সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

টিউশনির বারোটা বাজল যেভাবে

রাফিউজ্জামান সিফাত

টিউশনির বারোটা বাজল যেভাবে

প্লেটে দুই টুকরো ডিমের পুডিং কমনীয় ভঙ্গিতে গা এলিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে গৃহশিক্ষক মাখনের  পেটের ক্ষুধার ঘণ্টা ঢং ঢং করে বাজাতে শুরু করল। সেই কোন দুপুরে তাকে মেসে বুয়ার রান্না করা অখাদ্য খেতে হয়েছিল। এখন বিকাল। তার ক্লাস টুয়ের ছাত্র বল্টুকে সে পড়ানোর উছিলায় নাস্তা  খেতে এসেছে। বল্টুর মা খুব ভালো। মজাদার সব নাস্তা বানিয়ে তিনি মাখনকে খেতে দেন। যেমন আজ দিয়েছেন ডিমের পুডিং। দেখেই মাখনের জিভে পানি চলে আসছে। চটজলদি সে অঙ্ক বই থেকে কয়েকটা অঙ্ক দাগিয়ে বল্টুকে কষতে দিয়ে প্লেটখানা নিজের কাছে টেনে নিল। পুডিংয়ে তৃপ্তি সহকারে একটা মোলায়েম কামড় দিয়েই মাখন চোখ বুজে ফেলল। আহা! মুখের ভিতর পুডিংখানা যেন একেবারে গলে মোম। মাখন যখন তিলে তিলে স্বাদ আহরণ করছিল ঠিক তখন বল্টু প্রবল উৎসাহ নিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা স্যার, ক্যাসিনো কী? মাখনের ভ্র কুচকে উঠল। মনে মনে সে উত্তর খুঁজলেও নিজের চোখ কিন্তু খুলল না। এ অভূতপূর্ব পুডিংয়ের স্বাদের অভিজ্ঞতা মাখন নষ্ট করতে চায় না। বন্ধ চোখেই সে জবাব দিল, ক্যাসিনো এক ধরনের খেলা। এসব খেলা অনুচিত। উত্তর শুনে বল্টু বলল, কেমন খেলা স্যার? ক্রিকেট নাকি ফুটবলের মতো? খাবারের মাঝে এসব প্রশ্নে মাখন বিরক্ত হলেও সেটা মুখে প্রকাশ করল না। সে বলল, সাপ-লুডু খেলার মতো একটা খেলা। বল্টু সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণার স্বরে বলল, আমাদের বাসায় একটা লুডু বোর্ড আছে স্যার, আমি ক্যাসিনো খেলব। মাখনের পিলে চমকে গেল। বলে কী! এবার সে চোখ খুলতে বাধ্য হলো। আংশিক গাঢ় গলায় সে বলতে চেষ্টা করল, তাড়াতাড়ি অঙ্কগুলো শেষ করো। বল্টু দুপাশে মাথা নেড়ে বুকে হাত গুটিয়ে বলল, আগে খেলব, তারপর অঙ্ক করব। ধারণা করা হয় ৯৫.৯৮ শতাংশ গৃহশিক্ষক নিরীহ কিসিমের হয়। বেতন ও নাস্তার জন্য তারা ছাত্রছাত্রীদের সব দাবি-দাওয়া মেনে নিতে বাধ্য থাকে। মাখন হার মেনেছিল কিনা- কে জানে?

পর দিন পড়াতে এসে বল্টুকে ডাক দিয়ে মাখন  চেয়ার টেনে আরাম করে বসল। তার মুখে যেন এখনো গতকালের ডিমের পুডিংয়ের স্বাদ লেগে আছে। মনে আশা আজও তাকে নাস্তায় পুডিং দেওয়া হবে। হয়তো ফ্রিজে রেখে দিয়েছে। ঠান্ডা পুডিং খেতে নিশ্চয়ই আরও মজা হবে! ভাবতেই মাখনের জিভে আবারও পানি এসে গেল। এমন সময় তার সামনে বল্টুর বদলে উপস্থিত হলো বল্টুর মা। হাসিখুশি ভদ্রমহিলার মুখ আজ ভীষণ থমথমে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি ভয়ানক রেগে আছেন- যেন এখনই সুনামি হবে। বজ্রকণ্ঠে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, গতকাল বল্টুকে তুমি কী শিখিয়েছ? মাখনের গতকালকের কথা বলতে কেবল পুডিংয়ের কথাই মনে আছে। খেতে খেতেই সে গুটিকয়েক অঙ্ক করতে দিয়েছিল, একটা বাংলা কবিতা পড়িয়েছে আর কয়েকটা ইংরেজি বাক্য অনুবাদ, এই তো! মাখন চুপ করে আছে দেখে বল্টুর মা বললেন, আজ বল্টু স্কুলে ‘এইম ইন লাইফ’ রচনায় লিখেছে বড় হয়ে সে ক্যাসিনো প্লে­য়ার হতে চায়! মাখন কী বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।

সর্বশেষ খবর