শিরোনাম
সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মেলা শেষে ম্যালা বই

ইকবাল খন্দকার

মেলা শেষে ম্যালা বই

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক বড়ভাইকে ফোন দিলাম জরুরি একটা কাজে। বড়ভাইয়ের কথা কাটাকাটা করে আসছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ভাই, এভাবে কথা বলছেন কেন? আর আপনি আছেন কোথায়? নেটওয়ার্ক তো খুব সমস্যা করছে। বড়ভাই বললেন, আর বলিস না। খুব সমস্যায় আছি। টয়লেটের চেয়েও ছোট একটা রুমে বন্দী আছি বলতে পারিস। এখানে এইটুকু নেটওয়ার্ক যে পাচ্ছি, এটাই বেশি। আমি বললাম, এটা আপনি কী বলেন? টয়লেটের মতো ছোট রুমে বন্দী থাকবেন কেন? বড়ভাই বললেন, অপরাধ করেছিলাম রে ছোটভাই। অপরাধ করলে তো বন্দী থাকতেই হবে। আমি অবাক হয়ে বললাম, অপরাধ! কিসের অপরাধ বলেন তো? বড়ভাই বললেন, অপরাধটা হচ্ছে, বই বের করেছিলাম। তখন প্রকাশককে বলেছিলাম কয়েক হাজার বিক্রি হবে। অথচ এখন দশ কপিও বিক্রি হয়নি। প্রকাশক আমাকে হুমকি দিয়েছে আমি যেহেতু তার আর্থিক ক্ষতি করেছি, অতএব সে আমার বারোটা বাজাবে সেটাই আমার ধারণা। যে কারণে আমি আত্মগোপনে আছি। আমি বললাম, আপনি কোনো চিন্তাই করবেন না। বারোটা বাজানোর চেষ্টা করা হলে বারোটা বেজে যান। লেখকদের আত্মগোপনে থাকায় কোনো সমস্যাই নেই। বরং লাভ বেশি। কারণ, লুকিয়ে থেকে প্রচুর সময় পাবেন। বসে বসে লিখে ফেলবেন বড়সড় একটা বই।

আমার পরিচিত এক প্রকাশকের সঙ্গে দেখা বইমেলায়। জিজ্ঞেস করলাম, এবার বিক্রি কেমন? প্রকাশক হাসলেন। এমনভাবে হাসলেন, যেন কেউ তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলছে, হাস বেটা! নইলে ডাইরেক্ট গুলি করে দেব।

আমি বললাম, কী হয়েছে ভাই? কোনো সমস্যা? বেচাবিক্রি ভালো না? প্রকাশক বললেন, ভাইরে, বেচাবিক্রি তো পরে। আমি তো স্টলেই ঢুকতে পারছি না গত দুই দিন ধরে। আমি বললাম, স্টলে ঢুকতে পারছেন না মানে? স্টলে ঢুকতে সমস্যা কোথায়? প্রকাশক বললেন, হয়েছে কী, অখাদ্য-কুখাদ্য লেখনেওয়ালা লেখকদের অনুরোধ রাখতে গিয়ে এত বেশি বই প্রকাশ করে ফেলেছি যে, আর সেসব বই বিক্রি না হওয়ার কারণে বইয়ের ভারে স্টলে এত চাপ বেড়ে গেছে যে, দুই দিন আগে হঠাৎ করে বইয়ের কয়েকটা তাক ভেঙে পড়ল। ব্যস, স্টলে ঢোকার রাস্তা বন্ধ। আমি বললাম, খুবই দুঃখজনক। প্রকাশক বললেন, ভাইরে, দুঃখজনকের দেখেছেন কী! এই যে তাক ভেঙে পড়ে বইয়ের ক্ষতি হলো, বই নষ্ট হলো, এখন নাকি লেখক বলে বেড়াচ্ছে তার বইয়ের এডিশন শেষ। কী বিপদ বলেন দেখি! ‘ডাঙায় বাঘ, জলে কুমির’ অবস্থা না? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, শুনলাম অবিক্রীত বইগুলো নিয়ে নাকি লেখক-প্রকাশক উভয়েই যন্ত্রণায় আছেন। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় কী? পাশ থেকে এক ভদ্রলোক বলে উঠলেন, মুক্তির উপায় একটাই। একটু বাড়িয়ে ছাড় দেওয়া। আমি বললাম, জি, এমনিতে পঁচিশ পার্সেন্ট ছাড় দেওয়া হয়। ছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে না হয় চল্লিশ পার্সেন্ট করা হলো। তাতেই কি অবিক্রীত বই বিক্রি হয়ে যাবে? এবার ভদ্রলোক বললেন, ভাইরে, আমি এই ছাড়ের কথা বলিনি। আমি বলছিলাম এমনিতে কেজি হিসেবে বই বিক্রি হয় ১৪ টাকা দরে। ছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে যদি ৬ বা ৭ টাকায় নামানো যায়, তাহলে... না, বলছিলাম কি, আমার পরিচিত ঠোঙ্গার ব্যবসায়ী আছে তো!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর