সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফেসবুকবিহীন ১ দিন

আফরীন সুমু

ফেসবুকবিহীন ১ দিন

রাতুল ঠিক করল কাল থেকে আর ফেসবুক ব্যবহার করবে না। জীবনের জন্য এরকম একটি সিদ্ধান্ত নিতে পেরে সে ভীষণ খুশি।  যেহেতু কাল থেকে শুরু হচ্ছে সেহেতু আজ একটি বিদায়ী স্ট্যাটাস দেওয়া প্রয়োজন। স্ট্যাটাসটির ভাষা হতে হবে অনবদ্য, প্রাঞ্জল, সর্বোপরি হৃদয়ছোঁয়া। রাতুল একজন এলেবেলে ফেসবুকার। তার ওপর বাংলায় কাঁচা। কাজেই এমন একটা স্ট্যাটাস একা দেওয়া তার পক্ষে অসম্ভব। পরিচিত একজন বড় আপু আছেন। সম্প্রতি লেখালেখিতে নাম করেছেন। ওনার স্ট্যাটাসে হাজার হাজার লাইক পড়ে। রাতুল বহু কষ্টে একশ টাকা ফ্লেক্সিলোডের বিনিময়ে তাকে পোস্টটা লিখে দিতে রাজি করাল।

দুপুরের পর পর রাতুল পোস্ট করল সেই অনবদ্য স্ট্যাটাসটি। পড়তে পড়তে তার নিজের  চোখেই পানি এসে যাচ্ছিল! পোস্ট করে রাতুল ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম থেকে উঠে তার হার্টবিট বন্ধ হওয়ার দশা। নয়শ বিশটা লাইক, দুইশ কমেন্ট, একশ আটাত্তর শেয়ার। সাড়ে তিন হাজার ফ্রেন্ড থেকেও তার যেখানে বিয়াল্লিশটার  বেশি লাইক পড়ত না সেখানে নয়শ বিশটা লাইক! ভাবা যায়? বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাতুল ফেসবুক খুলে তাকিয়ে রইল। লাইক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। কমেন্ট উঠে গেছে তিনশর ওপরে। দেখতে দেখতে বারোটা বেজে  গেল। এবার বিদায়ের পালা। এরকম সরব একটা আইডি ডিলেট করতে মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না। তবু পণ তো পণই। পণ যেহেতু করা হয়ে গেছে সেহেতু রাখতেই হবে। রাতুল অশ্রুসিক্ত নয়নে আইডিটা ডিলেট করে ফেলল। আইডির দুঃখে সারারাত ঘুম হলো না। চোখে ভাসে হাজারের বেশি লাইক, শতিনেক কমেন্ট, শখানেক শেয়ার। দুঃখ পেতে পেতে রাতুল ঘুমিয়ে পড়ল।

ঘুম থেকে উঠে স্বভাবতই হাত চলে গেল  মোবাইলে। ফেসবুকে ঢুকতে গিয়ে মনে হলো- হায়! আইডি তো নেই। নাহ, এভাবে ভাবা যাবে না। ফেসবুক ছাড়াই জীবন ভাবতে হবে। রাতুল ভাবল হাতে যেহেতু কাজ নেই, সকাল সকাল ঘুম ভেঙেছে তাহলে একটু মর্নিংওয়াক করা যাক। মর্নিংওয়াকের জন্য রেডি হয়ে সে কয়েকটা সেলফি তুলল। সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো আহা কি সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। আইডিটা থাকলে ছবিগুলো আপলোড করা যেত। মর্নিংওয়াক করতে করতে রাতুল ঘেমে নেয়ে উঠল। ঘর্মাক্ত অবস্থায় নিজেকে কেমন লাগছে দেখতে আরও কিছু সেলফি তুলল। খুব আফসোস হচ্ছে। এই ছবিগুলো টাইমলাইনে গেলে কোনো না কোনো মেয়ের নিশ্চয়ই ভালো লাগত। নাহ, এভাবে ভাবা যাবে না। ফেসবুক ছাড়া চলতে হবে। মর্নিংওয়াক সেরে নাস্তা করে সে গেল ক্লাসে। সেখানে গিয়ে আরও বিপদ। ফাইনাল নোটটা গ্রুপে দিয়েছে, পরীক্ষার রুটিন গ্রুপে দিয়েছে, ম্যাথের সলিউশনগুলো মারিয়া সলভ করে ওর ওয়ালে দিয়েছে। আইডি না থাকায় এসব লেখা ওকে হাতে লিখে নিতে হলো। এত লেখা বোধহয় চার ঘণ্টার পরীক্ষায়ও লিখতে হয় না।

বাসায় ফিরে মেজাজ আরও বিগড়ে গেল। বাবার দুই বন্ধু ছেলে, মেয়ে, বউ-বাচ্চাসহ হাজির। কোথায় আজকের এই শোকের দিনটা একটু নিরিবিলি কাটাবে, তা না। বাড়িভর্তি মানুষজন। রাতুল হাতমুখ ধুয়ে রেডি হয়ে  দেখল দুই সুন্দরী তরুণী তার টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কি নিয়ে যেন হাসাহাসি করছে। এতক্ষণ মেহমান দেখে যা বিরক্তি লাগছিল তরুণীদ্বয়কে দেখে তা কর্পূরের মতো উবে গেল। রাতুলকে বের হতে দেখে ওরা একযোগে  হেসে দিল। ব্যাপার কি? সেকি জামা-প্যান্ট উল্টো পরেছে? রাতুলকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওরা চলে গেল। বিকালে ওদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ওরা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। রাতুলের দুই ব্যাচ জুনিয়র। কথার একপর্যায়ে ছোট মেয়েটি বলল, ভাইয়া, আমরা চলুন ফেসবুকে এড হই। রাতুলের মনে হলো ধড়াম করে কেউ তার মাথায় কিছু ফেলল। নিজের ওপর রাগে-ক্ষোভে চোখে পানি চলে এলো। কোনোরকমে সামলে নিয়ে বলল, আসলে আইডিটাতে একটু ঝামেলা হয়েছে। ঝামেলাটা ঠিক হয়ে গেলে আমি নিজে তোমাদের এড করে নেব। ওরা রাতুলের সঙ্গে সেলফি তুলল। এই ছবিগুলো আপলোড দিতে পারলে জীবনটা ধন্য হয়ে যেত। আফসোসে মরে যেতে ইচ্ছা করছে। সন্ধ্যায় মেহমান বিদায় নিতেই সে কম্পিউটার নিয়ে বসল। অসম্ভব, ফেসবুক ছাড়া থাকা অসম্ভব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর