সোমবার, ২০ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

মোবাইলবিহীন ছাত্রজীবন

ইকবাল খন্দকার

মোবাইলবিহীন ছাত্রজীবন

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ আইডিয়া : তানভীর আহমেদ

ভার্সিটি লাইফে প্রচণ্ড রাগী এক স্যার পেয়েছিলাম। ক্লাসে কোনো ছাত্রের মোবাইল বাজলেই হলো, সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাকে ক্লাস থেকে বের করে দিতেন। পরীক্ষার হলেও যদি কারও মোবাইল বাজত, তিনি তাকে হল থেকে বের করে দিতে কোনো প্রকার দ্বিধা করতেন না। ফলে এই স্যারের ক্লাসে ঢোকার আগে মোবাইল সাইলেন্ট করার ব্যাপারে সবাই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করত। কিন্তু একদিন ঘটে গেল অঘটন। স্যার খুব মনোযোগ দিয়ে একটা জিনিস বোঝাচ্ছেন। হঠাৎ আমার পাশের জনের মোবাইল বেজে উঠল। স্যার তো রেগেমেগে আগুন। আঙ্গুলের ইশারায় তিনি ছেলেটাকে দাঁড় করালেন। তবে আশ্চর্য হওয়ার মতো ব্যাপার হচ্ছে, ছেলেটার চেহারায় ভয়ের কোনো ছাপ ছিল না। এত বড় অপরাধ করার পরও ভয় পাচ্ছে না দেখে আমরাই ভয় পাচ্ছিলাম। কারণ, স্যার যদি অ্যাকশনে চলে যান, সর্বনাশ! স্যার, ছেলেটার দিকে লাল লাল চোখে তাকিয়ে বললেন, কী সমস্যা? ছেলেটা সাবলীলভাবে বলল, আমার কোনো সমস্যা না স্যার। আমার পেছনে যারা আছে, তাদের সমস্যা। তাদের সমস্যা যাতে দূর হয়, এই জন্যই আমি মোবাইল সাইলেন্ট করিনি। ছেলেটার এহেন উদ্ভট কথা শুনে স্যার অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কী সমস্যা তাদের? ছেলেটা বলল, স্যার, আপনি যখন পড়াচ্ছিলেন, আমার পেছনের তিনজন তখন ঘুমাচ্ছিল। আমার মোবাইলের রিংটোন অ্যালার্মের কাজ করেছে। দেখেন, এখন তাদের চোখে ঘুম নেই। ক্লাসে মোবাইল নিয়ে ঢোকার পক্ষে যারা এই ধরনের কোমরভাঙা যুক্তি দাঁড় করাতে চায়, তাদের জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে, অচিরেই নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ব্যবহারের ওপর। এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারেই কথা হচ্ছিল বন্ধুদের সঙ্গে। এক বন্ধু বলল, একেই বলে প্রকৃতির প্রতিশোধ। আমি বললাম, কিসের মধ্যে কী! এখানে প্রকৃতির প্রতিশোধ এলো কোত্থেকে! বন্ধু বলল, কোত্থেকে এসেছে, একটু খেয়াল করলেই টের পাবি। ঠিক আছে, তোর টের পাওয়ার দরকার নেই। আমিই রহস্য ফাঁস করে দিচ্ছি। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম, মানে প্রাইমারি বা হাইস্কুলে পড়তাম, তখন কি মোবাইল ব্যবহার করতে পারতাম? পারতাম না। কারণ, তখন আমাদের মোবাইল ছিল না। তাহলে এখনকার ছেলেমেয়েরা কেন মোবাইল নিয়ে ফুটানি করবে? কেন ধুমধাম সেলফি তুলবে? অতএব, মোবাইল ব্যবহারই নিষিদ্ধ। খুব ভালো, খুব ভালো। আমি মোবাইল ব্যবহার শুরু করেছিলাম মাস্টার্স পরীক্ষা দেওয়ার পর। অতএব, এই নিয়ম হোক, এখন থেকে মাস্টার্সের অ্যাডমিড কার্ড দেখিয়ে মোবাইল খরিদ করতে হবে। আমার এক বড় ভাই বললেন, ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ব্যবহারের ওপর যদি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তাহলে দুর্ঘটনার প্রবণতাও কমে যাবে বলে আমি মনে করি। আমি বললাম, মোবাইলে প্রেম করা, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা, এই টাইপের দুর্ঘটনার কথা বলছেন কি? বড় ভাই বললেন, আরে না, আমি কথা বলছি সেলফি সম্পর্কে।

আমি বললাম, তাহলে দুর্ঘটনার কথা আসছে কেন? সেলফি তো একটা নিরাপদ জিনিস? বড় ভাই বললেন, নিরাপদ জিনিস ঠিক আছে। কিন্তু ওইদিন আমাদের বাড়ির পাশের স্কুলে কী হয়েছিল জানিস? স্কুলের কয়েকজন ছেলেমেয়ে ক্লাসে দাঁড়িয়ে সেলফি স্টিক দিয়ে সেলফি তুলছিল। হঠাৎ সেলফি স্টিকটা লেগে যায় ফ্যানে। আর একটু হলে খবর ছিল। ছাত্রছাত্রীরা মোবাইল ব্যবহার না করলে সেলফি স্টিক ফ্যানে বাড়ি খাওয়ার ঘটনা একদমই ঘটবে না। বড় ভাই যখন কথাগুলো বলছিলেন, তখন তার সঙ্গে তার এক বন্ধুও ছিলেন। বড় ভাইয়ের কথা শেষ হতে না হতেই কথা বলে উঠলেন এই বন্ধু— ছাত্রছাত্রীদের হাত থেকে যদি মোবাইল জিনিসটা নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে অনেক ভুল বোঝাবুঝিরও অবসান ঘটবে। আমরা জানতে চাইলাম, কী রকম? বন্ধু বললেন, ওরা সারাদিনই ছবি তুলতে থাকে। সেটা সেলফি হোক আর নরমাল ছবিই হোক। কদিন আগে আমার ছোট ভাই এবং তার বন্ধুরা ম্যারাথন ছবি তুলছিল। আর আমার দাদি করলেন কী, কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন প্রায় আধঘণ্টা। কারণ, মোবাইলে ফ্ল্যাশ জ্বলে উঠতে দেখে তিনি ভেবেছিলেন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বজ্রপাত হবে। আসলে সেকেলে মানুষ তো!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর