সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ছেলে ৯৯% ভালো

চরিত্র সংশোধনের এখনই সময়। ছেলে ৯৯% ভালো না বলে তখন সবাই বলবে, ছেলে ওয়ান পার্সেন্ট খারাপ

ইকবাল খন্দকার

ছেলে ৯৯% ভালো

ডায়ালগ ও আইডিয়া : তানভীর আহমেদ

ম্যালা বছর আগের কথা। আমাদের এলাকায় এক চোর ধরা পড়ল। এলাকার লোকজন তার ওপর গায়ের ঝাল মেটাল। মানে কিল, ঘুষি, চড়, থাপ্পড় এক কথায় যে যা পারে, সাধ্যমতো দিল। যাদের এসব দেওয়ার সাহস নেই, তারা মুখ খিঁচিয়ে অভিধানে উল্লেখ নেই, এমন সব শব্দ উচ্চারণ করল। এসব শব্দ এবং মারপিটে জব্দ হয়ে হঠাৎ ক্ষেপে গেল চোরটা। বলতে লাগল— এত হাউকাউয়ের কী আছে! আমার সামাইন্য চুরি করার খাসলত থাকতে পারে, কিন্তু আমি খারাপ বংশের ছেলে, এইটা কেউ বলতে পারব না। চোরের কথায় উপস্থিত সবাই এমন টাশকি খেল যে, বেশ কিছুক্ষণ কিল-ঘুষি বন্ধ রাখল। বোঝেন এবার অবস্থা! আপনারা হয়তো প্রশ্ন করে বসতে পারেন হঠাৎ এই স্মৃতিচারণের কারণ কী? কারণ একটাই— আমাদের কতিপয় ক্রিকেটারের সাম্প্রতিক এবং নিকট অতীতের ঘটনা-দুর্ঘটনা। তারা দেখতে ভালো, শুনতে ভালো, ক্রিকেট খেলে ভালো, খোঁজ নিলে দেখা যাবে বংশও ভালো। কিন্তু সামান্য চারিত্রিক সমস্যা আছে। প্রেম-মহব্বতের দিকে একটু বেশি নজর। হ্যাপি থাকতে গিয়ে আনহ্যাপি হয়ে যায়। আবার আরেকজনের কাণ্ড দেখুন, তার প্রেম-মহব্বত দেশের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। আরেকজন বিয়ে করে ফেলেছিলেন বালক বয়সেই। মানে বাল্যবিবাহ। কিন্তু বাংলা সিনেমায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবুঝ বয়সের বিয়ে টিকে গেলেও তারটা টেকেনি। কেন টেকেনি? কারণ, তিনি যৌতুকের লোভে পড়েছেন। ব্যস, ছাড়াছাড়ি। এর আগে আরেকজন গৃহকর্মীর ওপর অত্যাচার করেছিলেন। সবকিছুর সারমর্ম দাঁড়াল এই যে, এমনিতে তারা নাইন্টি নাইন পার্সেন্ট ভালো, এক পার্সেন্টে সমস্যা। তো যাদের খাসলতে সমস্যা, তাদের খাসলত সংশোধনীর উপায় কী? এই প্রশ্নের জবাবে আমার এক ছোট ভাই বলল, উপায় একটাই। চারিত্রিক সনদে পরিবর্তন আনতে হবে। এমনিতে সব চারিত্রিক সনদেরই ফরম্যাট এক। যে বাটপার, তার চারিত্রিক সনদেও লেখা থাকে ‘আমার জানামতে সে খুবই ভালো, আমি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি’, আবার যার চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র, তার সনদেও একই কথা। এখন থেকে যেটা করতে হবে, যারা নারীঘটিত অপরাধে অপরাধী হবে, তাদের সনদে লিখে দিতে হবে— ‘তার চরিত্রে বিস্তর সমস্যা। অলটাইম তাকে নজরদারিতে রাখুন’। আর নিয়ম করতে হবে— সবাই সবার চারিত্রিক সনদ গলায় ঝুলিয়ে রাখবে। তাতে সহজেই মানুষ তার চরিত্রের ব্যাপারে সতর্ক সংকেত পেয়ে যাবে এবং সতর্ক থাকতে পারবে। আমি বললাম, যদি কেউ চারিত্রিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়, তখন তার গলায় তো সনদ ঝোলানো কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কেউ যদি পেশাদার ক্রিকেটার হয় তখন গলায় এরকম একটা জিনিস ঝুলিয়ে রান নেওয়া, বোলিং করা সমস্যা না? ছোট ভাই বলল, তাহলে তাদের গলায় ঝোলানো দরকার নেই। মাঠে স্কোর বোর্ড থাকে না? এই স্কোর বোর্ডে লিখে দিলেই হবে, ‘উনার চরিত্রে সমস্যা, উনি অতটা সিম ব্যবহার করেন, উনি সম্প্রতি বউ পিটিয়েছেন...’ ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার এক বন্ধু বলল, খেলায় ভালো করার জন্য কেউ বোলিং কোচ, কেউ ব্যাটিং কোচ রাখে। কিন্তু চরিত্র ঠিক রাখার জন্য কোনো কোচ রাখা হয়নি। সেদিন একজন কথায় কথায় বলল, যাদের স্বভাবে সমস্যা, তারা কখনোই ভালো হবে না। ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন আর ছয় বছরেরই দেন, আবার যখন ফিরে আসবে, আবার একই সমস্যা দেখা দেবে। কথায় আছে না, কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না। এবার পাশ থেকে একজন বলে উঠল, আজকাল কয়লা ধুইলে ময়লা না গেলেও স্বয়ং কয়লাই গায়েব হয়ে যায়। অতএব আশা করা যায়, যাদের স্বভাবে সমস্যা, তারাও এক দিন তাদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে আউট হয়ে যাবে। সুতরাং চরিত্র সংশোধনের এখনই সময়। নইলে সবাই বলবে, ছেলে ওয়ান পার্সেন্ট খারাপ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর