সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

একটি সাময়িক দীর্ঘমেয়াদি অসুবিধা

ইকবাল খন্দকার

একটি সাময়িক দীর্ঘমেয়াদি অসুবিধা

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর

আমার দোকানের সামনেই মানুষ রিকশা উল্টিয়ে পড়ে আর অন্যেরা সেলফি তোলে, এতে হয় কী, সেলফির মধ্যে আমার দোকানটাও ঢুকে যায়। আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আমার দোকানটা এলাকার সবচেয়ে আলোচিত দোকান হয়ে গেছে

আমার এক ছোটভাই বলল, একটা বিষয় খেয়াল করলাম ভাই। সিটি করপোরেশনের লোকজনের মনে প্রচুর দুঃখ।  সেই হিসেবে তারা অত্যন্ত দুঃখী মানুষ। আমাদের উচিত এসব দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমি বললাম, তোর কথার আগামাথা কিন্তু কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। একটু বুঝিয়ে বল। আশা করা যায় বহুত ফায়দা হবে। ছোটভাই আমাকে বোঝানো শুরু করল, আপনি যদি ঢাকা শহরে বের হন, তাহলে দেখবেন অসংখ্য জায়গায় লেখা ‘রাস্তা মেরামতের কাজ চলিতেছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত’। এই যে এত এত জায়গায় তারা দুঃখ প্রকাশ করল, এতে কি প্রমাণ হয় না তাদের মনে প্রচুর দুঃখ? আর তারা দুঃখী মানুষ? আমি মাঝারি সাইজের একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, নারে পাগলা, দুঃখী মানুষ তারা নয়। বরং দুঃখী মানুষ আমরা। কেন জানিস? কারণ, তারা ‘সাময়িক’ অসুবিধার কথা বললেও অসুবিধাটা আসলে সাময়িক নয়। কারণ, এই একই সাইনবোর্ড ঝুলতে থাকে মাসের পর মাস। বলতে হবে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। আর আমরা যারা এই দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার মধ্যেই আছি, তারা দুঃখী না তো কী? আমাদের তো উচিত মনের দুঃখে বনে চলে যাওয়া। অবশ্য জানি না বনেও বাঘ-ভাল্লুকের পক্ষ থেকে সাময়িক অসুবিধা টাইপের কোনো সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে কিনা। এই যেমন, বাঘ মহোদয় ঘুমাচ্ছেন। উনার নাকডাকানি সংক্রান্ত অসুবিধার জন্য দুঃখিত। কিছু দিন আগে একটা সাইনবোর্ড আমাদের চোখে পড়েছিল। সেটা হচ্ছে, পানির নিচে রাস্তা ভালো। সাইনবোর্ডটা নিয়ে তখন সবাই হাসিঠাট্টা করলেও এখন মনে হচ্ছে অকারণেই হাসি-ঠাট্টা করা হয়েছিল। কারণ, এখনকার অবস্থা আরও খারাপ। এখন রাস্তায় কোথাও পানি জমে থাকলে এই নিশ্চয়তা থাকে না, পানির নিচে ম্যানহোল আছে নাকি আন্ধা কুয়া আছে। এ বিষয়ে আমার এক বড়ভাই বলেন, এই যে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, এই যে ভাঙচুর, এই যে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা, এ সমস্যা থেকে ঢাকাবাসীর কোনো রক্ষা নেই। যেহেতু সমস্যাগুলো দীর্ঘমেয়াদি, অতএব আজীবন এ সমস্যা ভোগ করতে হবে। এবার পাশ থেকে একজন বলে উঠল, সমস্যাকে সমস্যা ভাবলেই সমস্যা। বরং অন্যভাবে চিন্তা করা ভালো। যেমন আমার দোকানের কাছের রাস্তাটায় খানাখন্দ। দুই দিন পর পরই কেউ না কেউ রিকশা উল্টিয়ে পড়ে। আর আপনি তো জানেনই, আজকাল কেউ পড়লে তাকে ধরে তোলার লোক পাওয়া যায় না। তবে সেলফি তোলার লোক পাওয়া যায় প্রচুর। তো যেহেতু আমার দোকানের সামনেই মানুষ রিকশা উল্টিয়ে পড়ে আর অন্যেরা সেলফি তোলে, এতে হয় কী, সেলফির মধ্যে আমার দোকানটাও ঢুকে যায়। আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আমার দোকানটা এলাকার সবচেয়ে আলোচিত দোকান হয়ে গেছে। আসলে ওইসব সেলফির কোনো কোনোটা ভাইরাল হয়েছিল তো? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, রাস্তাঘাটের দীর্ঘমেয়াদি যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধানের কোনো পথ কি আমরা খুঁজতে পারি না? এবার আরেক প্রতিবেশী বলে উঠল, কী পথ খুঁজবেন? খুঁজে খুঁজে যে পথটা বের করবেন, সেই পথেও দেখবেন সাইনবোর্ড ঝোলানো। আর সেই সাইনবোর্ডে দেখবেন লেখা আছে- ‘সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত নহি। ইতিপূর্বে দুঃখিত দুঃখিত বলেছি। আর না।’ দুঃখের কথা শেষ করার আগে একটা সুখের কথা বলা যাক। আমার এক বড় ভাই কথায় কথায় সরি বলতেন। একবার রাস্তায় সাইনবোর্ডের এই সাময়িক অসুবিধার কথা তাকে বলতেই বললেন, ওহ সরি! আমি বললাম, আপনার এই সরি কি সাময়িক না দীর্ঘমেয়াদি? তিনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন, মানে? বললাম, আপনি কি সাময়িক সরি না দীর্ঘমেয়াদে সরি? বড় ভাই বিরক্ত হয়ে বললেন, যা, আর সরিই বলব না। মনে মনে বললাম, যাক, বাঁচা গেল!

সর্বশেষ খবর