সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

টাকার খেলা

ইকবাল খন্দকার

টাকার খেলা

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর

আমি নতুন একটা ব্যবসা খোলার চিন্তা-ভাবনা করছি। আমি বললাম, কিসের ব্যবসা বল তো! ছোটভাই বলল, বস্তার ব্যবসা। আমি বললাম, একটা বস্তার দাম পাঁচ টাকা বা ১০ টাকা। এ ব্যবসা করে পোষাবে? ছোটভাই বলল, জি না...

 

আমার এক বড়ভাইকে বললাম, পত্রপত্রিকা তো কিছু পড়েন না। আবার যতদূর জানি টিভি নষ্ট। যে কারণে দেশের খবর রাখেন না। যদি রাখতেন, তাহলে জানতেন কীভাবে দেশে টাকার খেলা চলছে। বড়ভাই বললেন, টাকার খেলার খবর রাখার জন্য পত্রপত্রিকাও পড়তে হয় না, টিভিও দেখতে হয় না। আমি এমনিতেই জানি দেশে টাকার খেলা চলে। শুধু আমি কেন, সবাই জানে। আমি বললাম, টাকার খেলার বিষয়টা সম্প্রতি ফাঁস হলো। অথচ আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনি আগে থেকেই এটা জানেন। আবার বলছেন সবাই নাকি জানে। বুঝলাম না বিষয়টা। বড়ভাই বললেন, এত সহজ বিষয়ও যদি না বুঝিস, তাহলে কীভাবে হবে। আরে বাপুরে, জগতে যত খেলা আছে, সবই তো টাকার খেলা। কেন, ক্রিকেট যারা খেলে, তারা কি টাকা পায় না? ফুটবল খেললে কি টাকা পায় না? এমনকি হাডুডু খেলেও টাকা পায়। তার মানে ক্রিকেট, ফুটবল, হাডুডু সবই টাকার খেলা? তবে কুতকুত খেললে যেহেতু টাকা পাওয়া যায় না, তাই কুতকুতকে টাকার খেলা বলা ঠিক হবে না। আমি ভাইকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম-  দেখেন, এই টাকার খেলা আর ওইসব টাকার খেলা এক নয়। ওইসব টাকার খেলার সঙ্গে ক্যাসিনো জড়িত। বড়ভাইয়ের মুখ এবার চিকচিক করে উঠল। আর এ চিকচিকানো মুখেই তিনি বললেন, খুব ভালো একটা স্মৃতি মনে করেছিস। ক্যাসিও। আহা! আমার ক্যাসিও ঘড়িটার কথা এখনো মনে পড়ে। সাবেক প্রেমিকা দিয়েছিল তো! আর ক্যাসিও ঘড়ির... আমি ভাইকে থামালাম। বললাম, আমি ক্যাসিও ঘড়ির কথা বলিনি। বলেছি ক্যাসিনোর কথা। ক্যাসিনো কী জিনিস, জানেন আপনি? বড়ভাই এমন একটা ভাব করলেন, যেন অনেক দিন ধরে তিনি যক্ষ্মা রোগের জীবাণু বহন করে চলেছেন। তার মানে কাশতে থাকলেন। আর কাশতে কাশতেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেন। শুধু আমার এই বড়ভাই নন, ক্যাসিনো কী জিনিস, সেটা আশপাশের অনেকেই জানতেন না। তবে এখন জানতে শুরু করেছেন। আবার সবাই যে খুব সঠিকটা জানছেন তাও নয়। কিঞ্চিৎ ভুলভাল জানার একটা ব্যাপার তো থেকে যাচ্ছেই। যেমন আমার এক প্রতিবেশী গতকাল কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলেন, আমার একটা লিস্ট দরকার ছিল। কিসের লিস্ট জানেন? ঢাকা শহরের কোন কোন এলাকায় ক্যাসিনো আছে, তার একটা লিস্ট। আমি বললাম, কেন? প্রতিবেশী বললেন, অনেক দিন ধরেই হাতটা খালি তো! ভাবলাম যেসব এলাকায় ক্যাসিনো আছে, সেসব এলাকায় গিয়ে একটু ঘোরাফেরা করি। যেহেতু ক্যাসিনোতে টাকা ওড়ে, অতএব ওই এলাকায় গিয়ে ঘোরাফেরা করলে ক্যাসিনোর জানালা দিয়ে বের হয়ে দু-একটা নোট আমার কাছে চলে আসতেই পারে। এবার পাশ থেকে কথা বলে উঠলেন আরেক প্রতিবেশী, এরকম চিন্তা কইরা লাভ নাইরে ভাই। ক্যাসিনোর জানালা দিয়ে টাকা বের হয়ে আপনার কাছে আসবে, এ আশায় গুড়েবালি। কারণ, কোনো ক্যাসিনোরই জানালা খোলা থাকে না। এসি চলে তো! জানালা খোলা রাখলে ঠা-া বাতাস বের হয়ে যাবে না? আমার এক ছোটভাই বলল, যারা ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত, শুনলাম তাদের অনেকের কাছেই নাকি টাকার বস্তা পাওয়া যাচ্ছে। তার মানে এখনো যারা ধরা পড়েনি, তাদের কাছেও একই পরিমাণ টাকা আছে এবং সেই টাকা তারা কী করবে, এ নিয়ে ঝামেলার মধ্যে আছে। তাদের ঝামেলার কথা বিবেচনা করে আমি নতুন একটা ব্যবসা খোলার চিন্তা-ভাবনা করছি। আমি বললাম, কিসের ব্যবসা বল তো! ছোটভাই বলল, বস্তার ব্যবসা। আমি বললাম, একটা বস্তার দাম পাঁচ টাকা বা ১০ টাকা। এ ব্যবসা করে পোষাবে? ছোটভাই বলল, জি না, পাঁচ-দশ টাকার চিন্তা বাদ দেন। যেই বস্তার ভিতরে কোটি কোটি টাকা থাকবে, সেই বস্তার দাম কম করে হলেও এক হাজার টাকা রাখতে হবে। কেউ যদি পাঁচ টাকা ১০ টাকা কম দিতে চায়, সেটা ভিন্ন কথা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর