সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

টিউশনি সমাচার

আফরীন সুমু

টিউশনি সমাচার

টিউশনি করছি বেশ ক’বছর। কত রকম অভিজ্ঞতাই তো হলো। শেষ যে টিউশনিটা করলাম সে কথাই বলা যাক- আমার এক বন্ধু হঠাৎ এসে বলল একটু সমস্যার কারণে তাকে একটা টিউশনি ছেড়ে দিতে হচ্ছে। আমি সেটা করব কিনা? আমি অবাক! ও ছেড়ে দেবে টিউশনি? ও পারলে আরও দুইটা নেয়। একটু খটকা লাগল। জিজ্ঞেস করলাম, বন্ধু সত্যি করে বলত ঘাপলাটা কী? বেতন নিয়ে মোলামুলি করে না তো? ও দুদিকে মাথা নেড়ে বলল, নাহ একদম না। বরং মাসের শুরুতেই বেতন ক্লিয়ার। জরুরি দরকারে চাইলে আগেও পাবি। আমি ধন্ধে পড়ে গেলাম। ও আমাকে উল্টাপাল্টা অনেক কিছু বোঝাল। শেষে চোখ টিপে বলল, হেভি নাস্তা দেয়। যাই হোক, ওর কথায় পটে গিয়ে আমি টিউশনিটা নিয়ে নিলাম।

ছাত্রীর মা অমায়িক মানুষ। প্রথম দিনেই উনার ভক্ত হয়ে গেলাম। স্টুডেন্টের সঙ্গে কথা বলেও মনে হলো যথেষ্ট আদব-কায়দা জানে। প্রথম দুই দিন পড়ালাম কোনো ঝামেলা নেই। তৃতীয় দিন পানি খেতে চাইলাম। আন্টি জিজ্ঞেস করলেন, বাবা, আধ গ্লাস না একগ্লাস? আমি এমন প্রশ্ন কখনো শুনিনি। থিঙ্ক পজিটিভ। উনি বোধহয় খুবই মিতব্যয়ী। সেদিন নাস্তা-টাস্তা কিছু দিলেন না। আমি কিছুটা হতাশ। প্রথম দিকেই মানুষ বরং নাস্তা পানি দেয়। পুরনো হয়ে গেলে না হয় আপ্যায়ন কমে যায়। যা  হোক ছাত্রী ভালো, পড়িয়ে আরাম পাচ্ছি। চতুর্থ দিন আমার কাক্সিক্ষত নাস্তা এলো। আন্টি একবার এসে জিজ্ঞেস করলেন, বাবা কলা খাও তো? আমি ভদ্রভাবে উত্তর দিলাম, জি আন্টি খাই, তবে কোনো ঝামেলা করতে হবে না। আন্টি সুন্দর করে হেসে বললেন, ঝামেলা আর কী? বসো, আমি আসছি। আন্টি ঘরের ভিতরে গেলেন। আমি কলার পটাশিয়াম আর ক্যালরির হিসেব করছি। খিদেটাও মন্দ লাগেনি। কিছুক্ষণের মধ্যে আন্টি ছোট একটা ট্রে হাতে ঢুকলেন। ওতে পিরিচে দুটো বড় সাইজের কলা, দুটো বিস্কুট আর আধা গ্লাস পানি। কলার রং কুচকুচে কালো আর কেমন ভেজা ভেজা দেখতে। ওই কলা দেখে খিদে পারলে ছয় তলা দালানের ছাদ থেকে লাফ দেয়। আন্টি নাস্তা নিয়ে বসে রইলেন। খুব সুন্দর করে হেসে বললেন, খাও বাবা। ভাবগতিক দেখে মনে হলো আমি না খাওয়া পর্যন্ত তিনি উঠবেন না।

আমাকে কলা এবং বিস্কুট দুটোই খেতে হলো। কলাগুলো বেশি পেকে গিয়ে কিছুটা ঝাঝালো স্বাদের হয়ে গিয়েছিল। বিস্কুটগুলোর কথা আর কি বলব। একেবারে বারোটা বেজে তেরোটা বেজে গিয়েছিল বলা চলে। বেতনের লোভে এক মাস পড়িয়েছি। এই এক মাসে আমাকে অনেক কিছু খেতে হয়েছে। কয়েকদিনের পুরোনো সিদ্ধ ডিম, নেতিয়ে যাওয়া ফুচকা, আন্টির রান্না করা এক্সপেরিমেন্টাল আইটেম, লাউয়ের জুস, শসার আইসক্রিম, কংক্রিটের মতো শক্ত তিলের নাড়–। ওই নাড়– খেয়ে চার দিন দাঁতের ব্যথায় কিছু মুখে দিতে পারিনি। এক দিন দিলেন মাংস ছাড়া তেহারি। ওই দিন আমার প্রায় চোখে পানি চলে এসেছিল। কী হতো এক পিস মাংস দিলে? আরেক দিন দিলেন ধুন্ধুলের ভর্তা দিয়ে পান্তাভাত। উনি রীতিমতো ছাই চেপে ধরেন। রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই। সেই দিনই ভাবছিলাম আর না। কিন্তু বেতনের কথা ভেবে আরও কয়েকটা দিন এই ভালোবাসার অত্যাচার সহ্য করে গেছি। এর পর মাস শেষ না হতেই আমি আমার আরেক বন্ধুকে ধরলাম। ঠিক একইভাবে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে টিউশনিটা গছিয়ে দিলাম। এক সপ্তাহ হলো বন্ধুটির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ। বন্ধুটি কেমন আছে, খুব জানতে ইচ্ছে করছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর