সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

আপদ ও নিরাপদ ফেসবুকিং

ইকবাল খন্দকার

আপদ ও নিরাপদ ফেসবুকিং

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক বন্ধুর সঙ্গে মার্কেটে দেখা। জিজ্ঞাসা করলাম, কিরে, তোর মোবাইল বন্ধ পাই কেন? নাম্বার চেঞ্জ করেছিস নাকি? বন্ধু বলল, নাম্বার চেঞ্জ করি নাই রে দোস্ত। মোবাইল ব্যবহার করাই বাদ দিয়ে দিয়েছি। মাসখানেক ধরে মোবাইলহীন জীবনযাপন করছি। আমি বললাম, এটা কী করে সম্ভব? বন্ধু বলল, মোবাইল ছাড়া চলা যায় কি যায় না, সেটা তো আমাকে দেখেই বুঝতে পারছিস। আসলে মোবাইলটা আমি মূলত ব্যবহার করতাম ছবি তোলার জন্য। এখন ছবিও তোলার দরকার হয় না, মোবাইলেরও দরকার নেই। আমি বললাম, এটা কী ধরনের কথা! ছবি তোলার দরকার হবে না কেন? তুই না আগে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফেসবুকে ছবি আপলোড করতি? বন্ধু বলল, এই তো এসেছিস আসল কথায়। এখন ফেসবুকে ছবিও দিই না, তাই মোবাইল থাকারও প্রয়োজন মনে করি না। এখন কথা হচ্ছে,  ফেসবুকে কেন ছবি দিই না। ছবি না দেওয়ার একটাই কারণ, কদিন আগে বেদম মাইর খেয়েছিলাম। মানে বিশেষ একজনকে নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। তারপর সেই বিশেষ একজনের বড় ভাই আমার ছবি ধরে আমাকে খুঁজে বের করে কী ধোলাইটাই না দিল। এরপর থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ফেসবুকে আর নিজের ছবি দেব না। হয় বান্দরের ছবি দেব, না হয় কাউয়ার। কোনো অপরাধ করলে যাতে অপরাধের দায় বান্দর বা কাউয়ার ওপর বর্তায়। তো শেষ পর্যন্ত কথা সেটাই, যেহেতু বান্দর আর কাউয়ার ছবি ইন্টারনেটেই পাওয়া যায়, নতুন নতুন ছবি তোলার দরকার হয় না, তাই মোবাইলও আর চালাচ্ছি না। ঠিক আছে না? আমার এক বড় ভাইকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় আছেন? জবাব এলো, লালবাগে আছি। একটা জিনিস দেখছি। অনেকক্ষণ ধরেই দেখছি। বেশ মনে ধরেছে তো! আমি বললাম, জিনিসটা কী বলেন তো! বড় ভাই বললেন, লালবাগ কেল্লার গোপন যে সুড়ঙ্গটা আছে, সেটা। আমি বললাম, গোপন সুড়ঙ্গ পছন্দ হওয়ার কারণ কী? বড় ভাই বললেন, ভাবছি বাসায় এমন একটা সুড়ঙ্গ খনন করাব। কারণ, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কখন ফেঁসে যাই তার ঠিক আছে? তাই ভাবছি স্ট্যাটাসটা দিয়েই গোপন সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়ব। দেখি আমাকে পায় কোন বেটায়। আমি বললাম, কষ্ট করে সুড়ঙ্গ খনন করানোর কী দরকার? বড় সাইজের একটা ইঁদুর ধরে আনেন। ইঁদুর সাহেব যে গর্তটা করবেন, সেটায় ঢুকে পড়লেই চলবে। তবে ভয়ে আপনি ইঁদুরের গর্তে ঢুকে গেছেন, এই কথাটা কেমন যেন একটু শোনায়, এই আরকি। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, দিন দিন সব কিছুতেই খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কী যে করি! আমি বললাম, আমি যতদূর জানি চালের দাম নতুন করে বাড়েনি। তাহলে কিসের খরচ বাড়ার কথা বলছেন? প্রতিবেশী বললেন, ফেসবুকিংয়ের খরচ। আমি বললাম, ইন্টারনেটের খরচও বাড়েনি। অতএব, ফেসবুকিংয়ের খরচও তো বাড়ার কথা না। এবার প্রতিবেশী বললেন, নারে ভাই, বিষয়টা ইন্টারনেটের না। আগে ফেসবুকে যা ইচ্ছা তা লিখে স্ট্যাটাস দিতে পারতাম। কিন্তু আজকাল আর সেটা সম্ভব হয় না। গা বাঁচানোর জন্য স্ট্যাটাস দেওয়ার আগে অনেক কিছু চিন্তা করতে হয়। কিন্তু সব চিন্তা যেহেতু নিজের মাথায় খেলে না, তাই চিন্তার ভার অন্যদের ওপরেও ছাড়তে হয়। আর এটা করতে গিয়েই এখন বাড়তি খরচ হচ্ছে। আমি বললাম, একটু খোলাসা করেন। প্রতিবেশী খোলাসা করলেন, আসলে হয়েছে কী, আজকাল স্ট্যাটাস দেওয়ার আগে স্ট্যাটাসটা সম্পাদনা করিয়ে নিচ্ছি। এর জন্য যে সম্পাদনা পর্ষদ গঠন করেছি, তাতে আমার বাড়তি টাকা চলে যাচ্ছে। সম্পাদনা পর্ষদের বেতন বাবদ আরকি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর