সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রক্সি প্রেম

কাসাফাদ্দৌজা নোমান

একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রক্সি প্রেম

মেয়েটি ফেসবুকে ঢুকতে পারছে না। তার হাঁসফাঁস লাগছে। কী যেন কিছু একটা নেই। কতদিন হয়ে গেল। ফেসবুক নেই। মেয়েটির নাম রথি। তার একটা প্রেমিক আছে। তার নাম সুমন। ফেসবুক না থাকার কারণে সুমনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে না। এটা নিয়ে তার অভিমান। সুমনের সঙ্গে যদি সম্পর্ক ভেঙে যায় তাহলে এটার দায় কে নেবে? এই বিষয় নিয়ে একটা স্ট্যাটাস এসেছে মাথায়। ফেসবুক বন্ধ করার প্রতিবাদে যে একটা স্ট্যাটাস দেবে সেটাও করা যাচ্ছে না। রাগে চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করছে। ফোন নিয়ে সে সুমনকে ফোন দিল-

: হ্যালো

: হ্যালো কী? তুমি কোন মেয়ের সঙ্গে?

: ছিঃ মেয়ের সঙ্গে কেন থাকব?

- ছিঃ মানে? মেয়ের সঙ্গে থাকাকে তোমার ছিঃ মনে হয়। মেয়েদের তোমরা ভাবো কী? বল তো? এই তোমাদের মতো পুরুষের জন্য সমাজে আজ মেয়েরা আত্মসম্মান নিয়ে চলতে পারে না।

: ইয়ে, ইয়ে... আমি তা মিন করি নাই। মেয়ের সঙ্গে থাকা ছিঃ হবে কেন? এটা তো খুব ভালো লাগার বিষয়। ভালোই তো লাগে।

: মানে কী? তুমি অন্য মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটাও আবার ভালো লাগে। তুমি এমন করতে পারলা আমার সঙ্গে?

সুমন ফিসফিস করে বলল, এই শোন, শোন, আমি ক্লাসে, স্যার চলে এসেছেন। পরে কল দিব।

 

এই বলে ফোন কেটে দিল। কিন্তু সুমন আসলে ক্লাসে নেই, আবার আছেও। সে শারীরিকভাবে না থাকলে কাগজে আছে। কারণ তার প্রক্সি দিয়েছে তার বন্ধু। সে আছে অন্য জায়গায়। কোথায় আছে সেটা জানা যাবে শেষে। রথি মনে মনে বিড়বিড় করছে, যাতে ফেসবুকটা খুলে দেয়। ফেসবুক না খুললে সে মরেই যাবে। কতগুলো গান শুনেছে অথচ সে যে শুনেছে এটা কেউ জানে না। এভাবে জীবন চলে নাকি? আজকে দুপুরে মা টাঁকি মাছের মাথা দিয়ে পটোল ভেজেছে। একটা ফুড রিভিউ দেবে সেটাও করা যাচ্ছে না। এ জীবন আর তার ভালো লাগে না। সে তার বান্ধবী টুনিকে ফোন দেয়-

: হ্যালো টুনি, তুই কী করিসরে?

: আর কী করব। কিচ্ছু করার নাইরে। ক্লাস অফ। ফেসবুক অফ। কোথাও চলে যেতে ইচ্ছা করছে।

: হ্যাঁরে, আমার পরশু দিনের চেকইনটা দেখেছিস?

: কোনটারে?

: ওই যে শপিং করতে গিয়েছিলাম। অনেক কিছু কিনলাম রে। সারাদিন শপিং করেছি।

: নারে, আমি দেখিনি। শোন ফেসবুক কিন্তু ইউজ করা যায় কীভাবে যেন। দেখ চেষ্টা করে। এখন আমি রাখিরে, তোকে পরে ফোন দেব সোনা বেবী সুইটি।

: অকে বাবুটা!

তার আবার মন খারাপ হয়ে গেল। শপিং করার ব্যাপারটা বলবে ভেবেছিল। কিন্তু টুনি শুনলই না। টুনি এমনই।  উপরে উপরে অনেক ভাব দেখায়। সুমনকে ফোন দেয় আবার-

: এই সুমন শোনো, আমি শুনেছি কীভাবে যেন ফেসবুক ব্যবহার করা যায়। তুমি আমাকে শিখিয়ে দাও।

: হ্যাঁ, ফেসবুক ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ওইভাবে ব্যবহার করলে আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনী ধরে নিয়ে গেলে?

রথি ভয় পেয়ে যায়। সে বলে, থাক বাবা দরকার নেই। এমন আছি ভালো আছি।

তারপর রথির ফেসবুকহীন দিনগুলো কাটছে বিষণ্নতায়। ওইদিকে সুমনের প্রক্সি ব্যবহার করে লগইন করা আইডির ইনবক্সে রথির প্রক্সি দিচ্ছিল অন্য কেউ। প্রক্সি ক্লাস, প্রক্সি ফেসবুক এবং প্রক্সি প্রেম জীবনের জন্য ক্ষতিকর!

সর্বশেষ খবর