সোমবার, ১০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
পাঠকের ফালতু গল্প অব দ্য উইক

গার্লফ্রেন্ডের কুকুর

গার্লফ্রেন্ডের কুকুর

সন্ধ্যা হয়ে গেছে। পৃথিবী যেন কালো ছায়ার গহীনে ডুবছে। সুদূর আকাশের অগণিত তারার মিটিমিটি আলো পৃথিবীর বুকে পুরোপুরি তখনো পৌঁছেনি।  যেটুকু আলো পৌঁছায় তা দিয়ে আর যাই হোক, পথ চলা যায় না। অন্ধকারেই চলতে হলো পিন্টু, মন্টু আর সন্টুকে। সময় সন্ধ্যা ৭টা। এর মধ্যেই বিশাল  একটা মাঠ পাড়ি দিয়ে পাশের গ্রামে পৌঁছতে হবে। পিন্টু তার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা করবে। সঙ্গে রয়েছে মন্টু আর সন্টু।

পিন্টুর গার্লফ্রেন্ডের বাড়ি নদীর পাড়ে। সারিবাঁধা কতগুলো বাড়ি। প্রথম সারির প্রথম বাড়িটাই ওদের।  সে বাড়িকে লক্ষ্য করেই তাদের যাত্রা। অতঃপর টানা পায়ে হেঁটে হেঁটে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে তিন বন্ধু পৌঁছে  গেল পাশের গ্রামে, সারিবাঁধা বাড়ির প্রথম সারির প্রথম বাড়িটার পাশে। সন্ধ্যা ৭টা বাজতে তখনো  প্রায় বিশ মিনিট বাকি। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পৌঁছে যাওয়ার সফলতায় নিজের ভিতর একটা বিজয়ের উল্লাস কাজ করছিল তিন বন্ধুর। কিন্তু মুহূর্তেই সেই উল্লাস কোথায় যেন হারিয়ে গেল। যখন কিনা ঠিক পেছন থেকে খ্যাপাটে একটি কুকুর ঘেউ ঘেউ করে উঠল। ভয়ে তারা আধমরা।

সন্ধ্যা ৭টা। বিল্টু চলে গেল তার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা করতে। আর মন্টু ও সন্টু দুজনকে রেখে গেল পাহারাদারের দায়িত্বে রেখে। কোনো অপরিচিত  লোক আসে কিনা সে বিষয়ে নজর রাখা আরকি। আর যদি কেউ আসে তাহলে বিশেষ কোনো ইঙ্গিতে  যেন তাকে সতর্ক করে দেয়। অবশ্য মন্টু ও সন্টু দুজনকে পাহারা দিতে হয়েছিল দুদিক থেকে। মন্টুর দিকটা ছিল খুবই চমৎকার। ছোট একটা খালের উপর একটা ব্রিজ। সেই ব্রিজের নিচেই মন্টুকে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। এদিকে আলো জ্বালাতে পিন্টুর বারণ আছে। অন্ধকারেই দাঁড়িয়ে থাকতে হলো তাকে। অন্যদিকে সন্টুর দিকটা ছিল ঝোপঝাঁড়ে ঘেরা বাড়ির পশ্চিম ভাগ। হঠাৎ সন্টু, ‘আহ, কী মশা!’ বলে চেঁচিয়ে উঠল। তখনই পেছনের অন্ধকার থেকে একটি উসকে যাওয়া কুকুরের উচ্চস্বরে ঘেউ ঘেউ চিৎকার শুরু। সন্টুর মনে হলো, এই বুঝি কুকুর এসে কামড়ে দিল! একটু দূরে মন্টু সন্টুকে ফিসফিসিয়ে বলল, কীরে! এ আমরা কোথায় এসে পড়লাম। পিন্টু কী আমাদের অতল সাগরে ডুবিয়ে মারা প্ল্যান করেছে নাকি?

এদিকে অনেকক্ষণ হলো পিন্টুরও ফিরে আসার কোনো খোঁজখবর নেই। শেষে কোনো উপায়ন্তর না দেখে নিঃশব্দে পাহারাদারের দায়িত্বে দাঁড়িয়ে রইল তারা। আর মনে মনে দুজনেই ভাবতে লাগল, কপাল পোড়া আর কাকে বলে। এমন সময় পিন্টু পা টিপে টিপে নিঃশব্দে এসে বাড়ির উত্তর পাশ থেকে মৃদু সুরে হাঁকিয়ে বলল, মন্টু ও সন্টু শুনতে পাচ্ছিস? আমার কাজ শেষ। বেরিয়ে আয়, কোথায় তোরা?

মন্টু ও সন্টু, পিন্টুর গলার আওয়াজ শুনতে পেয়েই ঝটপট নিজেদের জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে এলো।

মন্টু বলল, তাহলে আর দেরি করা চলবে না, পিন্টু। দ্রুত পা চালা।

পিন্টু, মন্টু আর সন্টু দ্রুত চলতে শুরু করতেই আচমকা অন্ধকারের গহীন থেকে ছুটে আসা সামনের জন্তুটিকে দেখে তারা ঢোক গিলল। সেই কুকুরটা! বেশ মোটাসোটা, গায়ের রং ধূসর বাদামি।  কুকুরটিকে সামনে এগিয়ে আসতে দেখেই মন্টু ও সন্টু দিল ভয়ে দৌড়। দুই বন্ধুকে পালাতে দেখে পিন্টুও তাদের সঙ্গে দৌড় দিল। তাদের পিছু নিল সেই কুকুরটাও। দিশেহারা হয়ে অন্ধকারেই ছুটতে লাগল তিন বন্ধু।

হঠাৎ পিন্টুর মোবাইল বেজে উঠল। দৌড়ে পালাতে পালাতেই সে ফোনটা রিসিভ করল। ফোনের ওপার  থেকে তার গার্লফ্রেন্ড স্নেহমাখা সুরে বলে উঠল, ওগো! আমি তোমাকে আমার আদরের ডাব্লুর সঙ্গে দেখা করাতে একদম ভুলেই গিয়েছিলাম। পিন্টু তাড়া খেতে খেতে বলল, ডাব্লুুটা আবার কে? ফোনের ওপাশ থেকে গার্লফ্রেন্ড আহ্লাদের সুরে বলল, ওই যে! আমার পোষা কুকুরটা। ফোনের এপাশ থেকে পিন্টু হাঁফ ছেড়ে বলল, তোমার ডাব্লুুটা ক্ষেপে গিয়ে আমাকে তাড়া করছে। কিছু একটা কর! এবারের যাত্রায় বেঁচে যেতে পারলে আগামীকাল আবার দেখা হবে, জান! –বলেই ফোনের লাইনটা কেটে দ্বিগুণ গতিতে দৌড়ে পালাতে লাগল পিন্টু। ততক্ষণে অন্ধকারে পথ হারিয়ে তিন বন্ধুর কী দশা হয়েছে কে জানে?

 

লেখা : জয় পাল, শিক্ষার্থী

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর