সোমবার, ২১ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
কলিকালে একটি সম্ভাব্য ‘আইসিসি প্রবাদ’

ঝোপ বুঝে অ্যাকশন অবৈধ ঘোষণা

ইকবাল খন্দকার

ঝোপ বুঝে অ্যাকশন অবৈধ ঘোষণা

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ, আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক বন্ধু অনেক দিন ধরেই অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত। খুব একটা পরিচিতি না পেলেও সে ইতিমধ্যে ডজনখানেক ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছে। পরশুদিন তার সঙ্গে রাস্তায় দেখা। কুশলবিনিময়ের পর বললাম, আয় কোথাও বসে চা খাই। বন্ধু বলল, ছবিতে অভিনয়ের কারণে লোকজন আমাকে চেনে। অতএব যেখানে সেখানে বসে আমি চা খেতে পারি না। আমি বললাম, বসে না খেতে পারলে চল দাঁড়িয়ে খাবি। বন্ধু আমার দিকে বিরক্তি সহকারে তাকিয়ে বলল, চা খেতে হবে না। এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলেই চলে যাই। আমি কথা চালিয়ে নেওয়ার স্বার্থে জিজ্ঞেস করলাম, তোর কাজকর্ম কেমন চলছে? বন্ধু বলল, ভালো না। অভিনয় ছেড়ে দেব ভাবছি। আমি চোখ কপালের কাছাকাছি তুলে বললাম, অভিনয় ছেড়ে দিবি! এতদূর এসে অভিনয় ছেড়ে দিলে এটা কেমন হয়? কেন, অভিনয় ছেড়ে দিবি কেন? কোনো সমস্যা? বন্ধু বলল, সমস্যা তো বটেই। তবে সমস্যাটা আমার না। সমস্যাটা পরিচালকের। আমি গলার স্বর নিচু করে বললাম, পরিচালকের আবার কী সমস্যা? টাকা-পয়সা নিয়ে ঝামেলা করে? বন্ধু বলল, না, সে ধরনের কিছু না। আমি আগ্রহের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, তাহলে ব্যাপারটা কী? বন্ধু বলল, আসলে আমার অভিনয় ছাড়তে চাওয়ার একটাই কারণ। সেটা হচ্ছে পরিচালকের ‘অ্যাকশন’ সমস্যা। এককথায় যদি বলি তাহলে বলব, আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি বা করছি তাদের প্রায় সবার অ্যাকশনই অবৈধ। বন্ধুর কথা শুনে আমার মুখ তো হাঁ। বলিস কী তুই! তুই তো অভিনয় করিস। ক্রিকেট খেলিস না। এই অভিনয়ের মধ্যে অবৈধ অ্যাকশনের প্রসঙ্গ কীভাবে আসে? বন্ধু বলল, আসলে হয়েছে কী, আমার যেসব পরিচালকের সঙ্গে কাজ করা হয়েছে তারা অনেকেই জানে না কোন জায়গায় অ্যাকশন বলতে হবে। উল্টাপাল্টা জায়গায় অ্যাকশন বলে আর ভিলেনরাও ঘুষি মেরে বসে আমি প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই। কদিন আগেই এক পরিচালকের অবৈধ অ্যাকশনের কারণে মানে টাইম না বুঝে অ্যাকশন না বলার কারণে ভিলেনের ঘুষিতে আমার একটা দাঁত নড়ে গেছে। আচ্ছা, তোর খোঁজে ভালো দাঁতের ডাক্তার আছে?

আমার এক বড় ভাই ফোন করলেন গভীর রাতে। আমি ধরেই নিলাম ভাই কোনো একটা বিপদে পড়ে ফোন করেছেন। তাই ফোন ধরেই জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কোনো সমস্যা না তো? বড় ভাই বললেন, সমস্যা মানে! মহাসমস্যা। আমি ঢোক গিলে বললাম, কী সমস্যা ভাই? ভাবি কি আপনার গায়ে আবার হাত তুলেছে? বড় ভাই বললেন, আরে হাত তুললে তো ভালোই ছিল। অন্তত দৌড় দিয়ে এদিক-ওদিকে চলে যেতে পারতাম। তার হাতের নাগালের বাইরে। কিন্তু সে আজকাল গায়ে হাত তোলে না। হাতের কাছে যা পায় তাই ছুড়ে মারে। ফলে আমি যে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব, তারও উপায় থাকে না। আমি বললাম, যেহেতু তিনি নিয়মিতই এটা ওটা ছুড়ে মারছে, অতএব এতদিনে তো আপনার অভ্যাস হয়ে যাওয়ার কথা। বিশেষ করে উনার ছোড়া বস্তু থেকে কীভাবে আত্মরক্ষা করা যায়, সেই পদ্ধতিটা আপনার জেনে যাওয়ার কথা। বড় ভাই রেগে বললেন, আরে রাখ তোর পদ্ধতি জানা! রেগে গিয়ে আজকাল সে যেসব অ্যাকশন নিচ্ছে, এসব অ্যাকশন একেবারেই অবৈধ। যেমন একটু আগে সে যখন আমার দিকে ফুলদানিটা ছুড়ল, তখন তার হাত কত ডিগ্রি বাঁকা হয়েছিল জানিস? বড় ভাই হাত বাঁকা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে টাকা শেষ করে ফেললেন মোবাইলের। তাই আর বাকিটা শোনা হলো না।

তবে শেষমেশ আরেকটা ঘটনা শোনা যেতে পারে। এক ছোটভাই বলল, ভাই, মেসে থাকি। কিন্তু বাড়িওয়ালা মানে মেসওয়ালার অবৈধ অ্যাকশনের কারণে জীবন ঝালাপালা। আমি বললাম, কী ধরনের অবৈধ অ্যাকশন? ছোট ভাই বলল, আর বলবেন না ভাই। ভাড়া সময়মতো না দিলেই ব্যাটা অ্যাকশনে চলে যায়। কী করে জানেন? টয়লেটে তালার লাগিয়ে দেয়। আপনিই বলেন, এই অ্যাকশন কোনোভাবে বৈধ হতে পারে?

সর্বশেষ খবর