সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

হিসেবি স্ত্রীর কান্ড

আফরীন সুমু

হিসেবি স্ত্রীর কান্ড

আমার বউ দারুণ হিসেবি। সব কিছু পইপই করে বুঝে নেয়। তাকে ঠকায় এমন কেউ এ দুনিয়ায় নেই। তার হিসাবের কিছু নমুনা দেওয়া যাক।

আমার ছেলেমেয়েদের স্কুলে আনা-নেওয়ার কাজটা সে-ই করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওদের যাওয়ার সময়টাও আমার সঙ্গে মেলে না। হিসাব অনুযায়ী আনা-নেওয়া বাবদ তেল খরচ বাদে আর কোনো খরচ থাকার কথা নয়। কিন্তু ওই যে বললাম, আমার বউ হিসেবি। তাই আনা-নেওয়া বাবদ তেলের টাকার তিনগুণ টাকা তাকে দিতে হয়। সে গুনে গুনে হিসাব করে নেয়। বিভিন্ন খাতে হিসাব করে সেগুলো খরচ হয়। খাতগুলো বর্ণনা করি। প্রথমত, আলাদা লিপস্টিক। সবসময় যে লিপস্টিকগুলো সে ব্যবহার করে সেগুলোতে নাকি হয় না। সকাল  বেলার জন্য আলাদা লিপস্টিক লাগে। সকাল বেলার কালারগুলো হবে হালকা। এতে করে নাকি একটা স্নিগ্ধ ভাব আসে। আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম লিপস্টিক ছাড়া তাকে অনেক বেশি স্নিগ্ধ লাগে। সে ক্রুদ্ধ ভঙ্গিতে বলল, আমি কিছু বুঝি না, না? সব পয়সা বাঁচানোর ধান্ধা।

দ্বিতীয়ত, পারফিউম। ছুতো ওই সকালবেলা। তখন নাকি লাইট পারফিউম লাগে। পারফিউম বিষয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলাম তার আগেই বউ বলল, পারফিউম নিয়ে কোনো কথা হবে না। তোমার মতো গায়ে ঘামের গন্ধ নিয়ে আমি চলতে পারব না।

মানসম্মান নিয়ে টানাটানি তাই আর কিছু বলার সাহস হলো না। এর পর টিফিন খরচ। বাচ্চাদের টিফিন খরচের কথা বলছি না। বাচ্চাদের স্কুলে ঢুকিয়ে দিয়ে স্কুল গেটে দাঁড়িয়ে বান্ধবীকুলের সঙ্গে গল্প করতে করতে তার খিদে পায়। সে সময় টিফিন লাগে, সেই টিফিনের খরচ। টিফিন, সেটাও কমদামি হলে চলবে না। স্ট্যাটাসের একটা ব্যাপার আছে না? মাঝে মাঝে আবার টিফিন পার্টিও হয়। পার্টিতে একেকজন একেক দিন খাওয়ায়। আমার অভিজ্ঞতা থেকে জানি যেদিন যে খাওয়ায়  সেদিন তার জামাই ধরা। এর পর আছে বাজারের হিসাব। আমার বউ সুপারশপে গিয়ে হিসাব করে প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় প্রচুর বাজার করে। কিছু দিন পর সেগুলো নষ্ট হলে আবার হিসাব করে ফেলে দেয়। শপিংয়ে গেলে  কেনাকাটার হিসাব করতে করতে তার মাথা গরম হয়ে যায়। গরম মাথা ঠান্ডা করার জন্য আবার জুস, লাচ্ছি খেতে হয়। তার টাকা-পয়সা চাওয়ার হিসাব শুনলে যে কেউ মুগ্ধ হবে।  যেমন এক দিন বউ এসে বলল, পাঁচ-সাত হাজার টাকা হবে? মুখ ফসকে যেহেতু  বেরিয়েছে সেহেতু হবে কি হবে না সেটা মুখ্য বিষয় নয়। সুতরাং কারণ শুনে সময় নষ্ট না করে হাজার পাঁচেক দিয়ে দিলাম। দুই-তিন দিন পর আবার এসে হাজির। হাজার পাঁচেক টাকা চাই। আমি অবাক হয়ে বললাম, সেদিন মাত্র দিলাম এর মধ্যে আবার? হিসাব করে বউ আমাকে বুঝিয়ে দিল, তোমার কাছে টাকা চাইলাম ১২ হাজার তুমি দিলে পাঁচ হাজার। আজ বাকি সাত হাজার দেবে। সেখানে আমি কমিয়ে পাঁচ হাজার চাইলাম। তাও তুমি গড়িমসি করছ? আমি আকাশ থেকে পড়লাম।  কখন তুমি ১২ হাজার চাইলে? তুমি এসে বললে পাঁচ-সাত হাজার টাকা লাগবে। পাঁচ হাজার দিয়ে দিলাম। এখন বড়জোর দুই হাজার চাইতে পার। এখানে ১২ হাজার কী করে এলো? বউ বলল, নোট দ্য পয়েন্ট। আমি বলেছি পাঁচ-সাত হাজার, মানে টোটাল ১২ হাজার। হিসাব পরিষ্কার। এবার দিয়ে দাও। আমি বউয়ের হিসাব শুনে কিছুক্ষণ হা করে থেকে টাকাগুলো দিয়ে দিলাম।

বউয়ের কথা তো বললাম। এবার আমার কথা বলি। বর্তমানে আমি একটি আলাদিনের চেরাগের খোঁজে আছি। কারণ বউয়ের এহেন হিসাবের ঠ্যালায় স্যালারির টাকা চিপসের প্যাকেটের মতো উড়ে যায়। ডিপোজিট খরচ হতে হতে তলানিতে ঠেকেছে। এভাবে চলতে থাকলে একটি মাত্র ফ্ল্যাট আর একমাত্র গাড়িটিও বেচে হাঁড়ি নিয়ে পথে বসতে হবে। সুতরাং আলাদিনের চেরাগ ছাড়া গতি নেই। কেউ যদি আলাদিনের চেরাগের খোঁজ পান তবে আমাকে জানালে উপকৃত হবো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর