সোমবার, ১৩ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

চরম গরম

বললাম, ঠান্ডা বরফ আবার কী জিনিস। বরফ গরম থাকে নাকি? বন্ধু বলল, জি, আমি যত দোকানে খোঁজ নিয়েছি, সব দোকানের বরফই গরম

ইকবাল খন্দকার

চরম গরম

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার বাসার কাছেই নতুন একটা বিল্ডিং উঠেছে। গতকাল বাসায় ফেরার পথে দেখি সেই ভবনের মালিক তার ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ভাই, কোনো সমস্যা? ভদ্রলোক বললেন, সমস্যা তো বটেই। কোন দুঃখে কোটি কোটি টাকা খরচ করে এই বিল্ডিং বানাতে গেলাম? বিল্ডিং না বানিয়ে যদি আগের আমলের লোকজনের মতো একটা কাজ করে ফেলতাম, তাহলে এত গরম লাগত না। আমি অবাক হয়ে বললাম, আগের আমলের লোকজন এমনকি কাজ করেছে, যার কারণে তাদের গরম লাগত না? ভদ্রলোক বললেন, কেন, আদিমযুগের মানুষ কীভাবে চলত, কোথায় থাকত, কী পরত, আপনি জানেন না কিছু? আমি বুঝে ফেললাম ভদ্রলোক কী বলছেন বা বলতে চাচ্ছেন। ভদ্রলোক বললেন, এত বড় বিল্ডিং না বানিয়ে যদি আদিমযুগের মানুষের মতো একটা গুহা বানাতাম, তাহলে দেখতেন কত আরাম। আর কোট-টাই না পরে তাদের মতো গাছের ছাল বাকল পরতে পারলে তো আরাম আর আরাম। আমি বললাম, সব ঠিক আছে। কিন্তু গরম কমানোর জন্য গাছের ছাল-বাকল পরতে গেলে তো বিপদে পড়তেন। কারণ, ছাল-বাকলে পকেট থাকে না। আর পকেট না থাকলে মোবাইল কোথায় রাখতেন বলেন তো! আমার কথার জবাব না দিয়ে ভদ্রলোক তার ভবনে ঢুকে গেলেন। বুঝলাম বেচারার মেজাজ গরম হয়ে গেছে। আসলে মেজাজ গরম এখন আমাদের সবার। সারা দেশ যেখানে চুলার মতো গরম হয়ে আছে, সেখানে মেজাজ গরম হওয়াটা তো খুবই স্বাভাবিক। আমার এক ছোটভাই মেসে থাকে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম কীভাবে দিনকাল কাটছে। আমার প্রশ্ন শুনেই ছোটভাইয়ের মেজাজ চড়ে গেল। তাই সে জবাব দিল ব্যাঙ্গ করে, দিনকাল কীভাবে আর কাটবে। অতিশয় আরামে কাটছে। এত আরামে, মনে হচ্ছে এমন গরম আগে কেন পড়েনি। আমি তাকে অনুরোধ করলাম মেজাজ ঠান্ডা  করার জন্য। সে আমার অনুরোধ রাখল। তারপর বলল, যাই বলেন ভাই, গরম কিন্তু আমার সামান্য উপকারও করছে। আগে ছারপোকা খুব জালাত। এখন আর ছারপোকার                  জালাতন নেই। আমি অবাক হলাম। বলিস কী! গরমে তো ছারপোকা আরও পাগল হয়ে যায়। ছারপোকার জালাতন নেই মানে? ছোটভাই বলল, কথা সত্য ভাই। কারণ, সারারাতই ঘামি। আর এই ঘামে তোশক ভিজে টইটম্বুর হয়ে যায়। ফলে প্রতিরাতেই ডজন ডজন ছারপোকার সলিল সমাধি হয়। সলিল সমাধি বোঝেন তো? পানিতে ডুবে মরা। বাকিটা মিলিয়ে নেন। বন্ধুর কথা শেষ হতেই দেখি একটা ফোন এসেছে। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি আরেক বন্ধুর ফোন। জিজ্ঞেস করলাম, কী খবর? ওপাশ থেকে জানতে চাইল, ভালো বরফ পাওয়া যায় কোথায়। আমি বললাম, ভালো বরফ বলতে? বন্ধু বলল, না মানে ঠান্ডা  বরফ। আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। বললাম, ঠান্ডা বরফ আবার কী জিনিস। বরফ গরম থাকে নাকি? বন্ধু বলল, জি, আমি যত দোকানে খোঁজ নিয়েছি, সব দোকানের বরফই গরম। বিশ্বাস না হলে দেখে যা। আমি যাওয়ার সাহস পেলাম না। কারণ, যে এলাকায় বরফ গরম হয়ে যায়, সে এলাকায় আমি গেলে গলে শরবত হয়ে যাব না, তার গ্যারান্টি কী?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর