফোন এলো গতকাল। চাচার বড় ছেলে জানাল চাচা নাকি খাট থেকে পড়ে কোমরে ব্যথা পেয়েছেন। খবরটা শুনে আমি কিছুক্ষণ হেসে নিলাম। আমার ধারণা ছিল ওপাশ থেকে বুঝতে পারবে না আমি হাসছি। কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। ঠিকই বুঝে ফেলল এবং অসন্তোষ প্রকাশ করল আমি তোকে আব্বার কোমর ভাঙার খবর দিলাম আর তুই কিনা এটা নিয়ে মজা করছিস। এটা একদমই ঠিক না। আমার হাসির বাঁধ এবার ভেঙে গেল। অনেকক্ষণ ধরে খ্যাকখ্যাক করে হেসে বললাম, খাট থেকে পড়ে বাচ্চারা। চাচার মতো এমন বয়স্ক  মানুষ যে খাট থেকে পড়ে যায় এই প্রথম শুনলাম। চাচাতো ভাই বলল, কোন পরিস্থিতিতে একজন বয়স্ক  মানুষ খাট থেকে পড়ে যায়, সেটা তো তোকে বুঝতে হবে। আমি বললাম, শুনি তাহলে পরিস্থিতিটা। চাচাতো ভাই বলল, আব্বা ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ তিনি স্বপ্নে দেখলেন তার দিকে একটা ট্রেন তেড়ে আসছে বিকট আওয়াজে হর্ন বাজিয়ে। তিনি ট্রেনের নিচে কাটা পড়ার ভয়ে যেই এক সাইডে সরতে গেছেন, অমনি ধপাস করে পড়ে গেলেন খাট থেকে। আসলে তিনি স্বপ্নটা এমনি এমনি দেখেননি। বাসার পাশের রাস্তা দিয়ে তখন বিকট আওয়াজে হর্ন বাজিয়ে মোটরসাইকেল যাচ্ছিল তো!

বিকট আওয়াজওয়ালা এইসব মোটরসাইকেল আর গাড়িওয়ালাদের যন্ত্রণায় সত্যি সত্যিই ঢাকায় থাকা দায় হয়ে পড়েছে। তারা যেভাবে খুশি সেভাবে হর্ন বাজাবে, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে মাস্তি করবে।

তারা যেহেতু যা ইচ্ছা তাই করবে তাই আমাদের সামান্য একটা আবদার আছে। অনেকদিন তো বিকট হর্ন ঠেকাতে কানে তুলা দিয়ে নির্ঘুম রাত কাটালাম। এবার তাদের গাড়ির সাইলেন্সার খোলা পাইপে তুলা দিতে চাই। আমরা সেই পাইপের দুঃখ বুঝতে পারছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর