সোমবার, ৩ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

এবার ঈদযাত্রা

ইকবাল খন্দকার

এবার ঈদযাত্রা

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর

আমার এক বড়ভাইকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় আছেন, কী করছেন। বড়ভাই বললেন, আছি বাসায়ই। তবে গ্রামে যাব ঈদের ছুটি কাটাতে। আপাতত একটু টেনশনে আছি। আমি বললাম, ছুটি কাটাতে বাড়ি যাচ্ছেন, মন তো ফুরফুরে থাকার কথা, টেনশন কীসের? বড়ভাই বললেন, টেনশনটা আসলে খাট নিয়ে। খাটটা সঙ্গে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু ট্রাক পাচ্ছি না। তাই একটু টেনশন লাগছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, খাট সঙ্গে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন মানে? আপনি পাগল নাকি? বড়ভাই বললেন, আসলে হয়েছে কি, আশপাশের সব বাসা ফাঁকা হয়ে গেছে তো! তাই ভয় হচ্ছে, যদি খাটটা চুরি হয়ে যায়! অনেক দামি খাট তো! আমি বললাম, আপনার খাটটা কি আপনার ফ্ল্যাটের চেয়েও দামি? বড়ভাই যেন আকাশ থেকে পড়লেন, তুই বলছিস কি এসব! ফ্ল্যাটের দামের সঙ্গে খাটের দামের তুলনা হয়? আমি বললাম, আমি তো সেটাই বলছি। যেহেতু খাটের চেয়ে ফ্ল্যাট অনেক অনেক বেশি দামি, তাহলে এক কাজ করেন। ফ্ল্যাটটাও বড় সাইজের একটা ট্রাকে করে গ্রামে নিয়ে যান। এতে ফ্ল্যাটটাও চুরি হলো না, আবার যতদিন গ্রামে থাকলেন ততদিন মাটির ঘরে না থেকে ফ্ল্যাটেই থাকলেন। শুধু সুবিধাজনক একটা স্থানে স্থাপন করে নিতে পারলেই হয়। আমার কথায় বড়ভাই খানিকটা রাগান্বিত হলেন বলে মনে হলো। তাই কথা না বাড়িয়ে ফোন রেখে দিলাম। এরপর ফোনটা পকেটে রেখে হাঁটা শুরু করতেই দেখা হয়ে গেল এক প্রতিবেশীর সঙ্গে। জিজ্ঞেস করলাম ঈদ কোথায় করবেন। গ্রামে না ঢাকায়। প্রতিবেশী বললেন, ঢাকায়ই করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে গ্রামেই চলে যেতে হবে। কারণ, খুব ভয় করছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, কীসের ভয়? প্রতিবেশী বললেন, পুরো এলাকা ফাঁকা হয়ে গেছে। আমি যে বিল্ডিংয়ে থাকি এই বিল্ডিংয়ে একটা লোকও নেই। আমি বললাম, বুঝলাম। কিন্তু ভয়টা কীসের? প্রতিবেশী বললেন, আমি শুনেছি লোকজন না থাকলে নাকি ভূতেরা এসে ঘাড় মটকে দিয়ে চলে যায়। আমার এমনিতেই ঘাড়ে ব্যথা। যদি ভূত এসে... আমি প্রতিবেশীকে কথা শেষ করার সুযোগ না দিয়ে কেটে পড়লাম। এরপর কিছুদূর যেতেই এক ছোটভাইয়ের সঙ্গে দেখা। সে বাড়ি যাচ্ছিল। আমি তার বিশাল গাট্টিবোঁচকা দেখে হাসতে হাসতে বললাম, মনে হচ্ছে সারাজীবনের জন্য গ্রামে চলে যাচ্ছিস? আর ফিরবি না নাকি? ছোটভাই বলল, আমি যে সড়ক দিয়ে বাড়ি যাব সেই সড়কটা বেশ ভাঙাচুরা। এজন্য একটু ওজনদার গাট্টিবোঁচকা নিয়ে যাওয়াই সমীচীন মনে করছি। আমি বললাম, রাস্তা ভাঙাচুরা হলে তো মালসামানা যত কম নেওয়া যায় তত ভালো। ছোটভাই বলল, আপনি ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন না। বুঝিয়ে বলি। ব্যাপার হচ্ছে, রাস্তা ভাঙা হওয়ার কারণে গাড়ি খালি লাফাতে থাকে, খালি লাফাতে থাকে। আমার ধারণা, বেশি বেশি মালসামনা নিয়ে উঠলে গাড়ি আর লাফানোর সুযোগ পাবে না। আমি বললাম, তাহলে এক কাজ করিস, সঙ্গে পর্যাপ্ত তুলা নিয়ে উঠিস। ছোটভাই বলল, তুলা কেন? আমি বললাম, না মানে অধিক ওজনের কারণে তো গাড়ির চাকা ফেটে যেতে পারে। চাকা ফাটার আওয়াজকে বোম ফাটার আওয়াজ মনে করে যাতে ভয় না পাস, এ জন্য কানে তুলা থাকা যুক্তিযুক্ত। আমার এক বন্ধু বেশ ভাবুক প্রকৃতির। সে অনেকক্ষণ গালে হাত দিয়ে বসে থাকার পর বলল, মানুষ ঈদ করতে গ্রামে যাচ্ছে, এটা ঠিক আছে। নাড়ির টানে তো মানুষ যাবেই। কিন্তু সবার মধ্যে এমন ভাব কেন, যেন আর ফিরবে না? এবার পাশ থেকে একজন বলে উঠল, ইস, কেন যে ঈদটা মাসখানেক আগে হলো না! তাহলে হতো কি, যাদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে তারা আর ঢাকায় ফিরবে না, মানে অনেকদিন গ্রামে থাকবে, তাদের দিয়ে ধান কাটিয়ে রাখা যেত। আহারে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর