শিরোনাম
সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নাই ফেসবুক, নাই হোয়াটসঅ্যাপ নাইরে ভাইবার...

ইকবাল খন্দকার

নাই ফেসবুক, নাই হোয়াটসঅ্যাপ নাইরে ভাইবার...

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ, ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক বড় ভাই ফোন করলেন পরশু দিন। বললেন, সাড়ে চার বছর হয়ে গেল বিয়ে করলাম। অথচ এতদিন জানতামই না ব্যাপারটা। মাত্র দুই-তিন দিন হলো জানলাম। খুবই ভালো লাগছে। খুবই ভালো। আমি বললাম, সবই বুঝলাম। কিন্তু দুই-তিন দিন হলো কোন বিয়টা জানলেন, সেটা যদি একটু বলেন তাহলে খুবই ভালো হয়। না বললে তো আসলে বুঝতে পারব না কেন আপনার ভালো লাগছে। বড় ভাই বললেন, সবই বলব। আসলে আনন্দের পরিমাণটা বেশি তো। তাই সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। গুছিয়ে কথা বলতে পারছি না। হয়েছে কী, এত বছর হয়েছে তোর ভাবীর সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে, তবু আমি বুঝতে পারিনি তার কণ্ঠ যে এত মিষ্টি। আহা মিষ্টি কাকে বলে! কদিন হলো ফেসবুক বন্ধ হলো। ফেসবুক বন্ধ হওয়ার কারণে আমি তার মিষ্টি কণ্ঠের সঙ্গে পরিচিত হতে পারলাম। আমি বললাম, ফেসবুক বন্ধ হওয়ার কারণে ভাবীর কণ্ঠের সঙ্গে আপনাকে পরিচিত হতে হবে কেন বুঝলাম না। ভাবীর কথা শুনলেই তো বুঝে ফেলার কথা। বড় ভাই বললেন, বোকার মতো কথা বলিস না তো! তোর ভাবীর কথা শুনে আমার আরও আগেই বুঝে ফেলা উচিত ছিল যে তার কণ্ঠ মিষ্টি। মানলাম তোর যুক্তি। কিন্তু সে তো আমার সঙ্গে কথা বলতে হবে, নাকি! কথা না বললে কারও কণ্ঠ বোঝা যায়? আরে এতদিন তো সে আমার সঙ্গে কোনো কথাই বলত না। মরিচ-পিয়াজ আনতে হলে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে লিখে দিত। আর মার্কেটে যাওয়ার পরিকল্পনা করলে স্ট্যাটাস দিত, অমুক মার্কেটে যাচ্ছি। এমনকি খাওয়ার সময় হলে ‘খেতে আসো’ কথাটাও মুখে বলত না। হয় মেসেঞ্জারে লিখত, না হয় আমার কোনো স্ট্যাটাসের নিচে কমেন্ট হিসেবে লিখত। ফেসবুক বন্ধ হওয়ার পর এখন প্রত্যেকটা কথা মুখে বলে। বিশ্বাস কর, তার মিষ্টি কণ্ঠটা শুনলে কানে বড় আরাম লাগে। আমার এক বন্ধু কিছুদিন আগে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার হয়েছে। টিচার হওয়ার পর থেকেই সে খুব হতাশায় ভুগত। দেখা-সাক্ষাৎ হলেই বলত, ছাত্র-ছাত্রীরা আমার কথা শোনে না দোস্ত। আমি যখন ক্লাসে পড়াই, তখন তারা অন্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এত বড় বড় ছাত্র-ছাত্রী। তাদের বকাবকি করাটাও তো লজ্জার ব্যাপার। আমি বললাম, হতাশ হোস নে। চালিয়ে যা। দুই-তিন দিন আগে এই বন্ধুর সঙ্গে রাস্তায় দেখা। সে বলল, ছাত্রীদের ওপর আমার আর কোনো অভিমান নেই। এখন তারা আমার কথা শোনে। ক্লাস টাইমে অন্য কোনো কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে না। আমি বললাম, খুবই ভালো খবর। কিন্তু আমি একটা জিনিস জানতে চাই, আগে তারা কী নিয়ে ব্যস্ত থাকত। বন্ধু বলল, কেন, ফেসবুক! আমি হয়তো পড়াচ্ছি, তারা তখন পেছনের বেঞ্চে বসে ফেসবুকিং করছে। আরও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, গোপনে আমার ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে দিচ্ছিল। কদিন আগে যখন আমি পড়াতে পড়াতে টায়ার্ড হয়ে হাই তুলছিলাম, এক বাঁদর ছেলে আমার ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে দিল। বিশ্বাস করবি না, হাই তোলা অবস্থায় সেই ছবিতে আমার আলজিহা দেখা যাচ্ছিল। ছি ছি ছি। আমার এক চাচা বললেন, আমার ছেলেকে নিয়ে আমি খুবই টেনশনে থাকতাম। মাঝে মধ্যে তো মনে হতো টেনশনে আমার হার্টে প্রোবলেম দেখা দেয় কি না। যাক, ফেসবুক বন্ধ হওয়ার পর এখন আর সেই টেনশনটা নেই। বড় স্বস্তি পাচ্ছি। আমি বললাম, ছেলেকে নিয়ে কেন টেনশনে থাকতেন একটু জানতে পারি কি? চাচা বললেন, জানতে পারবে না কেন, অবশ্যই জানতে পারবে। আসলে আমার ছেলে সারা দিন ঘরের কোণায় বসে ফেসবুক দেখত তো! ঘরের কোণা থেকে বাইরে বের হতেই চাইত না। এই যে সারা দিন ঘরের কোণায় বসে থাকা, এ জন্য আমার ভয় ছিল সে ভিটামিন ডি-এর অভাবে ভুগবে না তো। এখন যেহেতু ফেসবুক নেই, সে ঘরের কোণা থেকে বের হয়ে রোদে-টোদে আসছে, অতএব ভিটামিন ডি-এর অভাবে ভোগার কোনো কারণ নেই। ও হ্যাঁ, সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি থাকে তুমি জানো তো। আমি বললাম, জি জানি। আমার এক ফেসবুক ফ্রেন্ডের স্ট্যাটাস পড়ে জেনেছিলাম তথ্যটা।

সর্বশেষ খবর