সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

এই গরমে...

তানভীর আহমেদ

এই গরমে...

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর

আমার এক বন্ধুর ইলেকট্রনিক্সের দোকান আছে। ইদানীং ক্রেতা বেড়ে যাওয়ায় তার দেখাই পাওয়া যায় না। গরম বাড়ার কারণে এসির দোকানে ভিড় বাড়ছে। নিশ্চয়ই তার মানিব্যাগ বেশ হৃষ্টপুষ্ট। তাই তাকে খুঁজে মরি। হুট করে তার সঙ্গে দেখা হলো। কড়া রোদে দাঁড়িয়ে গরম গরম চায়ে চুমুক দিচ্ছিল। হু হা করতে করতে চা খাচ্ছে আর বলছে, বাপরে! কী গরম! চায়ের দোকানদার একটু আতঙ্কে তাকায়। কারণ রোদের তাপ যত বাড়ে তার চায়ের পানি তত গরম হওয়া চাই। দরদর করে ঘামছে সে। আমি বন্ধুকে বললাম, এই গরমে এত গরম চা গলা দিয়ে নামে কী করে? সে উত্তর দিল, লোহা দিয়ে লোহা কাটে জানিস তো? আমি ভেবে দেখলাম কথা ভুল হলেও সেটা বলা ঠিক হবে না। খামাখা কথা বাড়ানোর কিছু নেই। এরচেয়ে উলু বনে মুক্তা ছড়ালে কিছু লাভ হলেও হতে পারে। যেমন কেউ যদি উলু বনে মুক্তা ফেলে যায়, আরেকজন গিয়ে সেটা সংগ্রহ করতে পারে। সেই মুক্তা বিক্রি করে ধনীদের কাতারে নিজের নাম লেখাতে পারে। তারপর সুন্দরী দেখে একটা মেয়েকে বিয়ে করে গাড়ি-বাড়ি করে সুখী, সমৃদ্ধ জীবন গড়তে পারে। অনেক লাভ। যেহেতু আমার মুক্তা নেই, তাই মুক্তা ছড়ানোর ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম। বন্ধুকে বললাম, লোহা দিয়ে লোহা কাটে ঠিক আছে কিন্তু গরম দিয়ে গরম কাটে কীভাবে? গরম বাড়লে মানুষ ফ্যান ছাড়ে, এসি ছাড়ে। ঠাণ্ডা বাতাসে শরীর ঠাণ্ডা করে। তোর যুক্তি মতে এখন থেকে গরম লাগলে আগুন পোহানো দরকার। বন্ধু বলল, আয় তোকে বিষয়টা হাতে নাতে দেখাই। বিষয়টা দেখার জন্য আমরা লোকাল বাসে উঠলাম। কন্ডাক্টর যথারীতি সিটিং সার্ভিসে চিটিং করে বেশি ভাড়া দাবি করছে। সবাই নবাবপুত্র। উচ্চবাচ্চ্য না করে বেশি ভাড়া মিটিয়ে দিচ্ছে। আমিও নিজেকে নবাবপুত্র প্রমাণ করার জন্য বাড়তি ভাড়া দিতে যাচ্ছি, আমার বন্ধু খপ করে হাতটা ধরল। সে বেশি ভাড়া দেবে না। কন্ডাক্টরের সঙ্গে লাগল তার ক্যাচাল। ক্যাচাল বাড়তে বাড়তে দুজনই যথেষ্ট গরম হয়ে গেল। গরম তখন মারামারির দিকে। অবশেষে দুজনকেই ঠাণ্ডা করা হলো এই মর্মে যে, সবাই বেশি ভাড়া দিলেও সে দেবে না। এই গরমে এসি বিক্রি করে যার মানিব্যাগ তরতাজা হচ্ছে সে কেন নিজেকে নবাবপুত্র প্রমাণ করল না সে এক চিন্তার বিষয়। বাস থেকে নেমে বন্ধুটি বলল, দেখলি তো কীভাবে গরম দেখিয়ে কন্ডাক্টরের গরম কাটালাম? আমি কিছু বললাম না। কড়কড়া রোদে দুজনে থামলাম রিকশা নেব বলে। রিকশাওয়ালা যাবে কিনা সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া গেল না। তার যাওয়া না যাওয়া নির্ভর করছে ‘বিশ টাকা বাড়ায়া’ দেওয়ার ওপর। বন্ধুকে বললাম, গরমে গরম কাটে মেনে নিলাম। চল আগে। বিশ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নিজেকে নবাবপুত্র প্রমাণ করলাম। রিকশা করে এলাম বাজারে। বললাম, একটু বাজার করা দরকার। দুই সপ্তাহ ধরে ইলিশ ভেবে সরপুঁটি মাছ খাচ্ছি। মনকে আর ধোঁকা দিতে পারছি না। বাজারে গিয়ে দেখি, গরমের কিছুই দেখা হয়নি এতদিন। বাজার পুরাই গরম। দ্রব্যমূল্য আকাশ থেকে নামানোর চেষ্টা করছে ক্রেতারা। মাছ বিক্রেতারা আকাশ থেকে নামতে চাচ্ছেন না। ইলিশের কেজি এগারশ টাকা। বন্ধু বলল, কীরে নবাবগিরি শেষ? বললাম, হ্যাঁ। নবাবগিরি বিসর্জন দিয়ে আবারও ইলিশের মতো দেখতে সরপুঁটি কিনে বাজার ছাড়লাম। আজও সরপুঁটি? বাসায় কে কী বলবে এবং তার উত্তর কী হবে সেটা ভেবে ভেবে গলা শুকিয়ে গেল। দুজনে বাজার থেকে বের হয়ে দাঁড়ালাম রাস্তার পাশে লেবুপানি খাওয়ার জন্য। শরবত দাবি করা এই সম্ভাব্য জন্ডিস রোগের উপলক্ষ খেয়ে দুজনে গরম কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। এক চুমুক খেয়ে দেখি শরবতে চিনি কম লবণ বেশি। একটু গরম হয়ে শরবতওয়ালাকে কিছু বলতে যাব, বন্ধুটি বলল, থাক চেতিস না। চল, আমার দোকানে চল। এসির বাতাসে বসে একটু ঠাণ্ডা হ। বন্ধুর এসির দোকানে এসির ঠাণ্ডা বাতাসে সবেমাত্র শরীরটা জুড়িয়ে এসেছে। গরম কাটছে কাটছে ভাব। তখন সে বলল, কী খাবি বল? উত্তরের অপেক্ষা না করে দোকানের এক কর্মচারীকে বলল, ওই যা তো, চিনি বাড়িয়ে গরম গরম দুই কাপ চা নিয়ে আয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর