শিরোনাম
সোমবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাণিজ্য মেলায় যাই রে...

ইকবাল খন্দকার

বাণিজ্য মেলায় যাই রে...

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

সকালে ঘুম ভাঙল আমার এক ছোট ভাইয়ের ফোনে। চরম বিরক্ত হয়ে ঘুমঘুম চোখে জিজ্ঞেস করলাম, আমার আরামের ঘুমের বারোটা বাজানোর কারণ কী? ছোট ভাই বলল, আর বলবেন না ভাই। নিজে খুব অশান্তিতে আছি তো! তাই কেউ আরামে থাকলে কলিজায় সয় না। মন চায় খালি ডিস্টার্ব করি, খালি ডিস্টার্ব করি। তার কথা শুনে আমার মেজাজ বিগড়ে গেলে বেশ গরম গরম কিছু কথা শুনিয়ে দিলাম। ছোট ভাই বলল, এত রাগ করেন কেন ভাই? রাগ করার তো কিছু নেই। তবু যদি রাগ উঠেই থাকে, একটু নামিয়ে আমার কথাটা শোনেন কেন আমি অশান্তিতে আছি। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে রাগ খানিকটা নামিয়ে জানতে চাইলাম অশান্তিতে থাকার কারণ। ছোট ভাই বলল, একটাই কারণ, বাণিজ্য মেলা। আমার রাগ আবার উঠে গেল। বললাম, তুই বিয়ে শাদি কিছু করিসনি। ঘরে বউ নেই। তাহলে বাণিজ্য মেলা নিয়ে তোর অশান্তিতে থাকার কারণ কীরে? ছোট ভাই বলল, বউ নেই বলেই তো বউ আনার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলাম। কিন্তু এই এক বাণিজ্য মেলা দিয়ে আমার বিয়ে করার প্ল্যানটাই পুরো বাতিল করে দিল। আমি বললাম, কী রকম? ছোট ভাই বলল, কী রকম আবার। আমি যাকে বউ হিসেবে পছন্দ করেছিলাম, সে কী শর্ত দিয়েছে জানেন? বলেছে দুই হাতে ৫০ কেজি ৫০ কেজি ওজনের দুইটা পাথর নিয়ে পুরো মেলা কমপক্ষে ১০ বার চক্কর দিতে হবে। যদি ঠিকঠাক চক্কর দিয়ে আসতে পারি, তাহলেই কেবল সে নিশ্চিত হবে বিয়ের পর বউয়ের ব্যাগ নিয়ে বাণিজ্য মেলায় আমি হাসিমুখে ঘুরতে পারব। এখন আমি যদি শর্তে রাজি না হই, তাহলে বিয়ে বাতিল। কী করি বলেন তো? আমি বললাম, এই বছর আর তো বিয়ে করার দরকার নেই। এক কাজ কর, প্রাকটিস হিসেবে তুই আমার বাসার বাজার টাজার কর। ব্যাগ ট্যাগ টান। এতে তোর যে যোগ্যতা তৈরি হবে, আমি নিশ্চিত আগামী বছর তোর বিয়ে আর কেউ ঠেকাতে পারবে না। ছো টভাই কিছু না বলে লাইন কেটে দিল। আমি বের হয়ে গেলাম মোড়ের দিকে। এরমধ্যে এক ভাবীর সঙ্গে দেখা। জিজ্ঞেস করলাম, কী ব্যাপার ভাবী? বাণিজ্য মেলায় না গিয়ে এদিকে ঘোরাফেরা করছেন যে? ভাবী আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন, থানায় যাচ্ছি। আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, থানায় কেন? ভাবী বললেন, আসলে হয়েছে কী, আমি আপনার ভাইকে রাতে একবার শুধু বলেছিলাম আজকে বাণিজ্য মেলায় যাব। ব্যস, সকাল থেকেই নিখোঁজ। তাই এখানে আসা। যদি তারা কোনো খোঁজ দিতে পারে। আর যদি না পারে তাহলে পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি ছাপতে হবে। আমি বললাম, হারানো বিজ্ঞপ্তিতে কাজ হবে বলে মনে হয় না। তবে কাজ হতে পারে, যদি বিজ্ঞপ্তির কোনা-কাঞ্চিতে লিখে দিতে পারেন, ‘তুমি ফিরে আসো। আমি শপথ করিতেছি যে, আর কোনোদিন তোমাকে বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার কথা বলব না।’ আমার এক বন্ধু জীবনেও সোজা কোনো কাজ করে না। সব কাজ উল্টাপাল্টা। সেদিন তাকে বললাম, উল্টাপাল্টা জীবন আর কত? এবার একটু সোজা হ। বন্ধু বলল, তোর কথার সঙ্গে আমার শতভাগ সহমত। আমিও চাই উল্টাপাল্টা জীবন ছেড়ে একটু সোজা জীবনে আসতে। এ জন্যই রোজ বাণিজ্য মেলায় যাই। এবার আমার অবাক হওয়ার পালা, সোজা জীবনে আসার জন্য বাণিজ্য মেলায় যেতে হবে কেন? বন্ধু বলল, উল্টাপাল্টা জীবন মানেই তো বেলাইন। তো আমি যদি বেলাইন ছেড়ে লাইনে আসতে চাই আমাকে বাণিজ্য মেলায় যেতে হবে না? তুই জানিস কত লম্বা লাইন হয় বাণিজ্য মেলায়?

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আমার কিন্তু বাণিজ্য মেলা খুবই ভালো লাগে। পারলে আমি রোজই যাই। আমি বললাম, আপনি একটা বিরাট আকারের ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি। কেন জানেন? কারণ, পুরুষ মানুষেরা কেবল বাণিজ্য মেলার বদনামই করে। অথচ আপনি কী সুন্দর প্রশংসা করে দিলেন। আপনার নাকি বাণিজ্য মেলায় যেতে ভালো লাগে। বাহ! বাহ! প্রতিবেশী বললেন, ভাইরে, যা ভাবছেন, তা না। আমার বাণিজ্য মেলায় যেতে ভালো লাগে অন্য কারণে। জুতা কিনেছিলাম এক জোড়া। দোকানদার বলেছে এক বছরের আগে যদি এই জুতায় কোনো সমস্যা দেখা দেয়, সে বদলায়া দিব। আমি মেলায় গিয়ে রোজ প্রচুর হাঁটি। যাতে জুতাগুলো ছেঁড়া সম্ভব হয় আর নতুন এক জোড়া মাগনা পাওয়া যায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর