সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাজার বিড়ম্বনা

আফরীন সুমু

বাজার বিড়ম্বনা

সদ্যবিবাহিত রবি বর্তমানে বাজার নিয়ে ভীষণ সমস্যায় আছে। প্রতিদিনই বাজার নিয়ে বউয়ের সঙ্গে গ্যাঞ্জাম লেগেই থাকে। আজ আলু পচা পড়েছে, কাল পটোল ছোট হয়েছে, পিয়াজ বিদেশিটা চলবে না, রসুন আনতে হবে বড় কোষ দেখে- ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ক্যাচাল আর কত সহ্য করা যায়। রবি ঠিক করল এবার থেকে বাজারের দায়িত্ব বউয়ের হাতে তুলে দিয়ে যন্ত্রণামুক্ত হবে। যেমন বলা তেমন কাজ। বউকে এ কথা জানাতেই সে খুশিতে বাকবাকুম। মাসের বাজারের টাকাটা হাতে দিয়ে রবি অফিসের দিকে রওনা দিল। সন্ধ্যায় এসে দেখল বউ বাজার করে ঘর ভরে ফেলেছে। রবি জিজ্ঞেস করল, মাছ কত দিয়ে কিনেছ? বউ বলল, ৩৪০। জানো ওই লোক ২৫০ করে কেজি চেয়েছে, আমি ১৭০ করে এনেছি। রবি বলল, এই মাছ তো ১৪০ করে কেজি। তোমার কাছ থেকে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা করে মোট ৬০ টাকা বেশি নিয়েছে। বউ অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ফাঁপড়বাজি করবে না খবরদার! আমি কিনে এনেছি বলে এখন তুমি দাম কমিয়ে বলছ। আমি কিছু বুঝি না ভেবেছ? আচ্ছা মাছ প্রসঙ্গ থাক এবার বল সবজি কোনটা কত নিয়েছে। বউ একটা একটা করে দাম বলল। রবি হিসেব করে দেখল এভাবে বাজার করা চলতে থাকলে মাস শেষে তাকে বাসন-কোসন নিয়ে পথে বসতে হবে। রবি পরের দিন বউকে সঙ্গে করে বাজারে গেল। রবি বউকে মাছের দাম শোনাল। তারা আজ কিনতে আসেনি এসেছে দাম শুনতে। কিন্তু যেই না মাছওয়ালা তেল মারা হাসি দিয়ে বলল, ম্যাডাম নিয়া যান, ভালো হইব। শুধু আপনেরে আমি বাইছা বাইছা ভালো মাছগুলান দিতাছি। অমনি বউয়ের মন মোমের মতো গলে গেল। রবিকে ততক্ষণাৎ রাজি করিয়ে মাছ নিয়ে নিল। রবি দেখল, এ তো মহাবিপদ। দাম দেখাতে এনে সব জিনিস ডাবল কিনতে হবে। তবে বউ এটা স্বীকার করেছে যে মাছওয়ালা আগের দিন সত্যিই তার কাছ থেকে দাম বেশি রেখেছে। কয়েক দিন পর বাজার ফুরাতেই বউ বাজারে যাওয়ার জন্য রেডি। রবি ভয়ে আছে। আজ আবার কী করে বসে কে জানে। বউ জানাল, এবার সে সব দোকান দেখে যাচাই করে ঠিক দামে জিনিস কিনবে। বউ গেল বাজারে। রবি এসে দেখল বাজার ঠিকমতোই করা হয়েছে। রবির খটকা লাগল এ তো হওয়ার কথা নয় গ-গোল তো কিছু একটা থাকবেই। গন্ড গোলটা বের হলো কিছুক্ষণ পর। সব হিসাব করে দেখা গেল দোকানদার ৮০ টাকা বেশি রেখে দিয়েছে। বউ তখনি আঁচল কোমড়ে গুঁজে ছুটল। বেচারা সবজিওয়ালার জন্য রবির মায়া হতে লাগল। কিছুক্ষণ পর বউ বিজয়ী বাঘিনীর মতো ঘরে প্রবেশ করল। তারপরের দিন ওজন মাপার মেশিনে মেপে দেখা গেল মাছওয়ালা ওজনে কম দিয়েছে ১০০ গ্রাম। এর পরের দিন উপর থেকে ভালোটা দেখিয়ে ভিতর থেকে পচা শাক দিয়েছে। এভাবে কিছু দিন চলার পর বউয়ের বোধদয় হলো- বাজার করার কাজটা অন্তত তার দ্বারা সম্ভব নয়। কিন্তু  সে ভাঙবে তবু মচকাবে না। একদিন রবি অফিস থেকে ফেরার পর বউ জানাল, এসব মাছওয়ালা তরকারি ওয়ালাদের সঙ্গে গ্যাঞ্জাম করা তার জন্য প্রেস্টিজিয়াস ইস্যু। তাই বাজারটা রবিকেই করতে হবে। এই তো সুযোগ। রবি বেঁকে বসল, না না সে আর হবে না। তুমি অসাধারণ বাজার কর। ওটা তোমারই করা উচিত। বউ মুখ বাঁকিয়ে বলল, তা অবশ্য ঠিক বলেছ। কিন্তু তোমার চর্চায় রাখা উচিত। রবি বলল, আমি বাজার করলে সে তো তোমার পছন্দ হবে না। যদি তুমি সিকিউরিটি দাও যে এ নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করবে না তবে আমি করব নয় তো না। বউ গম্ভীর গলায় বলল, আচ্ছা সে আমি ভেবে দেখব। রবি হাফ ছেড়ে বাঁচল। পর দিন অফিস থেকে ফেরার পথে যথাসম্ভব দেখে-শুনে বাজার করে নিয়ে এলো। কিছুক্ষণ পরই রান্নাঘর থেকে     বউয়ের চিৎকার কি ধুন্ধল এনেছ এগুলো। এই ধুন্ধল দিয়ে ঝামা বানিয়ে তোমার পিঠে ঘষব আজ। রবির বুক চিরে বেরিয়ে এলো এক গভীর দীর্ঘশ্বাস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর