সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

আমরা এখন ঢাকায়

ইকবাল খন্দকার

আমরা এখন ঢাকায়

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর

ঢাকায় ফিরতে না ফিরতেই আমার এক বন্ধুর ফোন। কিছুটা বিরক্তি নিয়েই রিসিভ করলাম ফোনটা। জিজ্ঞাসা করলাম কেমন আছে। বন্ধু হন্তদন্ত গলায় বলল, আর থাকা! একটু আগে গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে কী যে একটা অবস্থার মধ্যে পড়েছি! খুবই বাজে অবস্থা। তবে এই বাজে অবস্থার মধ্যেও একটা ভালো ফিলিংস কাজ করছে। কেন জানিস? কারণ, আমি আমার দাদার আমলে ফিরে যেতে পেরেছি। হোক সেটা অল্প সময়ের জন্য। আমি বন্ধুর কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে তাকে অনুরোধ করলাম বুঝিয়ে বলার জন্য। বন্ধু বুঝিয়ে বলল, আমার দাদার আমলে একটা ঘটনা খুব ঘটত। জবরদখলের ঘটনা। পাশের গ্রামের কতিপয় দস্যু টাইপের লোক দাদার চরের জমি দখল করে ফেলত কিছুদিন পর পর। দাদা তখন করত কী, তার ছেলেপুলে নিয়ে ওই দস্যুদের বিরুদ্ধে মাঠে নামত। লড়াই করে দখল হয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধার করত। আমি বললাম, ওই আমলে এই ধরনের জবরদখলের ঘটনা শুধু তোর দাদার ক্ষেত্রে না, সবার ক্ষেত্রেই কমবেশি ঘটত। অতএব, এই লম্বা কেচ্ছা বাদ দিয়ে বল কী হয়েছে। বন্ধু বলল, ওই যে বললাম দাদার আমলে ফিরে গেছি, আসলেই কিন্তু গেছি।

দাঁতের গর্ত থেইকা মাংসগুলা বাইর করার চেষ্টা চলতেছে। যখন বাইর করা শেষ হইব, তখনই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হমু। এর আগে না

কীভাবে জানিস? ঢাকায় ফিরে দেখি ডেঙ্গু মশারা আমার ঘরবাড়ি দখল করে রেখেছে। যাকে বলে জবরদখল। ব্যস, বউকে সঙ্গে নিয়ে নেমে গেলাম মাঠে। দাদা যেভাবে দস্যুদের হাত থেকে তার দখল হয়ে যাওয়া জমিজমা পুনরুদ্ধার করত, আমি সেভাবেই মশাদের হাত থেকে আমার দখল হয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি উদ্ধার করলাম। আহা, সে কী ফিলিংস! আমার এক ছোট ভাই বলল, আমি ঢাকা ফিরে এসেছিলাম ঈদের পরদিনই। তখনো আমার মেসের কেউই আসেনি। মেসের দারোয়ান আসার তো প্রশ্নই ওঠে না। ফলে যা ঘটল, তা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। আমি কপাল কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলাম কী হয়েছে। ছোট ভাই বলল, কী আর হবে বলেন। দারোয়ান না আসলে গেট বন্ধ থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। তবে আমাদের গেটটা বেশি উঁচু না। আমি চিন্তা করে দেখলাম, গেট বন্ধ আছে, থাকুক। আমার কাজ হচ্ছে রুমে ঢোকা। অতএব, বাউন্ডারি টপকে ভিতরে ঢুকে রুমের দরজার তালা খুলে রুমে প্রবেশ করতেই পারি। যেই ভাবা সেই কাজ। সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনা। ঈদের নতুন প্যান্টটা কিনেছিলাম। ওয়াল টপকাতে গিয়ে প্যান্টটার তলদেশ ‘ফট্টাস’। উঁহু, সেই অবস্থা এখন নেই। এখন প্রায় সবাই চলে এসেছে ঢাকায়। তবে কিছু কিছু দোকানদার আছে, যারা ঈদের এক মাস পরও ঢাকায় আসতে চায় না। তেমনি এক দোকানদারের দোকান রয়েছে আমার বাসার পাশে। আজকেও তাকে দোকান খুলতে না দেখে ফোন করলাম। জিজ্ঞাসা করলাম কবে ঢাকায় ফিরবে। জবাবে দোকানদার কিছু একটা বলল। তবে আমি বুঝতে পারলাম না। কারণ, তার কথা বেশ অস্পষ্ট। জিজ্ঞাসা করলাম, সমস্যা কী? কথা এমন শোনা যাচ্ছে কেন? দোকানদার বলল, দাঁত ব্যথায় অস্থির। ঠোঁট, মুখ নাড়াইতে পারতাছি না। আমি বললাম, হঠাৎ দাঁত ব্যথার কারণ কী? দোকানদার বলল, মাংস চাবাইতে গিয়া এই দশা। তবে চাবাইলে কী হইব, সব মাংস পেটে যায় নাই। অর্ধেক গেছে পেটে, অর্ধেক দাঁতের গর্তে। দাঁতের গর্ত থেইকা মাংসগুলা বাইর করার চেষ্টা চলতেছে। যখন বাইর করা শেষ হইব, তখনই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হমু। এর আগে না। সবাই কিন্তু এই দোকানদারের মতো না। যে কারণে ঢাকায় ইতিমধ্যে জ্যামের সৃষ্টি হয়ে গেছে। এই যে ঈদ শেষ হতে না হতেই জ্যামের শুরু, এই বিষয়ে কথা বলছিলাম আমার এক প্রতিবেশীর সঙ্গে। প্রতিবেশী বলল, ঠিকই তো আছে। জ্যাম না লাগলে ঢাকা কিসের! মনে করেন পুরা ঢাকা ফাঁকা থাকল, তখন কিন্তু ভয়ের যথেষ্ট কারণ আছে। আমি বললাম, ঢাকা ফাঁকা থাকলে কিসের ভয়? ভূতের? প্রতিবেশী বলল, জি না। ছেলে ধরার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর