সোমবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মফিজ ভাইয়ের কনে দেখা

রুহুল আমিন রাকিব

মফিজ ভাইয়ের কনে দেখা

অনেক দিন পরে মফিজ ভাই গ্রামের বাড়িতে এসেছেন। বয়স ৩০ পেড়িয়ে গেলেও বেচারার কপালে বউ জোটেনি। তার সমবয়সী বন্ধুরা সবাই বিয়ে করছে অনেক আগে।

এমনকি তার থেকে চার বছরের ছোট চাচাতো ভাইও বিয়ে করছে। তার সন্তান  যখন মফিজকে বড় আব্বু বলে ডাকে, লজ্জায় কচু গাছের সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করতে মন চায়। এবার মফিজ ভাই ঠিক করছেন যে করেই হোক এই শীতে তার একটা বউ চাই! আমাদের আশপাশে এমন  কোনো গ্রাম বাদ নেই যেখানে বিয়ের জন্য মেয়ের খোঁজ করেননি। তার বিয়ের কনে খুঁজে খুঁজে কয়েক ডজন ঘটক তাদের জুতো ছিঁড়ে ফেলেছে। তবে মফিজ ভাই এতো সহজে হেরে যাওয়ার পাত্র নন! মনে মনে বলেন, একবার না পারিলে দেখ শতবার। যে করেই হোক এই ছুটিতে তার বিয়ে করা চাই চাই। অফিস থেকে অনেক দিনের ছুটি নিয়ে এসেছে। মফিজ ভাই বাড়িতে এসে মানিক ঘটককে ধরল। সব শুনে মানিক ঘটক রাজি হলো। কথামতো মেয়ে দেখতে জেলা শহরের এক বাড়িতে গেল। মফিজ ভাই গ্রামে এসে অনেক শখ করে একটা নতুন বাইসাইকেল কিনেছে। ওই বাইসাইকেল সঙ্গে নিয়ে মেয়ে দেখতে গিয়েছেন।  আঙিনায় সাইকেল রেখে বাড়ির ভেতরে গিয়ে অনেক পদের সুস্বাদু খাবার খাওয়া শেষে, বিয়ের পাত্রী দেখান হলো। কনের মেকআপ দেখেই মফিজ ভাই ভয়ে দরদর করে ঘামতে শুরু করলেন। কোনোরকমে শার্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে পাঁচশ টাকার নোট মেয়ের হাতে ধরিয়ে দিয়েই দৌড় দিলেন। মানিক ঘটকও চলে এলো। বাইরে এসেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল মফিজ ভাই। আশপাশে কোথাও সাইকেল নেই। সাইকেল গেল  কোথায়? সাত-পঁাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ল সাইকেলের তালা লক না করেই রেখেছিলেন। সাইকেল কই, সাইকেল কই বলে চেঁচামেচি করার আগেই টের পেলেন পেটের ভেতরে বজ্রপাতের শব্দ শোনা যেতে থাকল। পেটের ভেতরে যেন সাত নম্বর মহা-বিপদ সংকেত শুরু হয়ে গেছে। তারপর কী হলো সেটা না জানাই ভালো। এরপর  কেটে গেল অনেক দিন। মফিজ ভাই সুস্থ হয়েছে ঠিকই তবে আজও রাস্তা-ঘাটে একা একা চলেন আর বিড়বিড় করে বলেন, প্রয়োজনে ব্যাচেলর গ্রুপের সভাপতি পদটা আজীবন নিজের দখলে রাখব। তবুও জীবনে আর বিয়ের নাম মুখে আনব না। বিয়ের কথা মনে হলেই এখনো মফিজ ভাইয়ের পেটে সাত নম্বর বিপদ সংকেত শুরু হয়ে যায়।

-সফিপুর, গাজীপুর

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর