সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সতর্কতা বজায় রাখুন

ইকবাল খন্দকার

সতর্কতা বজায় রাখুন

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ, ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

যেহেতু ‘সাবধানের মার নেই’ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে, অতএব সতর্ক থাকা ভালো। শুধু ভালো নয়, জরুরিও বটে। তবে এ ধরনের একটা কথার প্রচলনও কিন্তু সমাজে আছে- অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। কথাটা সতর্কতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমার এক বড় ভাই যে কোনো ব্যাপারে যারপরনাই সতর্ক। কদিন আগে যখন তার সঙ্গে দেখা হলো, তিনি আমাকে বেশকিছু উপদেশ দিলেন। তার সব উপদেশই ছিল সতর্কতাকেন্দ্রিক। যেমন তিনি বলছিলেন, শীতকাল আর গরমকাল বলে কোনো কথা নেই। সব সিজনেই বাসায় আগুন লাগতে পারে। এ জন্য প্রস্তুতি রাখাটাও অত্যাবশ্যক। বাসায় এমন একটা ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ওপর থেকে নেমে নিরাপদ দূরত্বে চলে যাওয়া যায়। সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, জানালার সঙ্গে একটা দড়ি বেঁধে নিচের দিকে ঝুলিয়ে রাখা। এতে হবে কী, আগুন লেগে গেলে যখন দরজা দিয়ে বের হওয়া যাবে না, সিঁড়ি বেয়ে নামা যাবে না, তখন দড়ি বেয়ে হুট করে নেমে যাওয়া যাবে। আমি বললাম, ভালো বুদ্ধি। বড় ভাই শুধু ভালো বুদ্ধি বলে দায়িত্ব শেষ করে বসে থাকলে হবে না। বুদ্ধি অনুযায়ী কাজও করতে হবে। আজকেই জানালায় একটা মোটা দড়ি বেঁধে নিচে ঝুলিয়ে রাখবি। আমি বড় ভাইয়ের কথার অবাধ্য হওয়ার সাহস পেলাম না। একটা দড়ি বাঁধলাম জানালায়। এরপরের ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। কে বা কারা জানি এই দড়ি দিয়ে বেয়ে উপরে উঠে জানালার পাশে মোবাইল, ঘড়ি, ক্যামেরা, পারফিউমসহ যা যা পেয়েছে, সব নিয়ে ভেগেছে। আমি অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে বড় ভাইকে ফোন দিলাম। বললাম, আপনার কথামতো অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে গিয়েই আমার এই দশা হলো। এখন আমার ক্ষতিপূরণ দেন। বড় ভাই বললেন, তোর কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। মোবাইলের নেটওয়ার্কটা এত ডিস্টার্ব করছে। অন্য সময় কথা বলব, ঠিক আছে? আমার এক বন্ধু সাইজে নরমাল মানুষের চেয়ে বেশ কয়েক ইঞ্চি লম্বা। সে আগে গ্রামে থাকত, তাই মাঝেমধ্যে গাছের ডালে বাড়ি খাওয়া ছাড়া লম্বার কারণে আর বিশেষ কোনো সমস্যা হতো না। কিন্তু যখন সে শহরে এলো, গুরুতর সমস্যা হতে লাগল। একদিন যখন ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তারে তার মাথা বাড়ি খেল, সে টেনশনে পড়ে গেল। আমরা তাকে বোঝালাম, একটু সাবধানে চলাফেরা করবি। বিদ্যুতের তার দেখলে মাথা নিচু করে হাঁটবি। আমাদের এই কথার পর সে এত বেশি সতর্ক হয়ে গেল যে, বাড়াবাড়ি পর্যায়ের সতর্কতা যাকে বলে আরকি। আমরা বলেছিলাম, বিদ্যুতের তার দেখলে যেন মাথা নিচু করে, অথচ সে সবসময়ই মাথা নিচু করে হাঁটতে লাগল। তার ভয়, সবসময় মাথা নিচু না রাখলে কখন না আবার মাথা তারে লেগে যায়। এই অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে গিয়ে এখন সে পড়েছে মহাবিপদে। ডাক্তার নাকি বলেছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে আপনি ঘাড় সোজা করে হাঁটেননি। এ জন্য হয়েছে কী, আপনার ঘাড়ের রগ একটা বাঁকা হয়ে গেছে। অপারেশন না করলে সোজা নাও হতে পারে। ডাক্তারের এ কথা বাইরে জানাজানি হওয়ার পর কই তাকে সবাই একটু সহানুভূতি জানাবে, কিন্তু না, ঘাড়ের রগ বাঁকা ইস্যুতে সবাই নগদে তার নাম দিয়ে ফেলল- ঘাড়ত্যাড়া। আমি যে বিল্ডিংয়ে থাকি, সেই বিল্ডিংয়ের সভাপতি অতিমাত্রায় সতর্ক পাবলিক। সবকিছুতেই তার বাড়াবাড়ি রকমের সতর্কতা। পাঁচতলা এই বিল্ডিংয়ের সিঁড়িতে মোট পাঁচটা লাইট জ্বলার কথা। কিন্তু কথা থাকলেও তিনি জ্বলতে দিতে নারাজ। তার সতর্কতামূলক যুক্তিটা হচ্ছে, সারারাত লাইট জ্বললে লাইট ফিউজ হয়ে যেতে পারে। লাইটের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তিনি ঘোষণা দিলেন, রাত ১২টার পর লাইট জ্বলতে পারবে না। ১১টা ৫৯ মিনিটে সব লাইট বন্ধ করতে হবে। এক সপ্তাহ আগের ঘটনা। রাত সাড়ে ১২টার দিকে সভাপতি সাহেবকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো। ভর্তির কারণ তালাশ করতে গিয়ে জানতে পারলাম, অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে উষ্টা খেয়ে পড়ে চশমার ডাণ্ডি তো ভেঙেছেনই, একাধিক দাঁতও নাকি নড়বড়ে বানিয়ে ফেলেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর