সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

চাঁদা আতঙ্ক

রাফিউজ্জামান সিফাত

চাঁদা আতঙ্ক

সকাল সকাল অফিসে ঢুকতেই পিয়ন মফিজের মুখে একটা করুনার হাসি দেখে মোতালেবের বুকটা ধড়ফড় করে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে তার চোখ চলে গেল মফিজের হাতের দিকে। যা সন্দেহ করেছিল তাই। মফিজের হাতে প্রিন্ট করা অফিসে সহকর্মীদের নামের তালিকা। তার মানে আজকেও কোনো একটা উপলক্ষে চাঁদা তোলা হচ্ছে। মফিজ এখন লিস্ট ধরে ধরে প্রত্যেকের টেবিলে উপস্থিত হয়ে চাঁদা তুলবে আর সবাই বিরস বদনে তার হাতে চাঁদা তুলে দেবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে মাসের  শুরুতেই পকেটে হাত দিতে  যেখানে ভয় কাজ করে সেখানে মাসে কয়েকবার করে অফিস কলিগদের বিয়ের দাওয়াত, জন্মদিনসহ নানা কারণে তোলা চাঁদা রীতিমতো এক আতঙ্কের কারণ।

মোতালেব তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিল এবার সে চঁাঁদা দেবে না। চাঁদা তোলার সময়টুকু তাকে লুকিয়ে থাকতে হবে। টেবিলে ব্যাগ রেখে পা টিপে টিপে সে দ্রুত ওয়াশরুমের দিকে রওনা হলো। চাঁদা তোলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে এখানেই অপেক্ষা করবে। কিন্তু ওয়াশরুমের দরজার গোঁড়ায় দেখা হয়ে গেল অফিস সহকর্মী লিয়াকতের  সঙ্গে। লিয়াকত ভাই দরজার মুখে দাঁড়িয়ে বাইরে উঁকিঝুঁকি মারছিলেন।

মোতালেব তাকে পাশ কাটিয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে চাইলে তিনি বাধা দিয়ে বললেন, মোতালেব, চাপ যদি  বেশি না থাকে তাইলে পরে আসো, তুমি বরং টেবিলে কিছু ফাইল আছে, কাজগুলো কুইক  শেষ করো।

মোতালেব বিরক্ত চোখে লিয়াকত ভাইয়ের দিকে তাকাল। যদিও মোতালেবের কোনো চাপ নেই তবুও টয়লেটে যাওয়ার অধিকার তার আছে। আর মফিজের সামনে তো এখন কোনোমতেই পড়া যাবে না। সে লিয়াকত ভাইকে প্রায় জোর করে ঠেলে ভিতরে ঢুকে পিলে চমকে গেল!  ছোটখাটো ওয়াশরুমে অফিসের অন্যান্য সহকর্মীরা চেপেচুপে দাঁড়িয়ে আছে। মোতালেব অবাক  চোখে লিয়াকত ভাইয়ের দিকে তাকালে তিনি মিনমিনে গলায় বললেন, মফিজের লিস্টের ভয়ে একে একে সবাই এখানে চলে এসেছি, ভেবেছিলাম একজন অন্তত বাইরে থাকবে, শেষমেশ তুমিও চলে এলে।

ওয়াশরুমে তখন গাদাখানেক মানুষ দাঁড়িয়ে। সময় বয়ে যাচ্ছে। কারও মুখে কথা নেই কিন্তু কান খাড়া। মফিজ কি চলে গেছে, নাকি আছে সবাই বোঝার চেষ্টা করছে। হঠাৎ ভিড়ের ভিতর  থেকে একজন সবচাইতে দামি প্রশ্নটা ছুড়ে দিল, আচ্ছা, আমরা সবাই এখানে তাহলে চাঁদা তোলা হচ্ছে কার জন্য?

প্রত্যেকে একে অন্যের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। তাই তো! কার জন্য এই চাঁদা তোলা!    

ঠিক এমন সময় দরজার বাইরে ঠক ঠক আওয়াজ তুলে মফিজ  চেঁচাল, ‘ও স্যারেরা, দরজা খুলেন, আর কতক্ষণ ভিতরে খাড়াইয়া থাকবেন। আমারই তো পায়ে খিল ধইরা গেল।’ লিয়াকত ভাই ধরা পড়া মুখে দরজা খুলে দিলে মফিজ লিস্টের কাগজ  দেখিয়ে তার চকচকে বত্রিশ দাঁত বের করে বলল, ‘স্যার, গত মাসের স্পেশাল ডিউটির বোনাসটা নিবেন না?’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর