সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

হুজুগে পান্তা-ইলিশ

ইকবাল খন্দকার

হুজুগে পান্তা-ইলিশ

ডায়ালগ : তানভীর

সারা বছর আমরা বাঙালি-সাজ থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখলেও বছরের একটা দিন বাঙালি সাজে নিজেদের সাজিয়ে খুব আরাম পাই। বুঝতেই পারছেন কোন দিন? জি, একদম ঠিক ধরেছেন। পয়লা বৈশাখ। তো যেহেতু আমরা পয়লা বৈশাখে আমাদের বাঙালিত্ব জাহির করি, অতএব বাঙালির যে একটা বৈশিষ্ট্য আছে, সেটা কেন জাহির করব না? বলেন তো কোন বৈশিষ্ট্যটা? আরে বাপুরে, উত্তর দিতে এত গড়িমসি করছেন কেন? উত্তর তো খুব সহজ। বৈশিষ্ট্যটা হচ্ছে, হুজুগেপনা। তো পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে আমরা সবচেয়ে বেশি হুজুগেপনা করে থাকি পান্তা আর ইলিশ নিয়ে। এই হুজুগেপনা করতে গিয়ে নানারকম অঘটনও ঘটিয়ে বসি। দু-একটা অঘটনের উদাহরণ পেশ না করলে আপনারা বিশ^াসই করতে চাইবেন না। তাহলে শুরু করি। আমার এক ছোটভাই বলল, পয়লা বৈশাখ তো প্রায় চলেই এলো। এবারও ইলিশ খেতে গিয়ে একই ঘটনা ঘটে কিনা কে জানে! এবারও যদি সেই ঘটনা ঘটে, তাহলে লজ্জায় আর মুখ দেখানোর জো থাকবে না। আমি বললাম, কিসের কথা বলছিস, একটু বুঝিয়ে বলবি? ছোটভাই বলল, পয়লা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ না খেলে বাঙালিত্ব এমনকি সামাজিক মর্যাদা হুমকির মুখে পড়ে যেতে পারে, এই ভয়ে করলাম কী, গত বছর পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বেশ আয়োজন করে পান্তা-ইলিশ খেতে বসলাম। হঠাৎ অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে গেল। গলায় ইলিশের কাঁটা। একজন বলল বিড়ালের পা ধরলে গলার কাঁটা সরে। সিদ্ধান্ত নিলাম, তা করব। নিজের বাড়িতে বিড়াল ছিল না। যেই পাশের বাড়ির বিড়ালের পা ধরতে গেলাম, কামড় দিয়ে বসল। লোকজন ভয় দেখাল কুকুরের কামড়ের মতো বিড়ালের কামড়ও নাকি মারাত্মক। সুতরাং চৌদ্দটা ইনজেকশন না হোক, চৌদ্দর অর্ধেক সাতটা ইনজেকশন অবশ্যই নিতে হবে। নিলাম। বিশ^াস করবেন না, এখন পয়লা বৈশাখের নাম শুনলেই চোখে ইনজেকশনের সুঁই দেখতে থাকি। এ থেকে মুক্তির উপায় কী? আমি বললাম, মুক্তির কোনো দরকার নেই। আমি দোয়া করি সবাই যেন তোর মতো সুঁই দেখতে থাকে। এতে যদি ইলিশ নিয়ে হুজুগেপনা একটা কমে আরকি। আমার এক বড়ভাই বললেন, পান্তা-ইলিশ মাটির সানকিতেই খেতে হবে কেন? প্লাস্টিকের প্লেট বা ওয়ানটাইম প্লেটগুলো আছে না, সেগুলোতে খেলে হবে না? আমি বললাম, সবকিছুরই তো একটা নিয়ম আছে। আপনি এই নিয়মের পরিবর্তন কেন চাচ্ছেন বলেন তো? বড়ভাই বললেন, পান থেকে চুন খসলেই তোর ভাবী হাতের কাছে যা পায় তাই ছুড়ে মারে। পান্তা-ইলিশে সামান্য একটু হেরফের হলেই যে সে মাটির সানকি ছুড়ে মারবে, সেটা আমি দিব্যি কল্পনা করতে পারছি। চিন্তা কর, যদি আমার টাক মাথায় মাটির সানকি ছুড়ে মারে, কী দশাটা হবে? ওয়ানটাইম ইউজের প্লেটগুলো ছুড়ে মারলে ব্যথাটা একটু কম পেতাম আরকি। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, বই নিয়ে যেমন রিভিউ হয়, আজকাল নাকি পান্তা-ইলিশ নিয়েও রিভিউ হচ্ছে? বিষয়টা একটু বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেল না? এবার পাশ থেকে একজন বলে উঠল, সমস্যা কী? এত টাকা দিয়ে ইলিশ কিনবেন, সেটা নিয়ে একটু লেখালেখি না হলে চলে নাকি! তবে আমি বলি কী, যারা রিভিউ লিখবে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে। মানে তারা ইলিশ কীভাবে কিনল। এত টাকা কোথায় পেয়েছিল। রিভিউ দেখে দেখে নব্য কোটিপতিদের শনাক্ত করা সহজ হবে আশা করি। পাশের বাসার ভাবী বললেন, কী বিপদ দেখেন দেখি! আপনার ভাইকে ডাক্তার একটা পরামর্শ দিয়েছে। অথচ সে এই পরামর্শ মানতে চাচ্ছে না ইলিশের দোহাই দিয়ে। আমি বললাম, কী পরামর্শ বলেন তো? ভাবী বললেন, ডাক্তার বলেছিলেন লবণ না খেতে। লবণ খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে। আপনার ভাই বলে কী, ইলিশও তো লবণ খায়। যেহেতু লবণাক্ত পানিতে থাকে। তো কোনো ইলিশ কি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর