সোমবার, ১২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

এ কি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে

ইকবাল খন্দকার

এ কি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ♦ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক ভাবী অন্য যে কোনো ভাবীর মতোই শপিংপাগল। তবে তিনি শুধু শাড়ি, কসমেটিকস কিনেই ক্ষ্যান্ত থাকেন না। যতবার তিনি শপিংমলে যান, ততবারই কম বেশি স্বর্ণালঙ্কার কিনে তবেই বাসায় ফেরেন। সোনার প্রতি ভাবীর এই দুর্বার আকর্ষণ দেখে বিয়ের পর থেকেই নিজের মাথা তো না, টাক থাপড়িয়ে যাচ্ছেন ভাই। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। এবারের ঈদের সিজন আসতে না আসতেই টেনশনে ভাইয়ের দফারফা অবস্থা।  সোনার পেছনে পানির মতো টাকা খরচ হবে— এই আশঙ্কায় তিনি খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিলেন। ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে ভাবী বললেন—আমি তোমাকে একটা সুসংবাদ দিতে চাই। এই ঈদে আমি কোনো সোনা কিনব না। ভাই খুশির ধকল কিছুটা কাটিয়ে ওঠার পর বললেন, হঠাৎ এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণটা একটু জানতে চাচ্ছিলাম আরকি। ভাবী বললেন, না, তেমন কোনো কারণ নেই। চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আমার চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে তো! যতদিন না চেহারা আবার পুরোপুরি ঠিক হচ্ছে, ততদিন সোনা কেনা থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমি বললাম, চেহারা নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সোনা কেনা না কেনার সম্পর্ক কী? ভাবী বললেন, আজকাল সোনা চোরাচালানের বিষয়টা যেভাবে সামনে চলে এসেছে, আমি নিশ্চিত যেসব সোনা কিনি বা কিনতে যাই, সেগুলোও কেউ না কেউ চোরাচালানের মাধ্যমেই এনেছে। কিন্তু বড় চোররা তো আর ধরা পড়ে না, দেখা গেল আমার ব্যাগে সোনা বা স্বর্ণালঙ্কার পেয়ে আমাকে ধরে ফেলা হলো। পরদিন পত্রিকায়  সোনার সঙ্গে আমার ছবিও ছাপল। যেহেতু চিকনগুনিয়ার কারণে আমার চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে, এই অবস্থায় এই বাজে চেহারার ছবি যদি পত্রিকায় ছাপে, বিষয়টা কত ফালতু হবে চিন্তা করেছ?

আমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম, এই যে চোরাই পথে দেশে  সোনা আসছে, এটা কি বন্ধ করার কোনো উপায় নেই? বন্ধু বলল, সব কিছুই বন্ধ করার উপায় আছে। কিন্তু কী দরকার বন্ধ হওয়ার? সোনা ভালো জিনিস। ভালো জিনিস চোরাই পথে আসল নাকি ঐতিহাসিক পানিপথে আসল, সেটা বড় কথা নয়। আসছে, এটাই হচ্ছে বড় কথা। আমি বললাম, চোরাই পথে আসার কারণে দেশ যে ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এটা জানিস? বন্ধু হাসতে হাসতে বলল, সোনার ট্যাক্স না হলেও দেশের কোনো ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। আলু, পটোল, লালশাক ইত্যাদির ওপর যে ট্যাক্স বসানো হয়েছে, তাতে ট্যাক্সের জন্য কোনো বেটার কাছে আর ট্যাক্সের জন্য হাত পাততে হবে না। ট্যাক্সে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমার এক ছোটভাই বলল, এই যে চোরাই পথে দেশে  সোনা ঢুকছে, সরকারকে ট্যাক্স দেওয়া হচ্ছে না, এই অবস্থা থেকে আমরা কবে নাগাদ মুক্তি পেতে পারি? আমি বললাম, শিগগিরই মুক্তি পাব। কারণ, আমরা একটা খারাপ সময় অতিক্রম করছি। খারাপ সময় বেশিদিন থাকে না। ছোটভাই বলল, তাহলে তো সমস্যা। আমি অবাক হয়ে বললাম, খারাপ সময় কেটে গেলে সমস্যা কোথায়? ছোটভাই বলল, না মানে, আমার বিয়ে করতে একটু দেরি হবে তো! ততদিন যদি চোরাইপথে সোনার আমদানিটা অব্যাহত না থাকে, তাহলে বউয়ের জন্য সোনা কেনাটা একটু কঠিন হয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর