সোমবার, ৬ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ছেলেপেলেদের ‘গ্যাং যন্ত্রণা’

ইকবাল খন্দকার

ছেলেপেলেদের ‘গ্যাং যন্ত্রণা’

কার্টুন : আয়ান, আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

সপ্তাহখানেক আগে আমার এক বন্ধুর ছোটভাইয়ের সঙ্গে গল্প করছিলাম। হঠাৎ সে বলে বসল, এই মহল্লায় বোধ হয় আর থাকা যাবে না। এখানে কেউ আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না। অন্য মহল্লায় চলে যেতে হবে। আমি অবাক হয়ে বললাম, তুমি ছোট মানুষ। এক মহল্লা ছেড়ে অন্য মহল্লায় চলে যাওয়ার তুমি কে? আর এই মহল্লায় কেউ তোমাকে পাত্তা দিচ্ছে না মানে? ছোটভাই বলল, আজকাল গ্যাংয়ের সদস্য না হলে কেউ পাত্তা দিতে চায় না। যেহেতু আমি এই মহল্লার কোনো গ্যাংয়ের সদস্য হতে পারিনি, তাই কারো কাছে আমার দুই আনার দামও নেই। আমি বললাম, কিন্তু তুমি গ্যাংয়ের সদস্য কেন হতে পারনি? ছোটভাই বলল, কীভাবে হব? আসন সীমিত। অলরেডি তাদের আসন পূর্ণ হয়ে গেছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি নতুন মহল্লায় গিয়ে নিজেই একটা গ্যাং গঠন করব। কিন্তু গ্যাংটার নাম কী দেব, খুঁজে পাচ্ছি না। আমি বললাম, এটা নিয়ে চিন্তা না করলেও চলবে। তোমরা তো বলতে গেলে শিশু। বাজারে যেহেতু শিশুদের সুন্দর নামের বই পাওয়া যায়, অতএব গ্যাংয়ের সুন্দর নামের বইও পাওয়া যাবে আশা রাখি। নীলক্ষেতে একটু খোঁজ লাগালেই হবে। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আজকাল ছোট ছোট ছেলেদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ নেই। সব মনোযোগ গ্যাংয়ের দিকে। এ অবস্থা কেন হলো বলেন তো! আমি বললাম, এমন অবস্থা হওয়ার একটাই কারণ। কারণটা হচ্ছে সেই কবিতা, ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে’। আমার কথা শুনে প্রতিবেশী অবাক হয়ে বললেন, এটা আপনি কী বলছেন! এমন ভালো অর্থের একটা কবিতাকে আপনি খারাপ অর্থে ব্যবহার করছেন? আমি বললাম, খারাপ অর্থে কি আর সাধে ব্যবহার করছি? শিশুর অন্তরে যদি শিশুর পিতা ঘুমিয়ে থাকে, সেটা অবশ্যই পজিটিভ। আর অন্তরের বাইরে যদি শিশুর পিতা ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে সেটা খুবই বিপজ্জনক। শুধু পিতা না, মাতারাও নাক ডেকে ঘুমান বলেই শিশুরা গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়ানোর সাহস পায়। মাতা-পিতা না ঘুমিয়ে মানে অসচেতন না থেকে একটু যদি চোখ কান খোলা রাখতেন, তাহলে শিশু বলেন আর কিশোরই বলেন, তাদের মধ্যে অন্তত গ্যাং কালচার তৈরি হতো না। সব শুনে প্রতিবেশী কেটে পড়লেন। আমিও কয়েক কদম সামনে এগোতেই দেখি মহল্লার কয়েকটা বাচ্চা ছেলে কী যেন পরামর্শ করছে। তারাও কোনো একটা গ্যাংয়ের সদস্য। আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কিসের পরামর্শ করা হচ্ছে? একটা ছেলে দায়সারা হাসি দিয়ে বলল, তেমন কিছু না। আমরা সবাই মিলে একটা সেলফি তুলব তো! তাই কীভাবে তুললে ভালো হয়, পরামর্শ করে নিচ্ছি। আমি আকাশ থেকে পড়ে বললাম, সেলফি তোলার জন্যও পরামর্শ! ছেলেটা বলল, আমাদের লিডার বলেছে যেকোনো কাজ করার আগে পরামর্শ করে নেওয়া ভালো। এতে কাজটা সুন্দর হয়। আমরা আশাবাদী আমাদের সেলফিটাও সুন্দর হবে।

একটা ঘটনা বলে লেখাটা শেষ করি। আমাদের পাশের পাড়ার হোমরাচোমড়া টাইপ একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার পাড়ার ছেলেরা দিন-দিন যে এভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে, আপনি তাদের ধরে ধরে কেন শাস্তি দেন না? একজনকে ধরে শাস্তি দিলেই তো বাকিরা ঠিক হয়ে যায়। মিস্টার হোমরাচোমড়া বরাবরের মতোই অজুহাত দাঁড় করালেন, আপনি যে তাদের ধরে শাস্তি দেওয়ার কথা বলছেন, ধরব কীভাবে? ওরা বাচ্চা ছেলে। ওদের ভুঁড়ি নেই। ওরা দৌড়াতে পারে। আমি তাদের দৌড়িয়ে ধরব কীভাবে? আমার ভুঁড়ি আছে দেখতে পাচ্ছেন না?

সর্বশেষ খবর