সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাড়ি যাইরে*

* শর্ত : মশা ছাড়া

ইকবাল খন্দকার

বাড়ি যাইরে*

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর

বাসের ছাদে করে বাড়িতে গেলে মানুষ অচেনা হয়ে যায়, এমন কোনো নিয়ম আছে কিনা। না, তেমন কোনো নিয়ম নেই। আসলে তাকে চিনতে না পারার কারণ, বাসের ছাদে বসে সে যখন ঝিমাচ্ছিল...

 

আমার এক ছোটভাই বলল, যানবাহনে যা ভিড় হয় ঈদের সময়, এবার আর গ্রামেই যাব না। তবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবো। আমি বললাম, যেহেতু দুধে আজকাল নানান ক্ষতিকর জিনিস মেশানো হয়, অতএব দুধের স্বাদ দুধে না মিটিয়ে ঘোলে মেটানো যেতেই পারে। কিন্তু ঈদে বাড়ি যাওয়ার সঙ্গে দুধ আর ঘোলের কী সম্পর্ক, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। ছোটভাই বলল, আসলে হয়েছে কী, ঈদে ভিড়ের কারণে গ্রামে না গেলেও গ্রামে ঢুকবো। অবস্থান করব, টাইম পাস করব। আমি চোখ গোল গোল বানিয়ে বললাম, গ্রামে না গেলেও গ্রামে ঢুকবি মানে? এটা কীভাবে সম্ভব? ছোটভাই বলল, অবশ্যই সম্ভব। যানবাহনের ভিড়ের ভয়ে আমি আমার গ্রামের বাড়ি যাব না। তবে বিশেষ একটা গ্রামে ঢুকবো। সেই গ্রামের নাম কী জানেন? ইনস্ট্রাগ্রাম। মানে ইনস্ট্রাগ্রামে একটু ঈদের সময় একটু বেশি বেশি ছবি আপলোড করব, এই আর কি। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, বহু বছর ধরে গ্রামে যাই না। কিন্তু এবার চিন্তা করলাম একটু গ্রামে যাই। ঈদটা গ্রামের বাড়িতে করি। আমি বললাম, খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। আসলে মাটির প্রতি টান না থাকলে ভিড় উপেক্ষা করে গ্রামে যাওয়ার এমন সিদ্ধান্ত কেউ নিতে পারে না। ধন্যবাদ আপনাকে। এবার পাশ থেকে ভাবী মানে এই প্রতিবেশীর বউ বলে উঠল, আন্দাজে ধন্যবাদ দিয়ে বসবেন না। উনি মাটির টানে গ্রামে ঈদ করার সিদ্ধান্ত নেননি। উনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভয়ে। শহরে থাকলে ডেঙ্গুর ভয় আছে কি না। আমার এক দুলাভাই বললেন, শুনলাম কেউ কেউ নাকি অভিযোগ করছে লঞ্চে শহরের ডেঙ্গু মশা গ্রামে যাচ্ছে। অভিযোগটা কতটা সত্য? আমার পাশেই ছিল আমার এক ছোটভাই। সে বলে উঠল, অভিযোগটা একদমই সত্য না। লঞ্চে শহরের ডেঙ্গু মশা গ্রামে যাবে, এটা তো রীতিমতো অকল্পনীয় ব্যাপার। দুলাভাই বললেন, কেন? অকল্পনীয় ব্যাপার কেন? ছোটভাই বলল, অকল্পনীয় ব্যাপার এই জন্য, যেহেতু ঈদের সময় টিকিট ছাড়া লঞ্চে কাউকে উঠতে দেওয়া হয় না। এবার আপনিই বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো মশাকে টিকিট কাটতে দেখেছেন? তাহলে কীভাবে আশা করেন মশা লঞ্চে উঠবে আর গ্রামে যাবে? আমার এক বন্ধু বলল, ঈদের সময় যানবাহনে উপচেপড়া ভিড় থাকে। মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রামে যায়। এবারও তাই হচ্ছে এবং হবে। তো এই যে গ্রামে যাওয়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনে ওঠা, এটা কি ঠিক? আমি বললাম, মোটেই ঠিক না। তবে কেউ কেউ এটাকে ‘ঠিক’ বানিয়ে নিয়েছে। কীভাবে জানিস? এই যেমন ধর আমার এক খালাত ভাই একবার ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় ট্রেনের ছাদে উঠে বাড়ি গিয়েছিল। যখন সে বাড়ির কাছের স্টেশনে গিয়ে নেমেছিল, তখন তার ব্যাগভর্তি আম। বুঝতেই পারছিস, ট্রেনের ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরামসে আম পেড়েছিল। পাঠক, এহেন সুবিধা কিন্তু সব যাত্রী পায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সুবিধার পরিবর্তে অসুবিধাটাই বেশি হয়। এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা না বললেই নয়। একবার আমার এক চাচাত ভাই বাসের ভেতরে জায়গা না পেয়ে ছাদে বাড়ি রওনা হলো। কিন্তু সে যখন বাড়িতে গিয়ে পৌঁছাল, তখন তাকে কেউ চিনতে পারছিল না। নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করবেন, কেন চিনতে পারছিল না। বাসের ছাদে বাড়িতে গেলে মানুষ অচেনা হয়ে যায়, এমন কোনো নিয়ম আছে কিনা। না, তেমন কোনো নিয়ম নেই। আসলে তাকে চিনতে না পারার কারণ, বাসের ছাদে বসে সে যখন ঝিমাচ্ছিল, তখন গাছের ডালের খোঁচা লেগে তার মাথার পরচুলাটা খুলে গিয়েছিল। ব্যস, বাড়িতে যখন সে পৌঁছেছিল, তখন পুরা টাক। যা-ই হোক, বিড়ম্বনা যতই হোক, গ্রামের বাড়ি যেতেই হবে। আর যাওয়ার সময় ডেঙ্গু মশাকে এই হুমকি দিয়ে যেতে হবে- গ্রাম থেকে ফিরে যদি আবার তোদের দেখি, তাহলে জানে মেরে ফেলব। হুমকিতে যদি কাজ হয়, ভালো। কাজ না হলে আমাদের কিছু করার নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর