সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

গরীবের আমাদের সেলফি রোগ

ছেলেটাকে নিয়োগ দিয়েছি শুধু আমার ধারে কাছে থাকার জন্য। এক হাতে সেলফি তুলতে গিয়ে কোনো কারণে যদি হাত থেকে মোবাইলটা ফসকে পড়ে যায়, সে যেন খপাৎ করে ধরে ফেলতে পারে

ইকবাল খন্দকার

গরীবের আমাদের সেলফি রোগ

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার দূর-সম্পর্কের এক মামা দুঃখ করে বললেন, নারে ভাগ্নে, সেই দিন আর নেই। আহ! কী দিন আমরা পাড় করে এসেছি! মানুষকে একটা কথা বললেই মানুষ ভয় পেত। আর আমরা বাঘের মতো চলাফেরা করতাম। একদম বুক ফুলিয়ে। এখন সেই কথাটা বললে কেউ আর ভয় পায় না। কেন পাবে? ওই কথার কোনো ভ্যালু কি এখন আছে? আমি বললাম, একটু ভেঙে বললে ভালো হতো। মানে আপনি ঠিক কোন কথাটার ব্যাপারে বলছেন, একটু যদি খোলাসা করতেন আর কি। মামা বললেন, আগে আমরা কাউকে হুমকি দিতে গিয়ে বলতাম, জানিস আমার হাত কত ওপরে? ব্যস, সবাই ভয় পেয়ে যেত। আর এখন পায় না। আমি বললাম, না পাওয়ার কারণ কী? মামা বললেন, ভয় না পাওয়ার একটাই কারণ, এখন সবার হাতই ওপরে। হাত ওপরে না তুললে সেলফি ভালো আসে না তো, তাই। কেউ কেউ তো নিজের হাতকে শক্তিশালী... সরি, লম্বা করতে লাঠি পর্যন্ত ব্যবহার করে। বোঝ অবস্থা! আমার এক প্রতিবেশী বললেন, বর্তমান জামানা সেলফির জামানা। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে সেলফি তুলতে জানতেই হবে। নইলে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা। এই জন্য আমি একটা ছেলে নিয়োগ দিয়েছি। ছেলেটা অলটাইম আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকবে। আমি হাসতে হাসতে বললাম, এরকম বোকার কাজ কেউ করে? আরে সেলফি মানে হচ্ছে নিজের তোলা ছবি। অথচ আপনি একটা ছেলে নিয়োগ দিয়েছেন সেলফি তুলে দেওয়ার জন্য। আরেকজন তুলে দিলে সেটা কি সেলফি থাকে? প্রতিবেশী এবার ব্যঙ্গাত্মক হাসি দিয়ে বললেন, দুই লাইন বেশি বুঝে ফেললে তো সমস্যা। আমি ছেলে নিয়োগ দিয়েছি বলেছি। কিন্তু সেলফি তুলে দেওয়ার জন্য নিয়োগ দিয়েছি, তা তো বলিনি! আমি আমতা আমতা করে বললাম, জি, জি। আচ্ছা, ছেলেটাকে কেন নিয়োগ দিয়েছেন একটু বলা যাবে কি? প্রতিবেশী বললেন, দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য। আমি অবাক হয়ে বললাম, মানে কী! প্রতিবেশী বললেন, মানে হচ্ছে, সেলফি এক হাতে তোলার নিয়ম তো! তো এই নিয়ম মানতে গিয়ে এখন অবধি তিনটা মোবাইলের গ্লাস ভেঙেছি। হাতে থেকে পড়ে, পড়েই চুরমার। ছেলেটাকে নিয়োগ দিয়েছি শুধু আমার ধারে কাছে থাকার জন্য। এক হাতে সেলফি তুলতে গিয়ে কোনো কারণে যদি হাত থেকে মোবাইলটা ফসকে পড়ে যায়, সে যেন খপাৎ করে ধরে ফেলতে পারে। আমি এবার বেশ কিছু দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বললাম, বিষয় দাঁড়াল এই যে, সমস্যা যতই আসুক, সব সমাধান করতে হবে। তবু সেলফি তুলতে হবে। কারণ কবি বলেছেন, সেলফিহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে...।

এখন অবশ্য সেলফি না তুলে বেঁচে থাকাই কঠিন। আমার এক বন্ধুর সেলফি যন্ত্রণায় ফেসবুক জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। শুরুর দিকে সে দিনে দশ-বিশটা সেলফি দিত। এখন কয়টা দেয়, কে জানে। সারা দিন সারা রাত তার সেলফিতে ফেসবুক গরম থাকে। সমস্যা হচ্ছে, তাকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কমেন্ট বা লাইক না পেলে সে মোবাইলে কল দেয়। ঘরে এসে হাজির হয়। ‘দোস্ত, তুই কী রাগ করেছিস আমার ওপর। দোস্ত, মাইন্ড করছিস নাকি? জানি না, কিসের এত অভিমান তোর, আমি কি তোর পর হয়ে গেছি?’ আমি হ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকি। বন্ধু বলল, গত দুই ঘণ্টায় পঁচিশটি সেলফি দিলাম, একটাতেও তোর লাইক, কমেন্ট নেই। বেঁচে থাকতে এমন দিন দেখতে হবে জীবনেও ভাবিনি। আমি উত্তর খুঁজে পাই না। বলি, বন্ধু তুমি দিনে কয়টা সেলফি ফেসবুকে দাও? সে বলল, দুইশর মতো। কেন? আমি বললাম, না, মানে আমারও তো বেঁচে থাকা দরকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর