সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিশ্বকাপ বিষয়ক ফাইনাল প্যাঁচাল

ইকবাল খন্দকার

বিশ্বকাপ বিষয়ক ফাইনাল প্যাঁচাল

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর

আমার পরিচিত এক চায়ের দোকানদারের সঙ্গে দেখা গতকাল। কোথাও যাচ্ছিল। জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় যাচ্ছেন? দোকানদার বলল, আর বলবেন না। খালি ঝামেলা। এমনিতেই সারাদিন কাজের চাপের লাইগা দম ফালাইতে পারি না, তার ওপরে বাড়তি কাজ। ধুরু, ভাল্লাগে না। আমি বললাম, কিসের বাড়তি কাজ, জানতে পারি?  দোকানদার বলল, চায়ের কাপ কিনার কাজ। বিশ্বকাপের জন্য বাড়তি কাপ কিনতে হইতাছে। আমি বললাম, এটা তো খুবই আনন্দের ব্যাপার। বিশ্বকাপে বেশি চা বিক্রি হচ্ছে, কাপ বেশি লাগছে। তার মানে আপনার ব্যবসার রমরমা অবস্থা। দোকানদার হালকা ঝাড়ি দিল, না বুইঝা কথা বইলেন না তো! চা বেশি বিক্রি হইতাছে, এই জন্য বেশি কাপ লাগতাছে আর আমি এই জন্য বাড়তি কাপ কিনতে যাইতাছি, বিষয়টা এইরকম না। বিষয়টা হইল, খেলা নিয়া কথা কইতে গিয়া একেকজন এতটাই উত্তেজিত হইয়া যায় যে, কোনো সময় কাপ আছাড় মারে, কোনো সময় কাপ ঢিল মারে। দেখা গেছে গত কিছুদিনের মধ্যে আমার দশ বারোটা কাপ নাই। এই জন্য এখন সিদ্ধান্ত নিছি কাচের কাপ বাদ। এখন থেইকা প্লাস্টিকের কাপে চা দিমু। ওয়ান টাইম কাপ। দেখি ভাঙে ক্যামনে। আমার এক ছোট ভাই বলল, বাংলাদেশ যেহেতু বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে, তারপর থেকেই সাপোর্ট করা নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। আমি যে কোনো দেশকে সাপোর্ট করতে পারি। একটা দল জিতলেই হলো। পাশে দাঁড়িয়ে একজন মিটমিট করে হাসছিল। সে এগিয়ে এসে বলল, যে কোনো দেশকে যেহেতু সাপোর্ট করা যায়, অতএব আমি আমার প্রিয় দেশকেই সাপোর্ট করতে চাই। আমি জানতে চাইলাম, আপনার প্রিয় দেশ কোনটা? ভদ্রলোক বলল, সন্দেশ। আমার এক প্রতিবেশী বলল, বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ বিদায় নেওয়ার পর থেকে একটু ঝামেলায় ছিলাম বলতে পারেন। কারণ, যখন বাংলাদেশ ছিল, তখন সাপোর্টের একটা বিষয় ছিল। কিন্তু এখন এখানে স্বার্থ ঢুকে পড়েছে। আমি জানতে চাইলাম, কী রকম? প্রতিবেশী বললেন, কী রকম আবার। আমার ছোট ভাই অস্ট্রেলিয়াকে সাপোর্ট করেছে। জিজ্ঞাসা করলাম অস্ট্রেলিয়াকে নাকি সাপোর্ট করছিল! সে বলল, অস্ট্রেলিয়ান গরুর দুধ বিক্রি করে নাকি সে খুবই লাভবান হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান গরুর প্রতি এই অপার কৃতজ্ঞতার কারণেই অস্ট্রেলিয়ার প্রতি তার এই নিরঙ্কুশ সাপোর্ট। আমাদের কথার মাঝখানে ঢুকে গেল আমার আরেক প্রতিবেশী। তিনি কথায় কথায় জানালেন তার প্রিয় দল নাকি ইন্ডিয়া। তার কথার সারমর্ম ছিল এমন- তার শ্যালিকা ইন্ডিয়ান লেহেঙ্গা খুবই পছন্দ করে। অতএব ইন্ডিয়াকে সাপোর্ট না করলে ঘরে একটু গ্যাঞ্জাম হয়ে যাবে। আমার এক বন্ধু বলল, খেলা নিয়ে কিন্তু ভালোই বিপদে পড়েছিলাম। শুধু খেলার কারণে তিন দিন ধরে ঝাল তরকারি দিয়ে ভাত খেতে পারছি না, বলতে গেলে মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। হলো কিছু এইটা? আমি তার কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে অনুরোধ করলাম বুঝিয়ে বলার জন্য। বন্ধু বুঝিয়ে বলল, আসলে হয়েছে কী, চা-স্টলে খেলা নিয়ে যখন কথা ওঠে, তখন আর দুনিয়াদারির খেয়াল থাকে না। ব্যস, বেখেয়ালবশত কখন যে গরম চায়ে চুমুক দিয়ে বসি, নিজেও বলতে পারব না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। আলজিহ্বা পুড়ে গেছে। এখন তরকারি দিয়ে ভাত খেলেই জিহ্বা জ্বলে।

 

সর্বশেষ খবর