আমার এক বড়ভাইকে ফোন করলাম জরুরি একটা কাজে। জিজ্ঞেস করলাম কোথায় আছেন। বড়ভাই মিনিটখানেক কোঁকালেন। অতঃপর জানালেন তিনি হাসপাতালের বেডে শায়িত অবস্থায় আছেন। আমি সহানুভূতির স্বরে জানতে চাইলাম কী হয়েছে। তিনি জানালেন, আর বলিস না। চোর আমার বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে। বেত্তমিজ চোরের কারণে আমি এখন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। আমি বললাম, চোরের কারণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মানে? চোর ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস বহন করে বলে তো আমার জানা নেই! বড়ভাই আরও কিছুক্ষণ কোঁকালেন। তারপর বললেন, হয়েছে কী, আমার বাসার প্রত্যেকটা জানালায় নেট লাগানো। কোন নেট জানিস তো? সেই নেট, যে নেট লাগালে মশা ঢুকতে পারে না। আমি বললাম, জানি। বড়ভাই বললেন, তারপর আর কী! কদিন আগে ঘরে চোর ঢুকল জানালার গ্রিল কেটে। সঙ্গে নেটও। নেট কাটার কারণে যেটা হলো, ঘরে হু-হু করে মশা ঢুকল আর আমাকে জম্মের কামড়ান কামড়িয়ে ডেঙ্গু বাধিয়ে দিল। এবার বল, আমার ডেঙ্গুর জন্য কে দায়ী?
আমার এক ছোটভাই বলল, উভয় সংকটে পড়ে গেলাম ভাই। এমনিতেও রক্তস্বল্পতা দেখা দিচ্ছে, ওমনিতেও রক্তস্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। কোন দিকে যে যাই! আমি বললাম, কী বলছিস, বুঝিয়ে বল। ছোটভাই বলল, আপনি যদি ফলমূল না খান, তাহলে কী হবে? ভিটামিনের অভাব দেখা দেবে। আর ভিটামিনের অভাব দেখা দিলে কী হয়, রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। ঠিক কিনা? আমি বললাম, পুরোপুরি ঠিক। এখন কী হয়েছে, সেটা বল। ছোটভাই বলল, ডেঙ্গু হলেও তো রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়, তাই না ভাই? আমি না বুঝেই বললাম, জি। তবে ডেঙ্গুর কারণে রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে সেটা সামাল দেওয়া কঠিন কাজ। কিন্তু ফলমূল না খেলে যে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়, এটা সামাল দেওয়া কিন্তু কঠিন কিছু না। বেশি করে ফলমূল খেলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। ছোটভাই বলল, বেশি করে যে ফলমূল খাব, কীভাবে খাব? মশার ভয়ে তো খেতে পারছি না। আমি এবার অবাক হলাম, মশার ভয়ে ফলমূল খেতে পারছিস না মানে? ছোটভাই বলল, কারণ, নারকেলের খোসায় পানি জমলে মশার জন্ম হয়, অন্যান্য ফলের খোসায় পানি জমলেও মশার জন্ম হয়। কিন্তু খোসা ছাড়া ফল তো পাওয়া যায় না, তাই না? তার মানে ফল কিনে আনলে খোসা আসবেই, আর খোসা থাকলে মশা হওয়ার ভয় থাকেই। অতএব ফলই খাব না, যা থাকে বরাতে। আমার এক দুলাভাই বললেন, আমার বাসার কাছে একটা দলের অফিস আছে, নিশ্চয়ই দেখেছিস। আমি বললাম, জি, দেখেছি। দুলাভাই বললেন, আগে এই অফিসের সামনে সভা-সমাবেশ হলে খুব বিরক্ত হতাম। কিন্তু যেই মশার উৎপাত শুরু হয়ে গেল, অমুক তমুক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে শুরু করল, তখন থেকে আর বিরক্ত তো হই-ই না, বরং অপেক্ষায় থাকি কখন এই অফিসের সামনে সভা সমাবেশ হবে। এই যেমন গতকাল একটা সভা হলো। এই সভার সাফল্য সন্তোষজনক। আমি দুলাভাইয়ের কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে হা করে তাকিয়ে রইলাম। দুলাভাই আমার মুখ বন্ধ করে দিয়ে বললেন, মশা ঢুকবে। তারপর বললেন, সব কথার সার কথা হলো, যতগুলো সভা হয়, সবগুলো সভায় বক্তৃতা দেওয়ার পরপরই তার ভক্তরা সজোরে তালিয়া বাজায়। তালিয়া বুঝিস তো? তালিয়া মানে হচ্ছে তালি। ব্যস, তালির সময় দুই হাতের মাঝখানে পড়ে হাজার হাজার মশার জীবনাবসান।