সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পর্দা-বালিশ বনাম নালিশ

ইকবাল খন্দকার

পর্দা-বালিশ বনাম নালিশ

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর

কিছুদিন আগে বালিশ নিয়ে জোর আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। কেন হয়েছিল, সবাই জানেন। তবু যদি সেই আলোচনা-সমালোচনার কারণটা খুব সংক্ষিপ্ত আকারে বলি, তাহলে বলা যায়, দাম। গগনচুম্বী দাম। একেকটা বালিশের দাম কত করে ছিল, আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়ই। যদি মনে না থাকে, তাহলে আর নতুন করে মনে করাতে চাই না। অযথা রাতের ঘুম নষ্ট করে লাভ আছে? বালিশের পর এবার আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে অবস্থান করছে পর্দা। কিসের পর্দা, কেন সেই পর্দা আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে, প্রত্যেকের জানা। যদি মনে করেন আপনার জানা নেই, তাহলে ধরে নেন আপনি বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার বাইরে চলে গেছেন। তার মানে আপনার সোশ্যাল স্ট্যাটাস একদম ভূলুণ্ঠিত। যদি এ ভূলুণ্ঠিত স্ট্যাটাস ফিরিয়ে আনতে চান, তাহলে গুগলে পর্দা লিখে সার্চ দিন এবং জেনে নিন সদ্য ঘটে যাওয়া পর্দা কেলেঙ্কারির কেচ্ছা। এই তো গেল আপনার কথা। তবে আপনার মতো তো আর সবাই নয়। সবাই কিন্তু এ কেলেঙ্কারির কথা জানে। যেমন জানে আমার বাসার বুয়া।

কিন্তু যেই শোনা গেল এক পর্দার দাম লাখ লাখ টাকা, তার কিপ্টে বাবা করল কী, বাসার সব পর্দা খুলে আলমারিতে ভরে ফেলল। ব্যস, আমি তাকে দেখার সুযোগ পেলাম। আর দেখতে দেখতেই প্রেম...

তিন দিন ধরে সে কাজে আসে না। কেন আসে না, আমরা কেউ জানি না। অতঃপর তাকে ফোন করে ‘কারণ’ জিজ্ঞেস করা হলো। সে বলল এমন কঞ্জুসের বাসায় নাকি কাজ করবে না। আমরা তো আকাশ থেকে পড়লাম। বলে কী মহিলা! আমরা কঞ্জুস মানে? ঘটনা কী? তদন্তে নামলাম। তদন্তে বেরিয়ে এলো, তাকে দিয়ে তিনটা পর্দা ধোয়ানো হয়েছিল। এর জন্য তাকে যথেষ্ট বকশিসও দেওয়া হয়েছে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? বুয়া বলল, তিন পর্দা ধোয়ায়া মাত্র ১৫০০ টাকা দিছে। কত্ত বড় কঞ্জুস! আমি বললাম, তিন পর্দা ধুইয়ে ১৫০০ টাকা দিয়ে থাকলে প্রতি পর্দা কিন্তু ৫০০ টাকা করে পড়েছে। বুয়া বলল, আজাইরা কথা কইয়েন না। আইজকাইল একটা পর্দার দাম কত জাইনা দেখেন। এত দামি জিনিস ধোয়ায়া মাত্র ৫০০ টেকা কইরা দিবেন? বিবেক নাই আপনেগো? আমার এক ছোটভাই বলল, জীবনে অনেক ঘাউড়ামি করছি ভাই। এইটার অভিশাপই হয়তো লেগেছে। আর বোধ হয় ঘাউড়ামি করা হবে না। ঘাড়ই যেখানে ঠিক নেই, সেখানে ঘাউড়ামিটা করব কীভাবে? আমি অবাক হয়ে বললাম, ঘাড় ঠিক নেই মানে? ছোটভাই বলল, আজকাল খুব আতঙ্কে রাত কাটাই। এ জন্য এই দশা। আমি বললাম, আতঙ্কে রাত কাটালে ঘাড় ঠিক থাকে না, এই প্রথম শুনলাম। ছোটভাই বলল, আসলে যেদিন থেকে জানতে পারলাম বালিশের দাম প্রচুর, সেদিন থেকেই আমিসহ মেসের সবাই নিজেদের বালিশগুলো ট্রাঙ্কে ঢুকিয়ে ফেললাম। দামি জিনিস, বুঝতেই পারছেন। যদি চুরি হয়ে যায়। তারপর আমরা ঘুমাতে লাগলাম বালিশ ছাড়া। ব্যস, ঘাড়ের অবস্থা যা-তা। অনেকে তো আমার ঘাড়ের অবস্থা দেখে বলে আমি নাকি রানীক্ষেত রোগে আক্রান্ত। কী একটা বিপদ বলেন দেখি! আমার আরেক ছোটভাইয়ের সঙ্গে দেখা গতকাল। তাকে খুব ফুরফুরে মেজাজে পাওয়া গেল। জিজ্ঞেস করলাম, নতুন প্রেমে পড়েছিস নাকি? ছোটভাই বলল, একদম ঠিক ধরেছেন। এতদিন ধরে অপেক্ষা করলাম, প্রেম হলো না। কিন্তু যেই পর্দার দাম বেড়ে গেল, আমার প্রেমটা হয়ে গেল। আমি বললাম, পর্দার দামের সঙ্গে প্রেম হওয়ার সম্পর্ক কী? ছোটভাই বলল, আমি পছন্দ করতাম আমার বাসার পাশের বাসার একজনকে। কিন্তু সে ছিল অবরোধবাসিনী। মানে সারা দিন ঘরের ভিতর বসে থাকত। প্রেম করব দূরে থাক, তার দেখাই পেতাম না। কিন্তু যেই শোনা গেল এক পর্দার দাম লাখ লাখ টাকা, তার কিপ্টে বাবা করল কী, বাসার সব পর্দা খুলে আলমারিতে ভরে ফেলল। ব্যস, আমি তাকে দেখার সুযোগ পেলাম। আর দেখতে দেখতেই প্রেম। আমার এক প্রতিবেশী বলল, ভাই, আমি আমার ভাইকে এতদিন সিনেমায় অভিনয় করতে দিতে রাজি হইনি। কিন্তু এখন রাজি হয়েছি। কারণ, আমি জানতে পেরেছি সিনেমায় অভিনয়কে নাকি বলা হয় ‘বড় পর্দা’য় অভিনয়। বুঝতেই পারছেন, বিষয়টা কত দামি, কত ইজ্জতের।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর