সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

মশা ও বিশ্বকাপ

বিশ্বাস করবে না, কোনো কোনো ব্যাটসম্যানের ব্যাট চালানো দেখে আমার খুব মায়া হয়েছে। ব্যাট কীভাবে চালাতে হয়, সেটা না শিখেই চলে এসেছে বিশ্বকাপে খেলতে। হলো কিছু এটা...

ইকবাল খন্দকার

মশা ও বিশ্বকাপ

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর

জরুরি একটা কাজে বের হয়েছিলাম। কিছুদূর যেতেই আমার এক ছোটভাইয়ের সঙ্গে দেখা। তার চোখে-মুখে বিরক্তি। জানতে চাইলাম কোনো সমস্যা কি না। সে বলল, সমস্যা তো অবশ্যই। আসার পথে দেখলাম মেশিন দিয়ে মশার ওষুধ ছিটাচ্ছে। বাপরে বাপ, মেশিনের কী বিকট আওয়াজ! মশা মারতে গিয়ে শব্দদূষণ, নাহ, এটা মোটেই ঠিক হচ্ছে না। অথচ একটু বুদ্ধি খাটালে শব্দদূষণ না করেও মশার বংশ ধ্বংস করা যায়। আমি অতিআগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলাম, কীভাবে? ছোটভাই বলল, কীভাবে আবার! মশার ওষুধ ছিটানোর পেছনে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করা হচ্ছে, সেই অর্থটা ক্রিকেটের পেছনে খরচ করলেই হয়। এতে আমাদের ক্রিকেট আরও উন্নত হবে। আমাদের ক্রিকেটাররা বেশি বেশি করে চার-ছক্কা মারতে পারবে। যতবার চার-ছক্কা মারবে, আমরা দর্শকরা ততবারই তুমুল হাততালি দেব। আর হাততালি দিলে মশা মরতে বাধ্য। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, জীবনে আমার নানা রকম রোগ হয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গু হয়নি কোনো দিন। বাংলাদেশ যখন পরপর দুটো খেলায় হারল, তখন আমার ডেঙ্গু ধরা পড়ল। আমি বললাম, নিশ্চয়ই মনের দুঃখে আপনি মশারি ছাড়া ঘুমিয়েছিলেন? প্রতিবেশী বললেন, নারে ভাই। আসলে বাংলাদেশ যখন পারছিল না, তখন আমি একদম নেতিয়ে পড়েছিলাম। হাত-পা কেমন অবশ হয়ে আসছিল। এই সুযোগে রক্ত খেয়ে মশারা ঢোল। অতঃপর ডেঙ্গু। যদি বাংলাদেশ ওই দুটো খেলায় ভালো করতে পারত, তাহলে কিন্তু আমার ডেঙ্গুও হতো না, বরং আমার হাততালিতে রেকর্ড সংখ্যক মশা চ্যাপ্টা হয়ে মারা যেত। নিতান্তই যদি মারা না যেত, অন্তত আমার হাততালির শব্দে কিছু মশার কানের পর্দা ফেটে যেত বলে আমি বিশ্বাস করি। আমার এক বন্ধু বলল, আগে জানতাম ক্রিকেট মানে ঝিঁঝিঁ পোকা। কিন্তু আজকাল মনে হচ্ছে ঝিঁঝিঁর চেয়ে মশাটাই অধিক যুক্তিযুক্ত। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে? বন্ধু বলল, কী আবার! বাংলাদেশ জেতায় বিজয় মিছিলে যেই স্লোগান ধরলাম, বড়সড় একটা মশা ডাইরেক্ট চলে গেল আমার মুখের ভিতর। মশার গান যেমন বিচ্ছিরি, স্বাদও তেমন বিচ্ছিরি। বিশ্বাস না হলে একটা মুখে দিয়ে খেয়ে দেখিস। আমার এক দুলাভাই বললেন, বিশ্বকাপের প্রায় সব ম্যাচই আমি দেখেছি। বিশ্বাস করবে না, কোনো কোনো ব্যাটসম্যানের ব্যাট চালানো দেখে আমার খুব মায়া হয়েছে। ব্যাট কীভাবে চালাতে হয়, সেটা না শিখেই চলে এসেছে বিশ্বকাপে খেলতে। হলো কিছু এটা? আমি বললাম, ব্যাট চালানো নিয়ে আপনি এমনভাবে কথা বলছেন, যেন একদা আপনি অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের ব্যাটিং কোচ ছিলেন। অথচ জীবনে কোনোদিন ব্যাট ধরেও দেখেননি। দুলাভাই রেগে গেলেন, না জেনে কথা বলবে না। জীবনে কোনোদিন ব্যাট ধরে দেখিনি মানে! তুমি আমার ব্যাট চালানো দেখেছ? আমার ব্যাটে আগুন ঝরে। আমি চোখ বড় বড় করে বললাম, বলেন কী! তা আপনি কোন মাঠে ব্যাট চালান? দুলাভাই বললেন, কোনো মাঠে না। আমি ব্যাট চালাই ঘরে। মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাট। ব্যাটে মশা লাগলেই আগুন জ্বলে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর