সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

যত্রতত্র প্রেমপত্র

রাফিউজ্জামান সিফাত

যত্রতত্র প্রেমপত্র

প্রেমপত্র লেখা বিষয়ে রাসেল ভাইয়ের সমতুল্য অত্র এলাকায় আর কেউ নেই। প্রেমিকাদের মন জয় করতে তার প্রেমপত্র এক অব্যর্থ নিশানা। যে প্রেমিক একবার রাসেল ভাইয়ের প্রেমপত্র জোগাড় করে  প্রেমিকার হাতে পৌঁছে দিতে পেরেছে, নিশ্চিতভাবেই ধরে নেওয়া যায় সেই প্রেমযাত্রা সফল।

প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত রাসেল ভাই প্রেমপত্র লেখেন। বর্তমান বাজারমূল্যের তুলনায় তার সম্মানী অতি সামান্য। প্রতি প্রেমপত্র তিনি ১০০ টাকা করে নেন। যেখানে প্রেমিকার মন পেতে প্রেমিক কিডনি পর্যন্ত বন্ধক রাখতে রাজি, সেখানে এ সম্মানী একেবারেই নগণ্য। ‘আগে দাঁড়াইলে আগে পাইবেন’ ভিত্তিতে তিনি প্রেমপত্র লিখে থাকেন। তাই সূর্যোদয়ের আগ থেকেই তার বাড়ির সামনে সিরিয়াল লেগে যায়। রাসেল ভাইয়ের পত্র লেখা বিষয়ক জনপ্রিয়তাকে কেন্দ্র করে আশপাশে গড়ে উঠেছে বাণিজ্যপাড়া। সিরিয়ালে অপেক্ষারত প্রেমিকদের জন্য চা-পান, খাতা-কলম, মোবাইল ফ্ল্যাক্সিলোডের দোকানপাট টপাটপ দাঁড়িয়ে গেছে।

সেই রাসেল ভাইয়ের কাছে হঠাৎ এক যুবক এসে হাজির। সে দীর্ঘদিন ধরে এক রমণীর সঙ্গে প্রেম করছে। বলা যায় উথাল-পাথাল প্রেম। কিন্তু আচমকা সেই রমণী তার কাছে আবদার করেছে, যেভাবেই হোক তাকে রাসেল ভাইয়ের একটা প্রেমপত্র জোগাড় করে এনে দিতে হবে। তার বান্ধবীদের প্রেমিক সবাই রাসেল ভাইয়ের প্রেমপত্র এনে দিয়েছে, সে পাবে না, তা তো হয় না। আবদার শুনে যুবক তড়িঘড়ি করে বিশাল গাড়িবহরে তার দলবল নিয়ে রাসেল ভাইয়ের বাড়ি চলে এলো। গাড়ি থেকে নেমে যুবক অপেক্ষমাণ দীর্ঘ সিরিয়াল ডিঙিয়ে একেবারে প্রথমে চলে এলো। তারপর রাসেল ভাইয়ের সামনের চেয়ারে বসে পায়ের ওপর পা তুলে বলল, জলদি একটা জবরদস্ত  প্রেমপত্র লিখে দাও, টাকা-পয়সা নিয়ে চিন্তা নেই। যত চাও পাবা কিন্তু সেরা প্রেমপত্রটা আমার চাই।

রাসেল ভাই তখন গভীর মনোযোগে একজনের জন্য  প্রেমপত্র লিখে দিচ্ছিলেন। যুবকের কথায় তিনি কলম ছেড়ে ওপরে মুখ তুলে তাকিয়ে বললেন, অনুগ্রহপূর্বক আপনি সিরিয়ালের পেছনে গিয়ে দাঁড়ান, আপনার আগেও অনেকে বহুক্ষণ ধরে অপেক্ষায় আছে। ওদেরটা শেষ হোক, তারপর আপনারটা।

রাসেল ভাইয়ের কথা শুনে যুবক তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। সে কেন সিরিয়ালে দাঁড়াবে! আগুন চোখে তাকিয়ে সে বলল, ‘চিনস আমি কে? বেশি বাড়াবাড়ি করবি না। এক্ষনি আমারে প্রেমপত্র লিক্ষা দে।’ 

আমাদের রাসেল ভাই একটু ঘাড়ত্যাড়া স্বভাবের মানুষ। অনার্স-মাস্টার্সে দুর্দান্ত ভালো রেজাল্টের পরও চাকরির ইন্টারভিউ বোর্ডে কেবল তুমি সম্বোধনের কারণে তিনি আর চাকরিই করেননি। প্রবল আত্মসম্মান নিয়ে চলা সেই রাসেল ভাই সবাইকে অবাক করে যুবকের অপমান মুখবুজে সহ্য করে তাকে সুন্দর করে একটি প্রেমপত্র লিখে দিলেন। যুবক প্রেমপত্র হাতে নিয়ে বীরের বেশে ঘটঘট পায়ে  বেরিয়ে গেল।

কিছু দিন পর খবর এলো সেই যুবকের প্রেম ভেঙে  গেছে। লোকজন অবাক হয়ে রাসেল ভাইকে জিজ্ঞেস করল, আপনার প্রেমপত্র পেয়ে যেখানে সবার প্রেম শুরু হয় সেখানে ওই যুবকের প্রেমটাই ভেঙে গেল। ক্যামনে কী ভাই?’

রাসেল ভাই চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখবুজে উদাস কণ্ঠে বললেন, যে পত্র প্রেম ঘটাইতে পারে, ইচ্ছে করিলে তাহা প্রেমখানা ভাঙিতেও পারে।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর